রেলে একটার পর একটা প্রকল্প নেয়া হলেও যাত্রীসেবা যেমন বাড়েনি, রেল মন্ত্রণালয়ের উদাসীনতা ও যথাযথ তদারকির অভাবে তেমনি লোকসানও কমেনি। বিভিন্ন প্রকল্প বিলম্বে বাস্তবায়নে ব্যয় বহুগুণ বাড়িয়ে লুটপাটের অভিযোগেরও অন্ত নেই। বর্তমানে রেলের ৩৮টি উন্নয়ন প্রকল্প খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে কচ্ছপ গতিতে চলছে। এসব প্রকল্পে বাসা বেঁধেছে অনিয়ম-দুর্নীতি। কয়েকটি প্রকল্পের ব্যয় ১০ গুণেরও বেশি বেড়েছে। ৩৮টি প্রকল্পের মধ্যে মেগা ১২ প্রকল্পের অগ্রগতি মাত্র ২১ শতাংশ। বাকি প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি ২৩ শতাংশেরও কম। এসব প্রকল্পের মোট ব্যয় ১ লাখ ৩৪ হাজার ৭৬৭ কোটি ৮১ লাখ ৫২ হাজার টাকা। এ পর্যন্ত ১২ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটি প্রকল্পের ব্যয় ২৩ হাজার ৪৬৪ কোটি টাকা বেড়েছে। এসব প্রকল্পের কোনোটি প্রায় ১০ বছর ধরে চলছে।
শুধু বিনিয়োগ বা ব্যায় বাড়ালেই কোনো প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি হয় না। যথাযথ সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্টদের দক্ষতা অর্জনের সাথে বাড়াতে হয় তদারকিও। প্রকল্প বাস্তবায়নের এমন দুরবস্থার আড়ালে পোয়াবারো কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের। বছরের পর বছর প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্ব পালন করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার সাথে, থাকছে সরকারি খরচে একাধিক দেশ ভ্রমণের সুযোগও। ১২ মেগা প্রকল্পে চলতি অর্থবছরের আগস্ট পর্যন্ত (দুই মাসে) এডিপি বরাদ্দের মাত্র ১ দশমিক ১৭ শতাংশ অর্থ খরচ হয়েছে। আগামী ১০ মাসের মধ্যে ৯২ দশমিক ৬০ শতাংশ অর্থ খরচ করতে হবে। সম্প্রতি এক উন্নয়ন বৈঠকে রেলপথমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন কঠোর হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘প্রকল্পের ধীরগতি আর সহ্য করা হবে না’।
প্রশ্ন হলো, গত ৯ বছরে প্রায় অর্ধ লাখ কোটি টাকা বিনিয়োগের পরও রেলে কেন লোকসানি? লাভ দূরে থাক, পরিচালন ব্যয়ই উঠছে না। গত অর্থবছরে শুধু পরিচালন খাতেই লোকসান ১ হাজার ২২৬ কোটি টাকা। অথচ প্রতিবেশী ভারত ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে রেলে আয় করেছে ১ লাখ ৬৫ হাজার কোটি রুপি। পণ্য পরিবহনে মুনাফা করেছে ৫৪ হাজার কোটি রুপি। যাত্রী পরিবহনে পৃথিবীর অধিকাংশ দেশ লাভের বড় অংশ ভর্তুকি দিয়ে থাকে। লোকসান পুষিয়ে নেয় পণ্য পরিবহন থেকে। কিন্তু বাংলাদেশে রেলে পণ্য পরিবহন কমছে বছর বছর।
প্রকল্পের পরিচালকদের যথাযথ জবাবদিহিতার অভাব এবং অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ থাকায় পুরো রেলেই গতি আসছে না বলে আমরা মনে করি। এ অবস্থায় বাস্তবায়নকারী সংস্থার জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ, সমস্যা চিহ্নিতকরণ ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদানসহ প্রকল্পগুলোকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে আনতে হবে সরকারকে।