বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের সড়ক নির্মাণ ব্যয় অনেক বেশি। বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় দেশে চার লেনের সড়কগুলো নির্মাণে ব্যয় ১৯ লাখ থেকে ৭০ লাখ ডলার পর্যন্ত। অন্যদিকে প্রতিবেশি দেশগুলোর মধ্যে ভারতে এই ব্যয় ১১ লাখ থেকে ১৩ লাখ ও চীনে ১৩ লাখ থেকে ১৬ লাখ ডলার। সে হিসেবে বাংলাদেশে রাস্তা তৈরিতে নয় থেকে দশ গুণ বেশি খরচ করা হয়। সড়ক নির্মাণে অতিরিক্ত এই ব্যয়ের পেছনে কারণ হিসেবে রয়েছে দরপত্রে প্রতিযোগিতা না থাকা, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না হওয়া, চাঁদাবাজি এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সীমাহীন দুর্নীতি। মহাসড়কের পাশাপাশি আঞ্চলিক সড়কগুলো নির্মাণেও রয়েছে লাগাতার অনিয়ম।
এরইমধ্যে শরীয়তপুর পৌর এলাকার শরীয়তপুর-কানার বাজার রাস্তা নিম্মমানের ইট দিয়ে নির্মাণ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। পৌরসভা কর্তৃপক্ষ চিঠি দিলেও ঠিকাদার ‘তোয়াক্কা করছে না’ বলেও এলাকাবাসীর অভিযোগ। এছাড়া অভিযোগের ভিত্তিতে জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি ও ঢাকা থেকে আগত ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে সাথে নিয়ে সরেজমিন তদন্ত করে সত্যতা পাওয়া যায়। এরপর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিকে খারাপ ইট সরিয়ে নিয়ে ১নং ইট দিয়ে কাজ করার জন্য বারবার চিঠি দেওয়া হয়। ঠিকাদার নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী সরিয়ে নেওয়ার কথা দেন। কিন্তু তা শুধু প্রতিশ্রুতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ।
নি¤œমানের ইট বা মানহীন অন্যান্য সরঞ্জাম দিয়ে রাস্তা বানালে দেখা যায় অল্পকিছুদিনের মধ্যে সেগুলোর পিচ উঠে বা গর্ত সৃষ্টি হয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। অনেকসময় নির্মাণের দু’এক মাস পরে সামান্য বৃষ্টিতেই দেখা যায় সড়কের বেহাল দশা। ঠিকাদার কোনরকম কাজ শেষ করেই দায়মুক্ত হয় কিন্তু দীর্ঘদিন ভুগতে হয় এলাকাবাসীকে। এসব সড়ক সংস্কারেরও কোনও তাড়া দেখা যায় না। ফলে জনগণকে এসব রাস্তা দিয়েই ধুঁকে ধুকে চলাচল করতে হয়।
দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি প্রত্যক্ষভাবে যোগাযোগ ব্যবস্থার ওপর নির্ভরশীল। যোগাযোগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম সড়কই যখন বেহাল অবস্থায় থাকে তখন ‘উন্নয়ন’ কতটুকু ফলপ্রসূ হবে তা প্রশ্নবিদ্ধই থেকে যায়। সুতরাং সড়ক নির্মাণকাজে বেশি ব্যয় করে কাঙ্খিত উপযোগীতা না পাওয়ার ব্যর্থতাচক্র থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এরজন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আরও সজাগ এবং কঠোর হতে হবে।
সড়ক নির্মাণের দরপত্র দেওয়া থেকে শুরু করে প্রতিটি ক্ষেত্রে যথেষ্ট নজরদারি থাকতে হবে। যে ঠিকাদার/প্রতিষ্ঠান কাজ পাবে তার সবকিছু যাচাই করে নিতে হবে। রাজনৈতিক সমর্থন কিংবা টাকার বিনিময়ে কাজ পাওয়ার কুপ্রথা বন্ধ করতে হবে। নির্মাণ কাজের সময় যথেষ্ট তদারকি থাকতে হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা এবং পরবর্তীতে সড়ক রক্ষাণাবেক্ষণে নজরদারি থাকতে হবে। এছাড়া সড়ক নির্মাণে অনিয়মে দায়ীদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর নজির খুব একটা দেখাও যায় না। আমরা সরকারি অর্থ তছরুপকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করি।