ধর্ষণের ঘটনা আগের চেয়ে অনেক বেড়ে গেছে। প্রতিদিনই গড়ে আট থেকে দশটি বা তারও বেশি ধর্ষণের খবর পাওয়া যায়। সাধারণ নারী, গৃহবধূ, ছাত্রী ধর্ষণের শিকার হওয়ার পাশাপাশি এই সহিংসতার শিকার হচ্ছে মেয়ে শিশু, এমনকি ছেলে শিশুরাও। বাদ যাচ্ছে না অশীতিপর বৃদ্ধারাও! ধর্ষকের তালিকায় রয়েছে আপনজন, প্রেমিক, পরিচিত-অপরিচিত, কিশোর, তরুণ, যুবক, বৃদ্ধসহ সব বয়সীরাই। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জঘন্য ব্যাপার যখন মেয়েকে ধর্ষণের দায়ে বাবা গ্রেফতার হয়। এসবের সাথে এখন নতুন করে আরেকটি বিষয় যুক্ত হয়েছে থানায় নিয়ে ধর্ষণ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যকর্তৃক ধর্ষণ এবং পুলিশের মধ্যস্থতায় থানায় নিয়ে ধর্ষকের সঙ্গে ধর্ষিতার বিয়ে দেওয়া।
গণধর্ষণের শিকার এক নারীকে পাবনা সদর থানায় নিয়ে ধর্ষকের সাথে বিয়ে দিয়েছেন সেখানকার ওসি ও এসআই। এ ঘটনায় দুজনের বিরুদ্ধেই সাময়িক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। পাবনার রেশ কাটতে না কাটতেই লালমনিরহাট সদর উপজেলায় ধর্ষকের সঙ্গে সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রীকে বিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) এই বিয়ের আয়োজন করেন বলে জানা গেছে। তবে বাল্য বিবাহ হওয়ায় কোনো দালিলিক প্রমাণ রাখেনি স্থানীয় কাজি অফিস। এদিকে বিয়ের কয়েকদিন পর বর ও তার পরিবারের পক্ষ থেকে ওই ছাত্রীর পরিবারকে জানানো হয়, বিয়েতে কোনো কাবিননামা সই হয়নি। তাই বর ও কনের তালাক হয়ে গেছে। এ ঘটনায় ছাত্রীর পরিবার বিষয়টি লিখিতভাবে লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে (এসপি) জানায়। এ ছাড়া পুলিশের রংপুর রেঞ্জের ডিআইজিকেও জানানো হয় ঘটনাটি।
ধর্ষণের শিকার হয়ে থানায় অভিযোগ জানাতে গেলেও ভুক্তভোগীরা সহযোগিতা পান না বলে অভিযোগ রয়েছে। ফেনীর সোনাগাজী থানার মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যার পর এরকম একটি বিষয় সামনে আসে। মাদ্রাসার অধ্যক্ষ কর্তৃক যৌন হয়রানির শিকার হয়ে থানায় গিয়েছিল মেয়েটি, সেখানে তৎকালীন ওসি মেয়েটিকে আপত্তিকর প্রশ্ন করে এবং অপমানজনক কতাবার্তা বলে।
নারীদের নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দায়িত্ব পালনের বদলে যখন ধর্ষণকারীকে প্রশ্রয় দেন এবং ধর্ষকের পক্ষ হয়ে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে অবতীর্ণ হয় তখন সমাজে ধর্ষণের প্রবণতা কমবে না সেটাই স্বাভাবিক। পুলিশের প্রশাসনিক দায়িত্বের পাশাপাশি সামাজিক দায়িত্ব পালনেরও প্রয়োজন আছে। তবে অপরাধকে প্রশ্রয় দিয়ে কিংবা অপরাধীর পক্ষ নিয়ে নয়। পাবনা এবং লালমনিরহাটের ঘটনায় পুলিশের উচিত ছিল ধর্ষকদের আইনের আওতায় নেওয়া, এমনকি ধর্ষিতা বা তার পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ জানানো না হলেও পুলিশের বাদি হয়ে মামলা করাটা ছিল নৈতিক দায়িত্ব। তা না করে উল্টো উপযাচক হয়ে ধর্ষকের সঙ্গে বিয়ে দিয়েছেন, তাও একজন অপ্রাপ্তবয়স্ক স্কুলছাত্রী।
এ যেন রক্ষকেরই ভক্ষক হয়ে ওঠা। ধর্ষণের ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে চুড়ান্ত কী ব্যাবস্থা নেওয়া হচ্ছে আমরা তা দেখার অপেক্ষায়। পাশাপাশি এরকম আর একটা ঘটনাও যাতে না ঘটে তার জন্য পুলিশের উচ্চ পর্যায় থেকে প্রত্যেকটা থানায় নির্দেশনা দেওয়া হোক। আশা করি কর্তৃপক্ষ দ্রুত এমন পদক্ষেপ নেবে।