রাজধানীর ফুটপাতগুলোর বেশিরভাগই বেদখল হওয়া। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা ভবনের সামনের অংশটুকু দখল করে রাখা হয়। পার্কিং বা অন্যান্য কাজে এই জায়গাগুলো ব্যবহার করা হয়। তাছাড়া সারা ঢাকা জুড়ে ফুটপাতে অস্থায়ী দোকান বসে। দখলের অবস্থা এমন ভয়াবহ যে স্বল্প দূরত্বের পথে হাঁটার জন্য ফুটপাত থাকলেও সেগুলোতে পা রাখাই যায় না। আবার কোনো কোনো জায়গায় যানজট বেশি দেখা দিলে ফুটপাতে বাইসাইকেল বা মোটর সাইকেলও চালানো হয়।
ফুটপাত দখলমুক্ত করতে দুই সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু দেখা যায় উচ্ছেদের দিনটি পার না হতেই আবার দখল হয়ে যায়। সকালে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হলে বিকেলে আবার পসরা সাজিয়ে বসে অস্থায়ী ব্যবসায়ীরা।
এর আগে রাজধানীর অতিব্যস্ত এলাকা গুলিস্তান-পল্টনে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছিল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। তখন কয়েকদিন এসব রাস্তা দিয়ে চলাচলকারীরা কিছুটা স্বস্তি পেয়েছিলেন। কিন্তু তখন হকাররা আন্দোলন শুরু করেছিল। তাদের পুনর্বাসনের দাবিতে চলা বিক্ষোভে পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল। পরর্তীতে তারা আবার ফুটপাত দখল করে, যা এখনও দখলকৃত অবস্থাতেই রয়েছে।
এরইমধ্যে
ফুটপাত ও সড়ক থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। অভিযানের প্রথমদিনই উত্তরায় প্রায় তিন শতাধিক অস্থায়ী দোকান, শেড ও সিঁড়ি উচ্ছেদ করে জনগণের চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। অভিযানকালে সরকারি কাজে বাধা দেয়ায় একজনকে তিন মাসের কারাদ-, অবৈধভাবে ফুটপাত দখল করে ব্যবসা করায় এক জনকে সাত দিনের কারাদ- এবং দুটি প্রতিষ্ঠানকে তিন লাখ টাকা জরিমানাও করা হয়।
ফুটপাত ও সড়ক অবৈধ স্থাপনা বা দখলমুক্ত করতে সিটি করপোরেশনগুলো মাঝেমাঝে এরকম উদ্যোগ নিলেও তা পর্যাপ্ত নয়। আমরা চাই না উত্তর সিটি করপোরেশনে উচ্ছেদ অভিযান চালানোর পর যেভাবে পুনরায় দখল হয়েছে দক্ষিণে সেটি হোক।
সড়ক ও ফুটপাত দখল করার পেছনে একটি প্রভাবশালী চক্র কাজ করে। যারা টাকার বিনিময়ে অস্থায়ী দোকান বসানোর ব্যাবস্থা করে দেন। এছাড়া দখল করে গড়ে ওঠা দোকানগুলোতে পুলিশের চাঁদা তোলার বিষয়টিও গোপন নয়।
বলা হয়ে থাকে, ঢাকার রাস্তায় যানজটের জন্য বড় একটি কারণ সড়ক ও ফুটপাত দখল। মানুষ ফুটপাতে হাঁটার জায়গা না পেয়ে রাস্তায় নেমে পড়ে, এছাড়া রাস্তা দখল করে রাখা ও পার্কিংয়ের কারণে রাজধানীর অপ্রশস্ত রাস্তাগুলো আরও সরু হয়ে পড়ে -এতে গাড়ি চলাচলের জায়গা কমে গিয়ে শুরু হয় যানজট।
রাজধানীকে যানজটমুক্ত ও পথচারীদের চলাচল স্বস্তিদায়ক করতে দখল বন্ধ করার বিকল্প নেই। তাই এই কার্যক্রমকে জোরালো এবং নিয়মিত করতে হবে। একদিন উচ্ছেদ অভিযান চালানোর পর সে জায়গাটি নিয়মিত পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে যাতে পুনরায় দখল হতে না পারে। এছাড়া শুধু অভিযান চালালে হবে না, দখলের পেছনে সুবিধাভোগী চক্রকে চিহ্নিত করে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে এবং ফুটপাতে ব্যবসা করে যাদের জীবন চলে তাদের পুনর্বাসনেরও চিন্তা করতে হবে।