মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাচনি ইশতেহার ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়, এলজিইডিসহ অন্য সংশ্লিষ্টদের আন্তরিক হতে হবে। না হয়তো প্রধানমন্ত্রীর শত আন্তরিকতা থাকলেও তার প্রতিশ্রুতি কল্পনার জালেই আবদ্ধ থাকবে। বর্তমানে সারা দেশে ২ লাখ ৪০ হাজার কিমি কাঁচা সড়ক রয়েছে। গ্রামীণ যোগাযোগ ও কৃষি উৎপাদনে সহায়তা করতে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) সারা দেশে প্রায় ২৯ কিলোমিটার সেতু নির্মাণ প্রকল্পের কাজ ২০১০ সালে শুরু করে। ২০২০ সালের জুনে কাজ শেষ হওয়ার পরিকল্পনায় প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিলো ৬২৮ কোটি টাকা। পরবর্তীতে বিভিন্ন সময়ে সংশোধন করে ব্যয় বাড়তে বাড়তে চার গুণ হয়েছে। সংবাদ মাধ্যমে জানা যায়, হাওড় অঞ্চলের দুটি মডেল গ্রামসহ অবকাঠমো উন্নয়নে গ্রামীণ সড়ক ও কালভার্ট করার প্রকল্প নেয়া হলেও তিন শতাংশও অগ্রগতি হয়নি গত ৭ বছরে। উপজেলা কমপ্লেক্স সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় দীর্ঘ ৯ বছরে আবাসিক ভবন হয়েছে মাত্র ৪১ শতাংশ।
এছাড়াও চলমান ১৫২টি প্রকল্পই একই দশা। কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে বিদেশ গিয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন, নিয়ম ভেঙে ইচ্ছামতো ব্যয় বৃদ্ধি করেও কাজের সুফল কেনো পাওয়া যাচ্ছে না?
সরকারের যেকোনো উন্নয়ন প্রকল্পের শুরুতেই কাজের গতি বাড়ানোর বাহানায় কেনা হয় বিলাসবহুল গাড়ি। কিন্তু প্রকল্প শেষে যথাসময়ে গাড়িগুলো জমা হয় না পরিবহন পুলে। ক্ষমতার অপব্যবহার করে ওই কর্মকর্তা বা সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয় গাড়িগুলো আটকে রেখে ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহার করে থাকে। প্রকল্পের মেয়াদ শেষে অনৈতিকভাবে এ গাড়ি ব্যবহারকে দুর্নীতি হিসেবে চিহ্নিত করেছে দুদক। উপরস্ত কর্মকর্তারা যখন অনৈতিকভাবে গাড়ি ব্যবহার করতে পারে, তখন তাদের দ্বারা প্রকল্পের কাজের গতি বাড়ার আশা করা যায় না।
একটি প্রকল্প হাতে নেয়া মানেই দেড় থেকে ৩ কোটি টাকার ৪ থেকে ৫টি নতুন বিলাসবহুল গাড়ি। নির্ভরযোগ্য সূত্র মতে, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার অধীনে গত ৫ বছরে শতাধিক প্রকল্পের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে। ওইসব প্রকল্পের গাড়ি এখনো জমা হয়নি পরিবহন পুলে। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকল্পের গাড়ি অনৈতিকভাবে ব্যবহারের সত্যতা পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন। এ বিষয়ে প্রশাসনকে সতর্ক করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে চিঠিও দিয়েছে দুদক।
বিভিন্ন দপ্তরে ব্যাপক গাড়ির চাহিদা থাকায় অনেক জনগুরুত্বপূর্ণ কাজের বিঘœ ঘটছে। অথচ প্রজেক্ট শেষে হওয়ার পরও গাড়ি ফেরত দেওয়া হয় না। রাষ্ট্রীয় সম্পদের এ অবৈধ ব্যবহার সম্পূর্ণ অনৈতিক ও দুর্নীতির সমতুল্য। শুধু জমা নেয়াই নয়, যারা এতোদিন বেআইনিভাবে ব্যবহার করেছেন, তাদের থেকে জ্বালানি, চালকের বেতন, সার্ভিস চার্জ ও অন্যান্য অপচয়ের খরচ জরিমানা করে আদায় করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে।