তিনটি জিনিস কারও অপেক্ষায় বসে থাকে না ১. সময় ২.সুযোগ ৩. সমুদ্র ¯্রােত। মানুষের জীবনের সোনালী অধ্যায় হলো তারুণ্যের সময় সীমা। শৈশব. কৈশোর, যৌবন ও বার্ধক্য সাধারণত এ চারটা পর্ব নিয়ে একজন মানুষের জীবন। জীবনের সব চেয়ে সুন্দরতম সময় হলো যৌবনকাল বা তারুণ্যের পর্ব। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় যে বাবা-মা জীবনের সোনালী সময়টুকু তার নিজ সন্তাদের সুখের জন্য ব্যয় করলেন, আজ সেই অতিমানবী, অতিস্নেহময়ী, মমতাময়ী, বাবা-মা-ই প্রবীণ বয়সে এসে তারা নিজেরাই অসহায়ত্ত ও আশ্রয়হীন হয়ে পড়ছেন। বাংলাদেশের ৯০% লোক মুসলমান, আর আমাদের সৃষ্টির্কতা মহান আল্লাহতায়ালার পরে যার স্থান দিয়েছেন তাহলো আমাদের মা ও বাবা। আজ সেই মাতা-পিতা প্রবীণ হলেই বৃদ্ধাশ্রমে থাকবে, এটা সত্যি কষ্টকর ও লজ্জাজনক। জাতীয় সংসদে সন্তানের ওপর তার পিতা-মাতার ভরণপোষণ বাধ্যতামূলক করে এবং ভরণপোষণের ব্যবস্থা না করলে দুই লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে সর্বোচ্চ ছয় মাসের জেলের বিধান করে একটি বিল পাস হয়েছে। বিল অনুযায়ী পিতা-মাতা আলাদাভাবে বসবাস করলে তাদের সন্তানের আয়ের ১০ শতাংশ নিয়মিতভাবে দিতে হবে। পিতা-মাতার একাধিক সন্তান থাকলে এ বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করে ভরণপোষণ করতে হবে। পিতা-মাতার ভরণপোষণ সংক্রান্ত আইনে উল্লিখিত অপরাধ জামিন অযোগ্য; তবে আপসযোগ্য। বিলে বলা হয়েছে, প্রত্যেক সন্তানকে পিতা-মাতাকে একই সঙ্গে, একই স্থানে বসবাস নিশ্চিত করতে হবে। কোনো সন্তান তার পিতা বা মাতাকে বা উভয়কে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে বৃদ্ধনিবাস বা অন্য কোথাও বা আদালাভাবে বসবাস করতে বাধ্য করতে পারবে না। প্রত্যেক সন্তান তার পিতা-মাতার স্বাস্থ্য সম্পর্কে নিয়মিত খোঁজ-খবর রাখবে। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা ও পরিচর্যা করবে। তারা পৃথকভাবে বসবাস করলে সন্তানদের নিয়মিত সাক্ষাৎ করতে হবে। বাবা মার জন্য আইন ও বৃদ্ধাশ্রমের অস্তিত্ব প্রমাণ করে আমাদের দেশের বয়স্করা কোনো না কোনো ভাবে অবহেলিত, নিগৃহীত, উপেক্ষিত ও বঞ্চিত হচ্ছেন তাদের পরিবারে। কিছু প্রবীণ পিতা-মাতা সন্তানদের কাছে যেনো হচ্ছেন বোঝা। সন্তানদের অবহেলা, বঞ্চনা, লাঞ্ছনা তাদের সঙ্গী হয় নিত্য দিনের। তারা নিরুপায় তাদের কিছু করার বা বলার থাকে না। কেননা তারা প্রবীণ। তারা শুধু দীর্ঘশ্বাস ফেলে সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করে কখন যে তার শেষ নিঃশ্বাস আসবে। আমি মনে করি, যে সন্তানরা বাবা-মাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠায় তাদের ধর্মীয় শিক্ষার অভাব আছে পুরোপুরি। এবং এর মূল কারণ সন্তানরা জানে না বাবা মার প্রতি তাদের কর্তব্য কী বা দায়িত্ব কতটুকু ? আর এ সর্ম্পকে তাদের যথাযথ নৈতিক ও ধর্মীয় জ্ঞানের অভাবই এর মূল কারণ। আমি মনে করি, নৈতিক শিক্ষাহীনতার কারণে প্রবীণ বাবা-মা'র আজ এই অবস্থা।
কেননা লেখাপড়া শেষ করে একজন শিক্ষার্থী উপার্জনের এক মেশিন তৈরি হয়। যার মধ্যে থাকে না মানবিক ও নৈতিক গুণাবলি ও মূল্যবোধ জাগ্রত না হয়ে ধীরে ধীরে চাপা পড়ে যায় নিজ স্বার্থের আড়ালে। তাই আমি মনেকরি, সব সন্তানকেই শিশুকাল থেকে নিজ নিজ ধর্ম শিক্ষা দেয়া উচিৎ। আমাদের দেশে আইন থাকলেও প্রবীণ বাবা-মা আইনের সহায়তা নিতে চান না। কারণ, লজ্জা, ভয় ইত্যাদি। আইন আর ফাইন দিয়ে এটা রোধ যাবেনা। প্রত্যেক সন্তানকে বুঝতে হবে যে বাবা মা'র শেষ রক্তবিন্দু ঝরেছে (আমাদের) সন্তানদের মঙ্গল কামনায়। প্রশ্নাতীতভাবে তাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।