দেশের অধিকাংশ বসতবাড়ি দুর্যোগ সহনীয় নয়। বড় কোন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পূর্বাভাস পেলে মানুষের শেষ ভরসা নির্ধারিত আশ্রয়কেন্দ্রগুলি। বিশেষ করে ঘূর্ণিঝড়-বন্যায় আশ্রয়কেন্দ্রের ভূমিকা অপরিসীম। হাজার হাজার মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয় এসব স্থাপনায়। কিন্তু যখন আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণেই অনিয়ম হয় তখন আশ্রয় নেওয়া মানুষের জন্য নিরাপত্তার চেয়ে সেগুলো জীবনের জন্য বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে।
বরিশাল সদর উপজেলার চরমোনাই ইউনিয়নের চর গোপাল জুনিয়র মাধ্যমিক বিদ্যালয় বহুমূখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রের তিন তলা বিশিষ্ট ভবন নির্মানে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। অতিরিক্ত বালি ব্যবহার করে ভবনের মেঝে, ছাদ ও দেয়ালের প্লাস্টারের কাজ শেষ করা হয়েছে। অন্যান্য কাজ শেষ করে হস্তান্তরের আগেই ভবনের বিভিন্ন অংশের প্লাস্টার খসে পড়তে শুরু করেছে। ভবনের বাকি থাকা আংশিক কাজ শেষের আগেই স্থানীয়রা ক্ষুব্ধ হয়ে নিন্মমানের কাজ করায় ঠিকাদারের নিয়োগকৃত শ্রমিকদের সবধরণের কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন, যা খুবই স্বাভাবিক। মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রের নামে ‘মরণকেন্দ্র’ চায় না। এসব নি¤œমানের কাজ দুর্যোগের সময় যে বড় বিপদের কারণ হতে পারে তা একটি শিশুও অনুধাবন করতে পারে।
দুই কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে ১২০০ ব্যাক্তির ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন এই আশ্রয়কেন্দ্রের নির্মাণকাজ চলতি বছরের জুনে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তিন মাস পেরিয়ে গেলেও কাজ শেষ হয়নি। এরই মধ্যে অনিয়মের অভিযোগে কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন এলাকাবাসী। আরও গুরুতর যে বিষয়টি সামনে এসছে তা হলো, ওই ঠিকাদার অনিয়মের ব্যাপারে সংবাদ প্রকাশ থেকে বিরত রাখতে সর্বাত্মক চেষ্টা করেছেন।
বরিশালের ওই আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণে অনিয়ম তদন্তে আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। নদী ও চরবাসীর দূর্যোগকালীন সময়ে তাদের নিরাপত্তার জন্য আশ্রয় কেন্দ্র করা হচ্ছে, কারো জীবনহানীর জন্য আশ্রয় কেন্দ্র করা হচ্ছে না। কাজের মধ্যে কোন ধরনের অনিয়ম হলে ঠিকাদারকে ভবন ভেঙে নতুন করে কাজ করে দিতে হবে। এছাড়া আগে অন্যান্য যে আশ্রয়কেন্দ্রগুলো নির্মিত হয়েছে সেগুলোর দুর্নীতির সন্ধানের পাশাপাশি মান যাচাইয়ের আবশ্যিকতা রয়েছে। প্রত্যেকটি আশ্রয়কেন্দ্র কতটুকু টেকসই ও নিরাপদ তা পরীক্ষা করতে হবে। দুর্যোগের সময় আশ্রয়কেন্দ্র ধ্বসে প্রাণহানির সংবাদ আমরা পেতে চাই না।