রাজধানী জুড়ে সচেতন মহলে বিষয়টি আগে থেকে স্পষ্ট হলেও ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস করেনি। ঢাকা মহানগর যুবলীগ নিয়ে অন্তহীন অপকর্মের তথ্য উঠে এসেছে কয়েকটি গোয়েন্দা রিপোর্টে। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘যারা অস্ত্রবাজি করেন, যারা ক্যাডার পোষেণ, তারা সাবধান হয়ে যান, এসব বন্ধ করুন। তা না হলে, যেভাবে জঙ্গি দমন করা হয়েছে, একইভাবে তাদেরও দমন করা হবে।’ যুবলীগের নানা নেতিবাচক কর্মকা- নিয়ে অভিযোগের পাহাড় উঠায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া এভাবেই গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়।
জানা যায়, রাজধানীর অভিজাত এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় ক্যাসিনোর আদলে গড়ে তোলা হয়েছে জুয়ার ক্লাব। ক্লাব পরিচালনায় রয়েছে বিভিন্ন দেশ থেকে অভিজ্ঞ জুয়ারিসহ সুন্দরী নারী। সুন্দরী নারীরা ক্লাবগুলোতে আগত জুয়ারিদের আলাদা আনন্দের খোরাক জোগায়। যুবলীগ দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ঢাকায় ক্যাডার চাঁদাবাজ বাহিনী গড়ে তুলে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে সে। আমার সংগঠনে চাঁদাবাজ দরকার নেই।’ এছাড়াও অভিযোগ ওঠা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূইয়াকে গুলশানের বাসা থেকে ১টি অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র বিপুল পরিমাণ গুলি, মাদক (ইয়াবা) উদ্ধারসহ আটক ও তার নিয়ন্ত্রণাধীন একটি ক্যাসিনোয় অভিযান চালিয়ে নগদ অর্থ, বিদেশি মদ ও অন্তত দেড় শতাধিক নারী-পুরুষকে আটক করা হয়। মতিঝিল-ফকিরাপুল ক্লাবপাড়ায় ক্যাসিনো থেকে শুরু করে কমপক্ষে সাতটি সরকারি ভবনে ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ ও জমি দখলের মতো নানা অভিযোগ রয়েছে খালিদ মাহমুদের বিরুদ্ধে। ফকিরাপুল ইয়াংমেন্স ক্লাবটি সরাসরি নিজে পরিচালনাসহ মতিঝিল, দৈনিক বাংলা এলাকায় কমপক্ষে ১৭টি ক্লাব নিয়ন্ত্রণ করেন এ যুবলীগ নেতা। সকাল ১০টা থেকে ভোর পর্যন্ত চলমান এসব ক্লাব থেকে প্রতিদিন কমপক্ষে ১ লাখ টাকা নেন তিনি।
যুবলীগের কোনো নেতা নিয়ে কোনো ধরনের অভিযোগ থাকলে জানানোর জন্য বিবৃতি দিয়েছেন সংগঠনটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ওমর ফারুক চৌধুরী। প্রধানমন্ত্রীর যুবলীগ নিয়ে ক্ষোভ ও কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণের পর সবাই যেনো নড়েচড়ে বসেছেন। প্রধানমন্ত্রী যাদের ওপর আস্থা রেখে সভাপতি, চেয়ারম্যান করেছেন তারা ইতোপূর্বে কী করেছেন? জাতীয়, আন্তর্জাতিক বিষয় নিয়ে শত ব্যস্ততার পরও সব ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীকেই দেখতে হবে? ছাত্রলীগের পর অবৈধ অর্থ আয়সহ নানা অপরাধের কারণে বেকায়দায় পড়েছে ক্ষমতাসীন দলের যুব সংগঠন যুবলীগ। রাজধানীজুড়ে কতিপয় নেতার অপকর্মের দায়ে ইমেজ সংকটে পড়েছে সংগঠনটি। ভয়ে এতদিন কেউ মুখ না খুললেও সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের কঠোর অবস্থানে থলের বেড়াল বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে।
দেশের কোথাও অবৈধ জুয়ার আড্ডা বা ক্যাসিনো চলতে পারে না। জড়িতরা যত প্রভাবশালীই হোক না কেন, আইনের আওতায় এনে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।