দুর্নীতি-অনিয়মের মধ্যে আকণ্ঠ নিমজ্জিত ক্ষমতাসীনদের নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। রাজধানী ঢাকায় জুয়ার আসরের ব্যাপারটি অনেকটা প্রকাশ্যেই চলছিল। এত দিন আয়োজকদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। শুরুতে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে অবাধে এ অবৈধ কর্মকা- এতো বিস্তৃত ও দীর্ঘ দিন চলতে পারত না। ইতোপূর্বে ছেঁটে ফেলা হয়েছে ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতাকে। তাদের বিরুদ্ধে এখন জানা যাচ্ছে অনেক অভিযোগ। রাজধানীর জুয়ার বাজারটি এখন বিশাল বড়। প্রতি রাতে সব মিলিয়ে ঢাকার জুয়ার আসরে লেনদেন হয় শত কোটি টাকা। ক্যাসিনো জুয়ার বোর্ড যেনো টাকার খনি। এসব খনিগুলো স্থানীয় থানা পুলিশই প্রহরায় মহাসমারোহে চলতো। দক্ষ দেশী-বিদেশী নারী-পুরুষকে ভাড়ায় এনে আধুনিক যন্ত্রপাতি ও উপকরণসজ্জিত থাকতো ক্যাসিনো নামক জুয়ার বোর্ডগুলো। আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের কতিপয় নেতা-কর্মী এসব ক্যাসিনো পরিচালনা করতেন। এই টাকার খনিগুলো থেকে কোটি কোটি টাকা নেতারা পকেটস্থ করতো। ইতোমধ্যে রাজধানীর কয়েকটি ক্যাসিনোতে অভিযান চালিয়ে মাদক ও অস্ত্রসহ আটক হয় যুবলীগের শীর্ষস্থানীয় নেতাকে।
ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন বা যুব সংগঠনের শীর্ষ ২/৪ জন নেতাই শুধু দুর্নীতি করছেন ব্যাপারটি এমন নয়। লাখ লাখ টাকা দিয়ে সংগঠনগুলোর পদ কেনার খবর নতুন কিছু নয়। পরবর্তীতে ওই পদ ব্যবহার করে অর্থ কামাবেন এটাই স্বাভাবিক। এখন এক-দু’জনকে আলাদা করে বলির পাঁঠা বানিয়ে, পরবর্তীতে ক্লাব ও ক্যাসিনোগুলো হাত বদল হয়ে আগের অবস্থায় যেনো ফিরে না যায়। এসব জুয়ার বাজারের বিস্তৃতি এক দিনে হয়নি। তবে বস্তি পুড়িয়ে যেমন দখলের হাত বদল হয়। তেমনি ক্ষমতাসীনদের দৃষ্টিভঙ্গির কারণে এখন এটি মহা অন্যায় হয়ে গেছে; আগে সব ঠিক ছিল; সামনে আবার আগের মতোই মহাসমারোহে চলবে; এমনটি যেনো না হয়। বাংলাদেশে অনিয়ম-দুর্নীতির যে বিস্তার তা কেবল জুয়ার আসর জমিয়ে হচ্ছে এমন নয়। দুর্নীতি-অনিয়মের এমন আরো শত শত খাত রয়েছে।
একটি বিষয় লক্ষণীয়, প্রধানমন্ত্রী কথা না বলা পর্যন্ত কোনো অপরাধের ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট দলীয় দায়িত্বপ্রাপ্তরা গা করেন না। সব ব্যাপারেই প্রধানমন্ত্রীকে কথা বলতে অথবা নির্দেশ দিতে হয়। যুবলীগের ক্যাসিনো সাম্রাজ্য একটা ওপেন-সিক্রেট ব্যাপার ছিল। গ্রেফতারকৃত খালেদ মাহমুদের বিরুদ্ধে ক্লাব পাড়ার ক্যাসিনো থেকে শুরু করে কমপক্ষে সাতটি সরকারি ভবনে ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ এবং সরকারি জমি দখলের মতো নানা অভিযোগ শোনা যাচ্ছিল বহুদিন থেকেই। একজন প্রধানমন্ত্রী দেশের কয়টি বিষয়ে দেখবেন। এটা বাস্তবে সম্ভবও নয়। অনিয়ম, দুর্নীতি ও অনৈতিক কাজের বিরুদ্ধে এমন অবস্থান গ্রহণ ইতিবাচক। অন্যায়, অনিয়ম, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সব সময় সরকারের একই অবস্থান থাকা উচিত বলে আমরা মনে করি।