ফুটফুটে একটি শিশু একটি স্কুলের ছাত্র ছাত্রীদের মাঝে ঘুরে ঘুরে বাদাম বিক্রি করছে। দূর থেকে দৃশ্যটি দেখে একটু এগিয়ে এসে বাদাম ওয়ালা বলে ডাকতেই কাছে এসে বলল বাদাম নেবের স্যার। নাম জিজ্ঞাসা করতেই বলে উঠে আমার হৃদয়। আমি মধুখালীর মহিষাপুর গ্রামে মায়ের সাথে খালা বাড়ীতে থাকি।
এ এক শিশু বাদাম বিক্রেতার গল্প। ওর নাম হৃদয়। বয়স ৯ বছর। বাড়ী ফরিদপুরের সদর উপজেলার কানাইপুর ইউনিয়নের জয়কাল গ্রামে। হৃদয়ের পিতার মো. ফরিদ, মায়ের নাম ফরিদা বেগম। হৃদয়ের আর একটি ভাই আছে নাম স¤্রাট (১১) সে মধুখালী উপজেলার নওপাড়া নানা বাড়ীতে থেকে ভূষনা লক্ষণদিয়া আক্কেল আলী স্কুল এ- কলেজের ৭ম শ্রেণিতে পড়া লেখা করে।
বাবা মো. ফরিদ অনেক আগেই আর একটি বিয়ে করে নিরুদ্দেশ হয়েছে। তাই যে বয়সে তার স্কুলের ব্যাগ কাধে নিয়ে স্কুলে গিয়ে লেখাপড়া করার কথা, বন্ধুর সাথে খেলাধোলা করার কথা সেই বয়সে সে কাধে তুলে নিয়েছে বাদাম বিক্রির ঝুড়ি। শুধু অসুস্থ মায়ের চিকিৎসা আর সংসারের ব্যয় বহনের জন্য। হৃদয় এ প্রতিনিধিকে জানান, বাবা নিরুদ্দেশ হবার পর আমার মা ফরিদা বেগম আমাদের দুই ভাইকে নিয়ে চলে আসে মধুখালী নওপাড়া নানা বাড়ীতে। সেভানে আমার এক ভাই স¤্রাটকে রেখে আমার মধুখালীর মহিষাপুর গ্রামে আমার খালী বাড়ী থেকে রাজ্জাক জুট মিলে চাকরী করতে থাকে। এ পর্যায়ে মা অসুস্থ হয়ে পড়ায় চাকরী করতে পারে না তাই আমাকে আমার মায়ের চিকিৎসা এবং সংসার চালানোর জন্য বাদাম বিক্রি করতে হয়। দৈনিক কত হয় জিজ্ঞাসা করতেই উত্তর প্রতিদিন বাদাম বিক্রি করে ২৫০ টাকা থেকে ৫‘শ টাকা পর্যন্ত লাভ হয়। এ দিয়েই সংসার চলছে। লেখা পড়া করতে পার না ! সংসারের দ্বায়িত্ব নিয়ে লেখা পড়া করব কিভাবে ? খরচই বা কে চালাবে। ভাইকেও সে লেখাপড়ার খরচ দেয় বলে জানায়।
যখন তার থাকার কথা ছিল স্কুলে পড়ালেখায় ব্যস্ত। কিন্তু অভাব আর অসহায় তাকে বাদাম বিক্রি করে মাকে নিয়ে সংসারে দ্বায়িত্ব নিতে হয়েছে শিশু হৃদয় (৯)কে। অসুস্থ মা ফরিদা বেগমকে নিয়ে মধুখালী উপজেলার মহিষাপুর গ্রামের খালা বাড়িতে বসবাস করছে বর্তমানে।
বৃহস্পবিার বেলা সাড়ে ৯টায় মধুখালীতে অবস্থিত ফরিদপুর চিনিকল উচ্চবিদ্যালয় সামনের সড়কে কাঁধে ঝুড়ি ঝুলিয়ে খুব খুশি মনে বাদাম বিক্রি করছে হাস্যেজ্জল শিশু হৃদয় তখন কথা হচ্ছিল তার সাথে। এভাবেই হৃদয়দের মত শিশুদের স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যায়। ওদের স্বপ্ন পুরন করতে হাত বাড়ায় না কোন মহামানব।