বিশ্বের একমাত্র দেশ বাংলাদেশ। যেখানে পড়ালেখা করতে এসে, মারামারি শিখে, চাঁদাবাজি, খুন করা, সন্ত্রাসী হওয়া শিখে, ধর্ষণের সেঞ্চুরি উৎযাপন করতে পারে! দেশকে নিয়ে, আমাদের প্রজন্মকে নিয়ে এসব খবর শুনতে কারোরই ভালো লাগতে পারে না। বরাবরই ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের সদস্যরা যখন যারা ক্ষমতায় ছিলেন ওয়ানওয়ে রুটে চলেছেন। কেউ কারো ছায়াও সহ্য করেননি। অত্যন্ত দুঃখের সাথে, বেদনার সাথে বলতে হয়, বাংলাদেশের শিক্ষা তথা উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো কি উপরের বিষয়গুলোর তৈরির কারখানা? উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে শিক্ষা লাভ করেও যখন পরস্পর সহাবস্থান, সহমর্মীতা, সহানুভূতি, ভালোবাসা, নৈতিকতা শিখতে পারলো না, তখন এরা চাকুরি, রাজনীতি বা পবিত্র সংসদে গিয়ে কি করবে? ইউরোপ কেন, আমাদের এশিয়া মহাদেশের অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন দাঙ্গা-হাঙ্গামার রেকর্ড আছে কী?
গত ২৩ সেপ্টেম্বর ছাত্রদলের নব নির্বাচিত সভাপতি ফজলুর রহমান শ্যামলের নেতৃত্বে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা তাদের রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য রাজনীতির আতুরঘর খ্যাত ঢাবির মধুর ক্যান্টিনে গেলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হামলা করে। এতে ছাত্রদলের ৭-৮ জন গুরুতর জখমসহ ৩০-৪০ জন আহত হয়। এ সময় পেশাগত দায়িত্বপালনকালে ৩ সাংবাদিককে মারধর ও মোবাইল কেড়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী সাংবাদিকরা হলেন, স্টুডেন্ট জার্নালের আনিছুর রহমান, বিজনেস বাংলাদেশের আফসার মুন্না ও প্রতিদিনের সংবাদের রাহাতুল ইসলাম।
ঘটনার পর ঢাবির সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে গিয়ে ক্ষমা চেয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন। তবে তারা সাংবাদিকের উপর হামলার বিষয়টি অস্বীকার করেন। তাহলে সাংবাদিকরা আহত হলেন এমনিতেই। তাদের মোবাইলই গেলো কোথায়? ছাত্রদলতো সেখানে লাঠি-সোটা নিয়ে যায়নি। মারামারি করার মতো শক্তি সাহস যে তাদের নেই, তা ছাত্রলীগও জানে, বুঝে। তাহলে সাংবাদিকসহ ছাত্রদলের উপর রড, লাঠিসোঁটা নিয়ে কাপুরুষিতভাবে এরকম ঝাপিয়ে পড়া কেনো?
যে দেশে ছাত্ররাজনীতির একটা উজ্জল ভূমিকা ছিলো, ছিলো গৌরবোজ্জল অতীত। সে দেশে ছাত্ররাজনীতির বর্তমান যে অবস্থা তা সত্যিই দুঃখজনক। শিক্ষকরা নানা দলে, রঙে বিভক্ত হয়ে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে লিপ্ত। অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের কল্যাণে বর্তমানে ছাত্র রাজনীতির কোনো ভূমিকা নেই। ছাত্র রাজনীতি আর শিক্ষক রাজনীতি আমাদের উচ্চ শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। যার প্রমাণ সম্প্রতি লন্ডনভিত্তিক শিক্ষাবিষয়ক সাময়িকী ‘টাইমস হায়ার এডুকেশন’ বিশ্বের বিশ্ব্যবিদ্যালয়গুলোর যে র্যাংকিং প্রকাশ করে তাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান এক হাজারের পর।
শিক্ষাই জাতির মেরুদ- এই আপ্তবাক্য এখন অসার হতে বসেছে। মানসম্পন্ন শিক্ষা না থাকলে মেরুদ- বেঁকে যাবে, পুরো জাতি মুখ থুবড়ে পড়বে। উচ্চশিক্ষার বিপর্যয় সামলে উঠতে না পারার মাশুল গুনতে হবে প্রজন্মের পর প্রজন্মের। দেশের বোদ্ধামহলের প্রশ্ন? ছাত্র রাজনীতি কি সততার ধারায় আর ফিরে আসবে কখনো?