ভর্তি পরীক্ষা এবং বিজ্ঞপ্তি ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি একটি চরম অনিয়ম এবং অমার্জনীয় বিষয়। ইতোমধ্যে বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন, খোদ ঢাবি’র শিক্ষকসহ দেশের সচেতন সমাজ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইতিহাস-ঐতিহ্যের সাথে দেশের জন্য গর্বের স্থানও। ভর্তি প্রক্রিয়া নিয়ে দেশের সে গৌরবের স্থানটিকে কলঙ্কিত করা যাবে না। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে যারা অভিযুক্ত, তাদের সুষ্ঠু তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত নিজ নিজ দায়িত্ব পালন থেকে বিরত থাকাও জরুরি।
জানা যায়, গত মার্চে ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের একটি বিভাগের সান্ধ্য প্রোগ্রামে ছাত্রলীগের ৩৪ জন সাবেক ও বর্তমান নেতাকে অবৈধভাবে ভর্তির সুযোগ দেয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান ‘চিরকুট’ লিখে এসব শিক্ষার্থীদের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিন ড. শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলামের কাছে পাঠান। পরে কোনো রকম ভর্তি পরীক্ষা ছাড়াই এসব শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পায়। এরপর ডাকসু ও হল সংসদের নির্বাচনে ৮ জন অংশ নিয়ে ৭ জন জয়ী হন এবং হল সংসদে দুইজন নির্বাচন করে একজন ভিপি পদে জয়ী হন। সাধারণ কোর্স হোক আর সান্ধ্যকালীন, সব জায়গাতেই সিটের অভাবে যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও অনেকেই পড়তে পারছেন না। অথচ একটি নির্দিষ্ট ছাত্রসংগঠনের ৩৪ জনকে চিরকুটের মাধ্যমে ভর্তির সুযোগ দেশের অন্য মেধাবীদের প্রতি অবিচার নয় কী?
কোনো ধরনের লিখিত পরীক্ষা ছাড়াই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের সন্ধ্যাকালীন কোর্সগুলোয় ভর্তির সুযোগ রয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেছেন অনুষদের ডিন শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম। তার ভাষ্য, এই সুযোগ পান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাস করা শিক্ষার্থীরা। তাদের কেবল মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়। এমনকি এই ভর্তির জন্য কোনো সার্কুলারেরও প্রয়োজন হয় না। তিনি আরো বলেন, অনুষদের ‘চেয়ারম্যানস কমিটিতে’ এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে কবে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেটি তিনি স্পষ্ট করে বলতে পারেননি, এমনকি সে নিয়মের লিখিত কোনো অনুলিপিও উপস্থাপন করেননি। কিন্তু কথা হলো, ভর্তির মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ে কোনো নতুন সিদ্ধান্ত নিতে হলে, তা অবশ্যই একাডেমিক কাউন্সিল এবং সিন্ডিকেটে অনুমোদিত হওয়া জরুরি নয় কী? রুবাইয়াতুল ইসলাম বলেন, ‘পলিটিক্যাল এফিলিয়েশনের সবাই বিভিন্ন সময়ে আমাদের এখানে আসে, অনুরোধ করে। এটা নতুন কিছু না। অনেক দিন থেকেই একজন, দুজন, পাঁচজন আমাদের এখানে ইভিনিংয়ে পড়ার সুযোগ নেয়।’ দায়ীত্বশীলদের এ ধরনের গা-ছাড়া কথা শোভনীয় কী?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিষয়ে অনেক প্রশ্ন থাকলেও ভর্তিপ্রক্রিয়া এযাবত অনেকটাই প্রতিযোগিতামূলক এবং বিতর্কের ঊর্ধ্বে ছিলো। ঢাবির মতো একটি ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেনতেনভাবে ছাত্র ভর্তি কোনোভাবেই মেনে নেয়ার মতো না। বিষয়টি গুরুত্বের সাথে তদন্ত হওয়া জরুরি।