সমাজে শিক্ষিত লোকের মাধ্যমে অপরাধ বেশি হচ্ছে বলে সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে মন্তব্য করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তার মতে, ‘এমন কোনো অপরাধ নেই যা শিক্ষিত লোকের মাধ্যমে হচ্ছে না।’ শিক্ষিত লোকের মাধ্যমে অপরাধ বেশি হচ্ছে! এর অর্থ কি দাঁড়ালো! দেশকে কি অশিক্ষিত রাখাই শ্রেয়? তাহলে কি শিক্ষা বন্ধ করে দিতে হবে?
একথা ঠিক যে, দেশে সার্টিফিকেটধারী শিক্ষিতের অভাব নেই। কিন্তু অভাব রয়েছে নীতি-নৈতিকতাধারীদের! আসলে কতিপয় শিক্ষিতেরা যত বেশী জানে, তত কম মানে! মাননীয় আইনমন্ত্রী মহোদয়, খেয়াল করে দেখবেনÑ ক্রাইম, দুর্নীতি, অপরাধ বরাবরই ক্ষমতাকেন্দ্রীক। কারণ ক্ষমতায় যারাই আসীন হন তারা যখন দুর্নীতি, অপরাধ করেন, তাতে অন্যরা উৎসাহ ও প্রশ্রয় পায়। এজন্য অপরাধ বন্ধ করতে হলে সর্বাগ্রে ক্ষমতাকেন্দ্রীক দুর্নীতির চেইন ভাঙ্গতে হবে। আর এর জন্য দরকার আইনের শাসন। আইনমন্ত্রী হিসেবে আপনাকেই সেখানে বড় ভূমিকা রাখতে হবে।
ইতোপূর্বে স্বাধীনতার ৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষে মহান মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য বিভিন্ন দেশের বিশিষ্ট নাগরিকদের সম্মাননা স্মারক হিসেবে দেয়া ক্রেস্টে স্বর্ণ জালিয়াতি করা হয়েছিল। ৩৪৪টি ক্রেস্টে ৭ কোটি ৩ লাখ ৪৬ হাজার ২৮০ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। এতে প্রমাণ হয় সরকারি প্রশাসনের বিভিন্ন খাতে দুর্নীতি অপ্রতিরোধ্যভাবে বিস্তার লাভ করেছে।
একটি দেশে টুকিটাকি অন্যায়, অপরাধ ঘটতেই পারে। সর্বস্তরে দলীয়করণ বাদ দিয়ে, অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিলে সোনার বাংলাদেশ তৈরি হতে বেশি সময় লাগবে না বলে আমরা মনে করি। বলা হয় দরিদ্র্যের কারণে অনেকে দুর্নীতিগ্রস্ত হয়। বাস্তবে বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, রাষ্ট্রীয় উচ্চপদাধিকারী, শিক্ষিত, ব্যবসায়ী এবং অর্থনৈতিকভাবে প্রভাবশালীরাই অধিক দুর্নীতিগ্রস্ত। এই উচ্চবিত্ত ও শিক্ষিতদের দুর্নীতি দারিদ্র্য বৃদ্ধির সবচেয়ে বড় কারণ ও দুর্নীতি বিমোচনে প্রধান অন্তরায় তাতে সন্দেহ নেই।
আইনমন্ত্রী আরো বলেন, ‘সবচেয়ে বেশি উদ্বেগের বিষয়, শিক্ষিত লোকের মাধ্যমে অপরাধ বেশি হচ্ছে এবং এমন কোনো অপরাধ নেই যেটা শিক্ষিত লোকের মাধ্যমে ঘটছে না।’ সরকার ইতোপূর্বে হতদরিদ্রের জন্য ১০ টাকা কেজি দরে চাল দেয়ার কর্মসূচি নেয়। দুর্ভাগ্যের বিষয়, বিগত দিনগুলোতে এই কর্মসূচির যে চিত্র বেরিয়ে এসেছে তা চরম দুঃখ ও হতাশাজনক। শাসক দলের সমর্থক, সরকারী কর্মচারী, স্কুল-কলেজের শিক্ষকসহ স্থানীয় প্রভাবশালীদের অনেকেই এই চাল ভাগবাটোয়ারা করে খেয়েছে। নৈতিকতার অবক্ষয় কোন পর্যায়ে নেমে গেছে তা গবীর, দুঃখি, দুস্থ’, ভিখারী, অনাহারীদের চাল বিক্রির ঘটনা থেকে বুঝা যায়। যাতে বিবেকবান মানুষমাত্রই ঘৃণায় শিহরীত হয়েছে।
যে জাতি যত বেশি শিক্ষিত ও উন্নত, সে জাতির মধ্যে অপরাধ করার প্রবণতা তত কম। কিন্তু বাংলাদেশে উন্নয়নের গতি ও শিক্ষার হার বাড়লেও সামাজিক অপরাধ না কমার কারণ নিয়ে আমাদের এখনই ভাবতে হবে।