বাংলাদেশে বৈধভাবে ক্যাসিনো থাকবে কি থাকবে না, এ বিষয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের দু’জন ব্যক্তি দু’রকমের কথা বলেছেন। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মহিবুল হক বলেছেন, এক্সক্লুসিভ ট্যুরিস্ট জোনে বিদেশিদের জন্য ক্যাসিনো থাকবে আর অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলছেন, ক্যাসিনো হচ্ছে জুয়া, জুয়া সম্পূর্ণ অবৈধ। আমাদের দেশে কোনো প্রকারে কোনোভাবেই জুয়া চলে না। তাই ক্যাসিনোও চলতে পারে না। অবৈধ কাজ সরকার আইন করেও বৈধ করবে না। আবার অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ক্যাসিনো সরঞ্জামের কিছুকিছু নিজস্ব নাম দিয়েই আমদানি করা হয়েছে। আবার এসব জিনিস আমদানি করা আইন অনুযায়ী অবৈধও নয়। আবার সচিব বলেছেন যে, বিদেশিদের আকৃষ্ট করতে কক্সবাজারে ক্যাসিনো করা হবে। এ ব্যাপারে ব্যাপারে মন্ত্রী বলেছেন, দেশের বাইরে যে নিয়ম-কানুন আছে সেগুলোতো আমাদের দেশে চলবে না।
সচিব ক্যাসিনোর পক্ষে যেসব যুক্তি দিয়েছেন তা বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের জন্য ইতিবাচক দিকগুলো তুলে ধরে। অন্যদিকে মন্ত্রী আইনের বাধ্যবাধকতার কথাটি সামনে নিয়ে এসছেন। এখন কথা হচ্ছে, সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দু’জন ব্যক্তির কাছে দু’রকমের বক্তব্যে জনমনে দ্বিধা তৈরি হয়। এছাড়া ক্যাসিনো নিয়ে চলমান অভিযানে যারা আটক হচ্ছে তাদের বিচারকাজেও বাধা তৈরি হতে পারে।
এর আগে জাতীয় সংসদে সরকারি দলের হুইপ সামশুল হক চৌধুরী ক্লাবে জুয়া খেলার বিষয়ে প্রকাশ্যে সমর্থন দিয়েছেন। তার মত হচ্ছে, ক্লাবগুলোতে যারা জুয়া খেলতে যায় তারা যে অনুদান দেয় তাতে ক্লাবগুলো চলে এবং খেলাধুলার জন্য আনুষঙ্গিক ব্যয় মেটানো হয়। এটি বন্ধ হয়ে গেলে যুবকরা চুরি ছিনতাই করবে। তার এ কথা সমর্থনযোগ্য নয়। ক্রীড়া ও সংস্কৃতি খাতে সরকারের বরাদ্দ কম নয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় সংশ্লিষ্টদের আন্তরিকতা না থাকা এবং অনিয়মই খেলাধুলার বর্তমান দুর্দশার জন্য দায়ী। তবে, হুইপের বিরুদ্ধে জুয়া খেলা থেকে ৫ বছরে ১৮০ কোটি টাকা আয়ের অভিযোগ তুলেছেন পুলিশের একজন কর্মকর্তা। তাই ক্যাসিনো নিয়ে তার সাফাই গাওয়ার বিষয়টি সরকারের বক্তব্য হিসেবে নেওয়া যায় না।
কিন্তু পর্যটন সচিব ও অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য আমলে নেওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। বাংলাদেশে জুয়ার বিরুদ্ধে আইন থাকলেও ক্যাসিনো চালানো নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো আইন নেই। পর্যটন সচিবের মতে টুরিস্ট জোনের বিদেশিদের সুযোগ-সুবিধা দিয়ে ক্যাসিনোতে খেলার সুযোগ করে দিলে দেশের জন্য তা কী সুফল বয়ে আনতে হবে সেটিও ভেবে দেখতে হবে। বিদেশিদের পাশাপাশি সেখানে বাংলাদেশের নাগরিকরা যে খেলতে যাবে না বা তাদের সংশ্লিষ্টতাকে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে তারও নিশ্চয়তা নেই। অন্যদিকে অর্থমন্ত্রী ক্যাসিনোর কিছু সরঞ্জাম আমদানির ক্ষেত্রে আইগত বৈধতার কথা বলেছেন। যদি আমদানি বৈধ হয়ে থাকে তাহলে এগুলোর ব্যবহার স্বভাবতই বৈধ হওয়ার কথা।
দেশে ক্যাসিনো থাকবে কি থাকবে না, এই বিষয়টি সংবাদমাধ্যমে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে উপস্থাপন না করে সরকারের উচিৎ এবিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্তে পৌঁছে বিভ্রন্তি দূর করা।