আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম কমে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন ট্যারিফ কমিশনের সদস্য শাহ মো. আবু রায়হান আলবিরুনী।বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দিনের উপস্থিতিতে মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে পেঁয়াজের দাম নিয়ে অংশীজনের সঙ্গে সভা শেষে ট্যারিফ কমিশন সদস্য এ কথা জানান।আর বাণিজ্য সচিব বলেন, যে পরিমাণ পেঁয়াজ মজুত ও আমদানির পর্যায়ে রয়েছে, তাতে সহসাই দাম কমে আসবে। আতঙ্কের কোনো কারণ নেই।
এক প্রশ্নের জবাবে ট্যারিফ কমিশনের সদস্য আলবিরুনী বলেন, পেঁয়াজ সিজনাল এবং পচনশীল হওয়ার কারণে আমদানি করতে হয়। আমাদের চাহিদা ২৪ লাখ টন। উৎপাদনও প্রায় ২৪ লাখ টন। কিন্তু পচনের কারণে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে সাড়ে সাত লাখ টন। এজন্য আমরা ১০ থেকে ১১ লাখ টন আমদানি করি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য দিয়ে ট্যারিফ কমিশন সদস্য বলেন, গত ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১২ লাখ টনের এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে। আমাদের মজুত সন্তোষজনক। আমদানির পর্যায়ে রয়েছে ৪০ হাজার টন। এটা আসলে আমাদের লিংক পিরিয়ড দেড় মাসে স্বাভাবিক হয়ে যাবে। ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে দেশীয় নতুন পেঁয়াজ আসবে এবং ভারতে এর এক মাস আগে নতুন পেঁয়াজ নামবে। তখন ভারত বেরিয়ার উঠিয়ে দেবে। তখন স্বাভাবিক হয়ে যাবে। এটা নিয়ে ঘাবড়ানোর কিছু নেই।
চট্টগ্রাম এবং ঢাকায় এ দিন ৫৫ টাকায় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের কাছে যে তথ্য আছে, আমরা যথেষ্ট নিশ্চিত যে ২৪ ঘণ্টায় দাম কমে আসবে। আজকের বৈঠকের পরে দাম কমে আসবে। আমাদের বক্তব্য যথাযথভাবে প্রতিফলন ঘটলে, তাহলে আগামীকালকে (বুধবার)।তখন বাণিজ্য সচিব জাফর উদ্দিন বলেন, আজকের সভা থেকে খুব শক্তভাবে বলতে চাই আমাদের মজুত সন্তোষজনক। যেভাবে দাম বাড়ানো হচ্ছে, সেটা আশা করি থাকবে না আজকের মিটিংয়ের পরে।
দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির কারণ ব্যাখ্যা করে বাণিজ্য সচিব বলেন, সম্প্রতি ভারতের মহারাষ্ট্রে পেঁয়াজের ফলন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলে তাদের অভ্যন্তরীণ বাজারে দর বেশ বৃদ্ধি পায়। ফলে ভারত সরকার পেঁয়াজের নূন্যতম রপ্তানি মূল্য টন প্রতি ৮৫০ ডলার নির্ধারণ করে। আগে যেখানে ২৫০-৩০০ ডলারে আমদানি করা যেতো, তা ৮৫০ ডলারে এসেছে এবং বাংলাদেশে পেঁয়াজের দরে ঊর্ধ্বগতি দেখা দেয়।বাজার তথ্যে দেখা গেছে, দেশের বাজারে রোববার থেকে পেঁয়াজের মূল্য কেজিতে বেড়েছে ১০-১৫ টাকা। ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা ভারত থেকে পেঁয়াজ না এলে দেশের বাজারে দাম আরও বাড়বে।
বাণিজ্য সচিব বলেন, আমরা হিসাব করে দেখলাম আমদানি পর্যায়ে যেগুলো পাইপলাইনে আছে এবং বর্তমানে যে মজুত আছে, তা সন্তোষজনক। কাজেই আমার মনে হয় পেঁয়াজ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার মতো কারণ নেই।
তিনি বলেন, পাইকারি থেকে খুচরা পর্যায়ে বেশি গ্যাপ মনে হচ্ছে। এটা যাতে কমে আসে, সেজন্য ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ থেকে শুরু করে আরও কিছু এজেন্সি এগুলো মনিটরিং করে থাকে। আশা করি মনিটরিং জোরদার করা হচ্ছে। এই সমস্যাটা আর থাকবে না।
‘পাইকারি থেকে খুচরায় যে দাম বাড়ছে, আমরা সিদ্ধান্ত দিয়ে দিলাম আজকে মনিটরিং জোরদার করা হচ্ছে। আপনারা একটু ধৈর্য ধারণ করেন। আমাদের একটু সময় দেন। আশা করি এই সমস্যা থেকে খুব সহসাই বের হতে পারবো।
বাণিজ্য সচিব এও বলেন, গত ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে বাজারদরের ঊর্ধ্বগতি রোধে ন্যায্য মূল্যে ট্রাক সেলের মাধ্যমে খোলা বাজারে পেঁয়াজ বিক্রির ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এ ছাড়া পেঁয়াজ আমাদানির ক্ষেত্রে এলসি মার্জিন এবং সুদের হার হ্রাসের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি পাঠানো হয়েছে।এক থেকে দেড় মাসের জন্য এই সমস্যা হয়েছে জানিয়ে সচিব বলেন, আশা করি টিসিবি কার্যকর ভূমিকা পালন শুরু করেছে।
সভায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন দপ্তর-সংস্থা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিনিধি, প্রধান পেঁয়াজ আমদানিকারক হাফিজ উদ্দীন উপস্থিত ছিলেন।