এক সময় যে নদী চলত গহনার নৌকা, ইঞ্জিন চালিত টলার এবং ছোট বড় মাঝারী নৌকা সেটি কালের পরিবর্তে যুগে যুগে পলি পড়ে এবং অবৈধ দখলদারদের রাহু গ্রাস থেকে রক্ষা পায়নি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বুক চিরে প্রবাহিত চিত্রা নামক নদীটি। স্বাধীনতা যুদ্ধের আগে ও পরে চিত্রা নদীর অথৈ পানিতে ভাসতো বড় বড় গহনার নৌকা সব ছোট বড় সব ধরণের নৌযান। খুলনা, মোঙলা, নওয়াপাড়া প্রভৃতি এলাকা থেকে বড় বড় ব্যবসায়ীরা নৌপথে মালামাল এনে ভিড়তো কালীগঞ্জের কালীবাড়ীর ঘাটে। কিন্তু নানান কারণে সেই চিত্রানদী এখন মৃত প্রায়।
আশির দশকে তৎকালীন রাষ্ট্র প্রধান জিয়াউর রহমান অতি চেনাজানা চিত্রা নদীর যে অংশে নিজ হাতে কোদাল ধরে মাটি কেটে নদী ষংস্কার প্রকল্পের উদ্বোধন করেছিল সেখানে এখন বড় বড় দালাল কোটা, বাড়ীঘর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও অফিস গড়ে উঠেছে। একসময় কতোই না জৌলুস ছিল এই চিত্রা নদীর। বর্তমানে নদীটির দু’পাড় দখলদাররা মাটি ভরাট করে অবৈধ অবকাঠামো নির্মাণ করে গ্রাস করে খাচ্ছে। এখন আর বোঝার উপায় নেই এটি ছিল চিত্রা নদী। বর্তমানের ঢাকালে পাড়ার অবেধ অংশছিল চিত্রা নদী। জানা যায়, পৌর সভার ফয়লা গ্রাম এলাকার পুরাতন ব্রীজ হতে নতুন ব্রীজ পর্যন্ত নদীর দক্ষিণ পাড়ের ৩/৪ একর জমি ভূয়া কাগজপত্র মূলে নিজের নামে নিয়ে সেই ১৯৮২-৮৩ সাল থেকে ২ কাঠা, ৫কাঠা, ১০ কাঠা হিসেবে বহিরাগতদের কাছে বিক্রি করে দেয়। ফলে অতি চেনাজানা চিত্রা নদী এখন খালে পরিণত হয়ে গেছে। সরকারী ভাবে ভূমি মন্ত্রনালয়ের কর্তব্যক্তিরা এমনকি জেলা ও উপজেলা প্রশাসন এবং জন প্রতিনিধিরা অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করে নদীটি পুনঃ খননের বারবার প্রতিশ্রুতি দিলেও আজো কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
মান্দারতার আমল থেকে চিত্রার দু’পাড়ে নিজস্ব জমিতে বসবাসকারী কয়েকজন ক্ষোভ প্রকাশ করে বললেন, সরকারী প্রশাস যন্ত্রের এক শ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সাথে যোগাসাজম করে ভূমি খাদকরা অনেকেই চিত্রার দুই পাড়ে মাটি ভরাট করে দখল করে নেওয়ায় নদীটি সংকুচিত হয়ে ছোট খালে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে ভরা বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির পানির দেখা না মেলায় চিত্রা নদী নামক খালটি এখন প্রায় পানি শূন্য। নদীজুড়ে কচুড়ি পনায় আটকে গেছে। কচুড়িপনার নীচেয় সামান্য ২/৩ ফুট পানি খাকলেও তা পচে চারিপাশে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এতে নদীপাড় এলাকার পরিবেশ দুষিত হচ্ছে। জন্ম নিচ্ছে নানা প্রজাতির সাপ, মশা মাছি সহ পোকামাকড়।
কালীগঞ্জ বাসীর দাবি চিত্রা নামক নদীটি খাল থেকে নদীতে পরিণত করতে হলে স্থানীয় জাতীয় সংসদ সদস্য জেলা প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উচিত হবে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করে পুনঃখননের মাধ্যমে পানির প্রবাহ নিশ্চিত করা। এ ছাড়া ভূয়া কাগজপত্রের মাধ্যমে যারা নদীর সম্পত্তি দখল করেছে এবং কাগজপত্র প্রদানে সহায়তা করেছে তাদের আইনের আওতায় আনা। যাতে ভবিষ্যতে আর কত এ ধরণের বেআইনী কাজ করতে না পারে।