যে দেশে ছাত্ররাজনীতির একটা উজ্জল ভূমিকা ছিলো, ছিলো গৌরবোজ্জল অতীত। সে দেশে ছাত্ররাজনীতির বর্তমান যে অবস্থা তা সত্যিই দুঃখজনক। গত ১৪ সেপ্টেম্বর কাউন্সিলের মাধ্যমে ছাত্রদল নতুন নেতৃত্ব পাওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু দলীয় অনিয়ম-আক্রোশে সেটির আর আলোর মুখ দেখেনি। অন্যদিকে একইদিন কোটি টাকার চাঁদার অভিযোগ নিয়ে সরতে হলো ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে।
উল্লিখিত ঘটনায় আওয়ামী লীগ আর বিএনপি দায় এড়াতে পারবে কী? কারণ, তারা নিজেদের স্বার্থে নিজস্ব প্রক্রিয়ায় ছাত্র সংগঠনকে পরিচালিত হতে দেয় না। এ দুটি ছাত্র সংগঠনের প্রকৃত মুখোশ উšে§াচিত হওয়ায় বর্তমানে মেধাবী শিক্ষার্থীরা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। তবে এর পেছনে শিক্ষকদের দায়ও কম নয়। শিক্ষকদের নৈতিক অবস্থান ভয়ানক জায়গায় চলে যাওয়ায় এসব ঘটনা ঘটছে। তাদের নৈতিক অবক্ষয়ের কারণেই পরীক্ষা ছাড়াই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ও ডাকসু নেতা হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে ঈদ সালামির নামে কোটি টাকা ছাত্রদের হাতে তুলে দেয়ার পেছনে যারা জড়িত, তাদের কঠোর শাস্তির দাবি তুলেছেন দেশের সচেতন শিক্ষাবিদরা।
বর্তমানে যারা পড়াশোনায় মনোযোগী, মেধাবী, তারা কেউ আর ছাত্রলীগ বা ছাত্রদলের রাজনীতিতে আগ্রহী নয়। এখনকার ছাত্র রাজনীতির উদ্দেশ্যই হলো, পদ-পদবি, কেনা-বেচা, কোটিপতি হওয়া, বিলাসী জীবনযাপন করা। ছাত্র রাজনীতির কোনো পদ পাওয়া মানে বিত্ত বৈভবের মালিক হওয়া, ধরাকে সরা জ্ঞান করা। ছাত্র রাজনীতির নামে ওরা এখন আর ছাত্র নেই। সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি ও লাঠিয়ালের রাজনীতির ময়দানে রয়েছে। লোভ-লালসা, অনৈতিকতার বাণিজ্য চলছে ছাত্র সংগঠনগুলোয়। এ জন্য ছাত্র রাজনীতির প্রতি সাধারণ শিক্ষার্থী ও দেশের শান্তিপ্রিয় মানুষের আস্থা-বিশ্বাস নষ্ট হয়ে ঘৃণা জন্মেছে। ছাত্রলীগের কর্মকা- ও আচরণের প্রতি কতটা কষ্ট পেলে, মর্মাহত হলে, প্রধানমন্ত্রী তাদের নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হন। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক উপাচার্য তাদেরকে এক কোটি টাকা দিয়ে দেন; আরেক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর যদি ভর্তিপরীক্ষা ছাড়াই শিক্ষার্থী ভর্তি করান। তাহলে আজ শিক্ষকদের নৈতিক অবস্থান কোন জায়গায় চলে গেছে?
সম্প্রতি কোটি টাকার চাঁদাবাজির অভিযোগে ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন এবং সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে পদ ছাড়তে বাধ্য হন। অন্যদিকে অনিয়মের অভিযোগ তোলায় দীর্ঘ ২৭ বছর পর ছাত্রদলের ষষ্ঠ কাউন্সিল দলের সাবেক কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-ধর্মবিষয়ক সম্পাদক আমানউল্লাহ আমানের করা মামলায় আটকে গেলো। এ নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ছাত্ররাজনীতি অতীত গৌরব হারিয়ে গেছে। শৃঙ্খলা নষ্ট হয়ে গেছে। কোথায় আমাদের ৫২ থেকে ৬৯ আর ৭১-এর ছাত্র রাজনীতি। শিক্ষার্থীদের কল্যাণে বর্তমানে ছাত্র রাজনীতির কোনো ভূমিকা নেই। তাই সাধারণ শিক্ষার্থীসহ দেশের মানুষের আস্থা-বিশ্বাস ও গৌরবোজ্জল অতীত পুনরুদ্ধার করতে হলে, দলীয় লেজুরবৃত্তি পরিত্যাগ করে, ছাত্রদের নিজের মতো করে রাজনীতি করতে হবে।