বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এখন কথা একটাই দেশনেত্রীকে মুক্তিদিন, সংসদ বাতিল করুন, পার্লামেন্ট ভেঙ্গে অবিলম্বে পদত্যাগ করে একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধিনে নির্বাচন দিন। যে নির্বাচনে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে। দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা যদি খালেদা জিয়ার মুক্তি চান, তাহলে এখন থেকে ঐক্যবদ্ধ ভাবে আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত হন। আন্দোলনের মাধ্যমে এই জালেম সরকারকে সরিয়ে জনগনের সরকার প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে নগরীর রেলওয়ে কৃষ্ণচূড়া চত্বরে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আয়োজিত ময়মনসিংহ বিভাগীয় মহাসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আ.লীগ সরকার লুটপাট করে সব টাকা সুইস ব্যাংকে পাঠিয়ে দিয়েছে এবং গত কয়েক বছরে বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি টাকা সেখানে জমা হয়েছে। এই টাকা কারা পাঠিয়েছে, ক্ষমতায় কারা, কারা আজকে ক্যাসিনো বলেন আর মেগা প্রজেক্ট বলেন, সবখানেই লুটপাট চলছে। ক্যাসিনো থেকে যাদের আটক করা হয়েছে সবাই যুবলীগের নেতা। তারা বলছে যারা ধরা পড়েছে তারা সবাই নাকি বিএনপির নেতা। আপনারা তো ১২বছর ক্ষমতায়। তাহলে এতদিন কি আঙুল চুষছেন।
মির্জা ফখরুল আরো বলেন, গণতন্ত্রের জন্য বেগম খালেদা জিয়া তার ছোট ছেলে কোকোকে হারিয়েছেন, বড় ছেলে লন্ডনে অবস্থান করছেন। তার বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। তিনি গণতন্ত্রের সংগ্রামের জন্য ১৮ মাস ধরে কারাগারে আবদ্ধ হয়ে আছেন। গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য আজকের এই বিভাগীয় মহাসমাবেশ বাধাগ্রস্ত করতে প্রশাসন বৃস্পতিবার সকাল ১১ টায় সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে। এরপরও গণতন্ত্রের মুক্তির জন্যে খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্যে লাখো মানুষের সমাগম হয়েছে। কিন্তু আমাদের লক্ষ্য জনসমাগম নয়, এই ফ্যাসিস্ট সরকার, এক নায়কতন্ত্রের সরকারকে জানিয়ে দেয়া, দেশনেত্রীর মুক্তি চায়। তিনি বলেন, জনগনের একবার আস্থা চলে গেলে সেই আস্থা আর ফিরে আসে না। তিনি বলেন, এই সমাবেশকে কেন্দ্র করে যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের মুৃক্তির দাবি করেন এবং বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ সারাদেশের হাজার হাজার নেতাকর্মীর নামে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান।
বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী ড. খন্দকার মোশারফ হোসেন বলেছেন, এই সরকারের দূ:শাসন, দূর্নীতি, লুটপাট আর কমিশনের কারণে ব্যাংকগুলো দেউলিয়া হয়ে পড়েছে। দেশের অর্থনীতি ভেঙ্গে পড়েছে। এই সরকার ট্যোক্স তিনগুন বৃদ্ধি করেছে। কিন্তু সরকারের হাতে কোনো টাকা নাই।
বর্তমান সরকারের নানা কর্মকা-ে সমালোচনা করে সাবেক মন্ত্রী মীর্জা আব্বাস বলেছেন, এখন থেকে যেখানে বাঁধা আসবে, সেখানেই প্রতিরোধ গড়ে তুলতে দলীয় নেতাকর্মীদের আহবান জানান। ক্যাসিনোর কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই সরকার লুন্ঠনের সরকার, চুরির সরকার। এখন তারা মশার ঔষধও চুরি করে।
সাবেক মন্ত্রী গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, এখন থেকেই কোনো বাঁধা বাঁধা নয়। বাঁধা দিলে বাঁধবে লড়াই। তিনি সরকারের চাকুরিজীবিদের উদ্দেশ্যে বলেন, জনগনের মুখোমুখি দাঁড়াবার চেষ্ঠা করবেন না। সুযোগ পেলে জনগনের পাশেন থাকেন।
স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, এই সমাবেশ আন্দোলনের প্রস্তুতি মাত্র। এখান থেকেই আমাদের সরকার পতনের আন্দোলন শুরু করে তা সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে হবে।
ময়মনসিংহ (দক্ষিণ) জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক এ কে এম শফিকুল ইসলাম সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আবু ওয়াহাব আকন্দ ও উত্তর জেলা বিএনপি’র যুগ্ম-আহবায়ক মোতাহার হোসেন তালুকদারের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী ড. খন্দকার মোশারফ হোসেন, সাবেক মন্ত্রী মীর্জা আব্বাস, সাবেক মন্ত্রী গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, উপদেষ্টা ফজলুর রহমান, যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ও খায়রুল কবির খোকন, ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুর রহমান মিলন, ময়মনসিংহ বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, ফরিদপুর বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক শ্যামা ওবায়েদ, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ওয়ারেছ আলী মামুন, কামরুজ্জামান রতন, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক আবদুল বারেক গনি, কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুল্লাহ ফারুক, কৃষিবিদ শামুসুল আলম তোফা, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ডা. মাহবুবুর রহমান লিটন, সাবেক এমপি বেগম নুরজাহান ইয়াসমিন, শাহ শহীদ সারোয়ার, যুবদল সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, আবদুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল, মাহমুদুল হক রুবেল, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদিকা সুলতানা আহমেদ প্রমুখ।
এদিকে মহাসমাবেশকে সাফল করতে ময়মনসিংহ বিভাগের চার জেলা (শেরপুর, জামালপুর, নেত্রকোনা ও ময়মনসিংহ) এবং কিশোরগঞ্জ ও টাঙ্গাইল জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে মহাসমাবেশে যোগদান করেন।