উন্নয়ন প্রকল্পের টাকা নিয়ে একজন সম্মানিত শিক্ষক (ভিসি, জাবি) ও ছাত্রলীগ নেতাদের মধ্যে যে দ্বিমুখী চ্যালেঞ্জ আসছে, তা সত্যিই লজ্জাজনক। ভিসি বলেছেন, ‘হয়তো আমার দুর্নীতি বের করতে গিয়ে অন্য কিছু বেরিয়ে আসবে!’ তাহলে অন্য কিছু কী? সর্বসাধারণ সত্য জানার অপেক্ষায়! কারণ, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পরিচালিত হয় জনগণের কষ্টার্জিত টাকায়।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পের প্রথম ধাপের ৪৫০ কোটি টাকার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের মধ্যে ২ কোটি টাকা ভাগাভাগি করে দেওয়া হয় বলে সম্প্রতি গণমধ্যমে প্রকাশ হয়। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লেখা চিঠিতে ছাত্রলীগ মিথ্যা গল্প ছুড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জাবি ভিসি অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম। ভিসি বলেন, ছাত্রলীগ সম্পূর্ণ মিথ্যা বানোয়াট গল্প ছুড়েছে। আমি তাদের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলাম। এ বিষয়ে আমি তদন্ত করতে বলব বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে, মাননীয় আচার্যকে...। ভিসি আরও বলেন, তাদের (ছাত্রলীগ) মূল উদ্দেশ্য ছিল, তারা ঠিকাদারের কাছ থেকে কিছু শতাংশ নেবে। তারা এ বিষয়ে আমাকে ইঙ্গিত দিয়েছে। কিন্তু আমার কাছে এসে তারা হতাশ হয়েছে। তারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে যে খোলাচিঠি লিখেছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, মাদক ব্যবসা আর টাকার বিনিময়ে কমিটি গঠন ছাত্রলীগের আয়ের প্রধান উৎস। অভিযোগ আকারে বিষয়গুলো দীর্ঘদিনের হলেও এবার ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতৃত্ব সেটাই প্রমাণ করলেন। এসব অভিযোগে তাদের নেতৃত্ব থেকেও সরিয়ে দেওয়া নিয়ে আলোচনা চলছে। উন্নয়ন প্রকল্পসহ রাষ্ট্রের যে কোনো কাজে ছাত্র নেতা ও রাজনীতিবিদদের কমিশন বাণিজ্য অলিখিতভাবে অনুমোদিত। হয়তো এবার খাইখাই বেশি হওয়া ও ভাগ বাটোয়ারার দ্বন্ধ মিডিয়ায় প্রকাশ হয়ে লেজেগোবরে অবস্থা হয়েছে।
এদিকে গোলাম রাব্বানীর বক্তব্যকে অস্বীকার করে ‘বরং সে তার বান্ধবী দিয়ে চাঁদার জন্য ফোন দেয়াতো’ বলে মন্তব্য করেছেন ভিসি ফারজানা ইসলাম। তিনি বলেন, ‘গোলাম রাব্বানী চাঁদার জন্য বিভিন্নভাবে বিরক্ত করতো। সে বলে, আজকাল ২%-এ হয় না, ৪-৬% লাগে। তাদের কাছে অনুমতি আছে উন্নয়ন প্রকল্প থেকে টাকা নেয়ার।’ তাহলে কি ভিসি ২% পার্সেন্ট দিতে চেয়েছিলেন? ‘উন্নয়ন প্রকল্প থেকে টাকা নেয়ার অনুমতি’ কোন উৎস থেকে লাভ করেছেন গোলাম রাব্বানী?
কোথায় আমাদের ৫২ থেকে ৬৯ আর ৭১-এর ছাত্র রাজনীতি। এখনকার ছাত্রলীগ আর আগের ছাত্রদল কেনো? ক্ষমতায় গেলে সব শিয়ালের এক রা হয়ে যায়! স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে দেশে ছাত্র রাজনীতির অর্জন কী? পদ-পদবি কেনা/বেচা, কোটিপতি হওয়া, বিলাসী জীবনযাপন করা ছাড়া আর কী? ছাত্র রাজনীতির কোনো পদ পাওয়া মানে বিত্ত বৈভবের মালিক হওয়া, ধরাকে সরা জ্ঞান করা। দেশের বোদ্ধামহলের প্রশ্ন? ছাত্র রাজনীতি কি সততার ধারায় আর ফিরে আসবে কখনো?