আজকাল পত্রিকা খুললেই যে খবরগুলো সবচেয়ে বেশি চোখে পরে তা হচ্ছে বিভিন্ন মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনার খবর। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষের মৃত্যু ঘটছে দেশের বিভিন্ন সড়কগুলোতে। একটি দুর্র্ঘটনা আজীবনের কান্না তা যেন অসচেতন অদক্ষ চালক এবং অসচেতন পথচারীদের কান পর্যন্ত পৌঁছায় না। প্রতিটি দুর্ঘটনা মর্মান্তিক এবং অনাক্সিক্ষত। যে বাবা-মা অকালেই হারায় তার সন্তানকে, স্ত্রী হারায় স্বামীকে, বোন হারায় ভাইকে, তাদের কষ্ট বোঝা কারো পক্ষে সম্ভব না। অকালেই হারায় একটি দরিদ্র পরিবার রোজগারের প্রধানকে। আর অনেকেই চিরদিনের মতো বরণ করে পঙ্গুত্ব। আমরা কী এ থেকে রেহাই পাব না কখনো? জাতিকে ভাবিয়ে তুলেছে এসব সড়ক দুর্ঘটনা। জানা যায়, বিভিন্ন মাধ্যমে বিশ্বে যেসব কারণে মানুষের মৃত্যু হয় তার মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনা হচ্ছে অষ্টম প্রধান কারণ,। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এক সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়, সড়কে নব্বই শতাংশই দুর্ঘটনা ঘটেছে নিম্ন এবং মধ্যম আয়ের দেশে। বিভিন্ন পত্রিকা বিভিন্ন সংগঠন পরিসংখ্যান দিয়েছে, সঠিক কোনটি তা জানা নেই, তবে প্রতিদিন যে হারে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে তা অতীতের পরিসংখ্যান বা জরিপ গন্ডি - পেড়িয়ে যাবে বলে মনে হয়। অনেক দুর্ঘটনা আছে যা খবরের কাগজে আসে না। সম্প্রতি বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনার হার আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েই চলেছে। মহাসড়ক থেকে আঞ্চলিক সড়কেও দুর্ঘটনায় অনেক মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে প্রতিদিন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মতে ম্যালেরিয়া, যক্ষ্মা, ও এইচআইভি রোগের মতো সড়ক দুর্ঘটনাকেও এখন মহামারি বলে আখ্যায়িত করা যায়, কারণ বিশ্বে প্রতিবছর ১৩ লাখের বেশি মানুষ মারা যাচ্ছে সড়ক দুর্ঘটনায়। এর এক-চতুর্থাংশের বেশি মানুষ মারা যাচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ায়। গত দুই দশকে দক্ষিণ এশিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনা বেড়ে তিন গুন হয়েছে। যা বাংলাদেশের জন্য খবই উদ্বেগের বিষয়। আরো বলা হয় সড়ক দুর্ঘটনার শিকার ৬৭ শতাংশ বাংলাদেশি, ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী। এ ছাড়া ৫ থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশু মৃত্যুর চতুর্থ প্রধান কারণ হচ্ছে সড়ক দুর্ঘটনা। প্রতিবেদন অনুযায়ী গত বছরে ৫ হাজার ৫১৪টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। এতে ৭ হাজার ২২১ জনের মৃত্যু হয়। সড়কে যাদের প্রাণ গেছে, তাদের মধ্যে ৭৮৭ জনই নারী। আর ৪৮৭ জন শিশু। এ ছাড়া সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে এক হাজার ২৫২ জন চালক ও শ্রমিক, ৮৮০ জন শিক্ষার্থী, ২৩১ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ১০৬ জন শিক্ষক এবং ৩৪ সাংবাদিক রয়েছেন।
এসব কারণে আন্তর্জাতিক মহল বাংলাদেশকে একটি দুর্ঘটনাপ্রবণ দেশ হিসাবে চিহ্নিত করেছে। আর এসব দুর্ঘটনার কারণ, চালকের অদক্ষতা, বেপরোয়া গতি, লাইসেন্স প্রদানে অনিয়ম, গাড়ির ফিটনেস না থাকা, সড়কের বেহাল দশা, সড়কে প্রয়োজনীয় সংকেতের অভাব, সড়কের তুলনায় গাড়ি বেশি, রাস্তার জ্যামিতিক ক্রটি, নেশাগ্রস্ত হয়ে গাড়ি চালানো, পথচারী ও যাত্রীদের অসাবধনতা ইত্যাদি। আমরা সবাই চাই আর যেন একটিও দুর্ঘটনা না হয়, সে জন্য আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে। প্রশাসনকে আরো দক্ষ করতে হবে এবং এই দুর্ঘটনা থেকে মুক্ত হতে করণীয় করতে দক্ষ চালককে গাড়ি চালানোর দেওয়া, হেল্পারদের লাইসেন্সের ব্যবস্থা করা। চালকের বয়স নির্ধারণ করে দেয়া। গাড়ি চালানোর সময় গল্প করা বা মোবাইলে কথা বলা গান শোনা ইত্যাদি বন্ধে আইন করা। হাইওয়ে ট্রাফিককে আরো শক্তিশালী করা। যেখানে সেখানে গাড়ি না থামানো, রাস্তার ওপর গাড়ি পার্কিং করতে না দেয়া, অযথা জ্যাম সৃষ্টি করতে না দেয়া। সচেতনমূলক প্রচার অভিযান পরিচালনা করা। কোনো প্রকার মিথ্যা বা দুর্নীতির আশ্রয় না দেয়া। হাইওয়ের ওপর বাজার বন্ধ করা। দ্রুতগামী গাড়ির জন্য আলাদা লেন করা। রাস্তার ওপরে গাড়ি থামিয়ে লোক উঠা-নামা বন্ধ করা। মাদক গ্রহণ করা চালকদের গাড়ি চালানো নিষিদ্ধ করা ইত্যাদি। অবশেষে আমি বলি, নিরাপদ সড়ক চাই কার্যক্রমকে আরো শক্তিশালী করে তোলা এখন আরো জরুরি। সরকারের একার পক্ষে সড়ক দুর্ঘটনা র্নিমূল করা কঠিন বা সম্ভব না। সবার সম্মিলিত প্রয়াসের মাধ্যমে সড়ক দুর্ঘটনা কঠিন হলেও নির্মূল করা অসম্ভব নয়। মুক্ত হোক এসব দুর্ঘটনা থেকে আমাদের দেশ, মুক্ত হোক সারা পৃথিবী। পথ যেন হয় শান্তির; অনাকাক্সিক্ষত মৃত্যু নয় আমাদের কারো কাম্য।