দেশের নাগরিকদের পরিচিতি ও ভোটার তালিকায় অন্তুর্ভুক্ত হওয়ার জন্য দেওয়া হয় জাতীয় পরিচয়পত্র বা এনআইডি। মোবাইলের সিম কেনা থেকে শুরু করে পাসপোর্ট করাসহ বহুবিধ কাজে ব্যবহার করা হয় জাতীয় পরিচয়পত্র। নাগরিকদের কাছে এবং এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং রাষ্ট্রের জন্য স্পর্শকাতর একটি বিষয়।
নিপীড়নের মুখে মিনায়মার থেকে পালিয়ে এসে এদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশি পরিচয়পত্র দেওয়ার বিষয়টি এখন বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এনআইডি যাঁরা দেন সেই নির্বাচন কমিশনের (ইসি) উচ্চপর্যায়ের একজন প্রতিনিধি বলেছিলেন, রোহিঙ্গাদের জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার সাথে প্রতিষ্ঠানটির কেউ জড়িত নয়। কিন্তু কথাটি কোনভাবেই বিশ^াসযোগ্য নয়। পরিচয়পত্র পাওয়ার ক্ষেত্রে রোহিঙ্গাদের বা সাধারণ মানুষের সেই ক্ষমতা নেই যে, সার্ভারে ঢুকে তথ্য সংরক্ষণ করবে। এবং পরবর্তীতে দেখা গেছে যে নির্বাচন কমিশনের কর্মীই এর সাথে জড়িত।
রোহিঙ্গারে জাতীয় পরিচয়পত্র করে পাসপোর্টও নেওয়ার ঘটনা প্রকাশের পর তা তদন্তের উদ্যোগ নেয় ইসি। পরে রোহিঙ্গাদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির চেষ্টা এবং ল্যাপটপ গায়েব করার ঘটনায় চট্টগ্রাম নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ের পিয়নসহ পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হয়। চট্টগ্রামের ডবলমুরিং থানার নির্বাচন কর্মকর্তা পল্লবী চাকমা বাদী হয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এবং নির্বাচন কমিশন আইনে তাদের বিরুদ্ধে মামলাও করেন। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটকে। এদিকে, এর আগে রোহিঙ্গা নারী রমজান বিবি ওরফে লাকীর জাতীয় পরিচয়পত্র নেওয়ার ঘটনায় করা মামলাটির তদন্তভার দেওয়া হয় সিআইডিকে।
রোহিঙ্গাদের এনআইডি দেওয়ার ঘটনাগুলো গুরুত্বের সাথে তদন্ত করা হোক। জড়িতরা যেন কোনভাবেই ছাড় না পায়। একইসাথে ইসির কর্মকর্তাদের আরও সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। তাঁদের গাফিলতির কারণে কিংবা ব্যর্থতা ঢাকার চেষ্টায় যেন এরকম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ধামাচাপা পড়ে না যায়। নির্বাচন কমিশনের সার্ভারে এগারো লক্ষাধিক রোহিঙ্গার তথ্য আছে বলেও জানা গেছে। রোহিঙ্গারা মোটামুটি সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে। তাই শুধু চট্টগ্রাম-কক্সবাজার নয়, দেশের সব জায়গাতেই নতুন ভোটার যারা হচ্ছেন তাদেরকে জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার আগে রোহিঙ্গাদের তথ্যের সাথে মিলিয়ে দেখতে হবে। এতে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব পাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না।
একথা নতুন নয় যে, রোহিঙ্গারা বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে দেশের বাইরে গেছে। এটি বাংলাদেশের জন্য হুমকিস্বরূপ। জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়ে কোনধরণের ছাড় দেওয়া উচিৎ নয়। রোহিঙ্গাদের এনআইডি পাওয়ার ব্যাপারে আরো আগের থেকে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন ছিল। তা হয়নি, কিন্তু এখন একইরকম ভুল আর নয়। আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এব্যাপারে আরো উদ্যমী হওয়ার আহ্বান জানাই। প্রয়োজনে রোহিঙ্গাদের জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়া ঠেকাতে বিশেষ ইউনিট গঠন করা হোক, যারা গুরুত্বের সাথে শুধু এ বিষয়টিই দেখভাল করবে।