ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে ঢাকা-চট্টগ্রাম নৌরুট। অথচ এটি দেশের সবচেয়ে ব্যস্ততম ও গুরুত্বপূর্ণ নৌরুট। পণ্যবাহী জাহাজ প্রায়ই ওই রুটে দুর্ঘটনায় পড়ছে। সাম্প্রতিক সময়ে ৬-৭টি পণ্যবাহী জাহাজ দুর্ঘটনায় পতিত হয়েছে। সাগরের দিকে রুট সরে যাওয়া এবং ডুবোচরের কারণে অধিকাংশ জাহাজ এখন ধারণ ক্ষমতার কম পণ্য নিয়ে চলাচল করছে। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে প্রতিদিন বিভিন্ন পণ্য নিয়ে কয়েক শত লাইটারেজ জাহাজ ওই রুটে চলাচল করে। মূলত দুর্বল অবকাঠামোর কারণেই অনেক জাহাজ দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। ওয়াটার টান্সপোর্ট কো-অডিনেশন সেল সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, চট্টগ্রাম বন্দর ও আউটারের মাদার ভ্যাসেল থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম নৌরুটে প্রতি মাসে গড়ে ৪০ লাখ টন পণ্য পরিবহন করা হয়। ওই রুটে প্রতিদিন প্রায় ২শ থেকে আড়াই শতাধিক লাইটারেজ জাহাজ চলাচল করে। মূলত উপকূল ঘেঁষে নৌযান চলাচলের উপযোগী করে এই নৌরুট তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু ডুবোচরের কারণে সন্দ্বীপের পশ্চিমে ভাসানচরের দক্ষিণে পানির গভীরতা কমে এসেছে আড়াই মিটার থেকে ৬ মিটারের মধ্যে। ফলে ওই অংশ জাহাজ চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পড়ায় সম্প্রতি রুট সরিয়ে নেয়া হয় ভাসান চরের দক্ষিণে জেগে ওঠা ঠেঙ্গারচর নামে নতুন চরের পরে। যা বর্তমান রুট থেকে গভীর সমুদ্রের দিকে ৩ কিলোমিটার। নতুন ওই রুটের নাব্য থাকলেও জাহাজ চলাচলে ঝুঁকি রয়েছে।
সূত্র জানায়, গত কয়েক মাস আগে চালু করা নতুন রুটের কোনো কোনো এলাকায় পানির গভীরতা ভাটার সময় ৩ মিটারের কাছাকাছি। সর্বোচ্চ উচ্চতার জোয়ার ছাড়া ওসব এলাকা অতিক্রম করা সম্ভব হয় না। তাছাড়া সেখানে সমুদ্র তুলনামূলক বেশি উত্তাল হওয়ায় জাহাজ চালানোও ঝুঁকিপূর্ণ। ইতিমধ্যে চরগজারিয়া থেকে চাঁদপুর পর্যন্ত নৌরুট মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। সেখানে পর্যাপ্ত বয়া বাতি না থাকায় নিত্যদিন দুর্ঘটনা ঘটছে।
সূত্র আরো জানায়, নৌরুটে জাহাজ পরিচালনার জন্য অভিজ্ঞ পাইলটের অভাব রয়েছে। চট্টগ্রাম-ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে প্রতিদিন আড়াই শতাধিক জাহাজ চলাচল করে। কিন্তু পাইলট রয়েছে মাত্র ৩২ জন। অথচ পণ্যবাহী জাহাজের মালিকরা শুধু জাহাজ চালানোর জন্য প্রতিদিন সরকারের কোষাগারে লাখ লাখ টাকা জমা দিচ্ছেন। অবশ্য চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা হয়ে আশুগঞ্জ পর্যন্ত নৌরুট খননের জন্য বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নের একটি প্রকল্প বর্তমানে প্রক্রিয়াধীন আছে। ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকা ব্যয়সাপেক্ষ ওই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ঢাকা পর্যন্ত নৌপথ নিরাপদ হবে।
এদিকে নতুন নৌরুট বিষয়ে অভ্যন্তরীণ নৌপরিবরহন কর্তৃপক্ষ চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ সেলিম জানান, সন্দ্বীপ ঘেঁষে থাকা পুরোনো রুট বন্ধ করে তার থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার দক্ষিণে নতুন রুট চালু করা হয়েছে। পুরোনো রুটের বয়া সরিয়ে নতুন রুটে স্থাপন করা হয়েছে। ওই রুটে নির্দেশনা মেনে চলাচল করলে দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হবে।