সম্প্রতি অন্যতম শীর্ষ ওষুধ প্রস্তুতকারী বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইন (জিএসকে) তাদের তৈরি রেনিটিডিন ট্যাবলেটে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী উপাদানের উপস্থিতির কারণে বিশ্ববাজার থেকে এটি তুলে নেওয়ার ঘোষণা দেয়। এ কারণে বাংলাদেশেও গ্যাস্ট্রিকের চিকিৎসায় বহুল প্রচলিত রেনিটিডিনের কাঁচামাল আমদানি, উৎপাদন ও বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর। এটি সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত।
আমাদের দেশে দেখা যায়, কোনও পণ্য নিষিদ্ধ হলে দীর্ঘদিন ধরে সেটি বাজারে পাওয়া যায়। অতীতে অনেকক্ষেত্রে এ বিষয়টি লক্ষ্য করা গেছে। জনস্বাস্থের জন্য ক্ষতিকর পণ্য নিষিদ্ধ করা হলেও বিভিন্ন দোকানে সেগুলো দেদারসে বিক্রি হয়। ব্যাপক প্রচারের অভাবে সাধারণ মানুষ সেগুলো সম্পর্কে জানতে পারে না এবং অনেকক্ষেত্রে দোকানদাররাও জানে না। একারণে এগুলোর বিক্রি চলতে থাকে। এর পেছনে দায়ী কর্তৃপক্ষের দূর্বল নজরদারি ও উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের অসাধু মনোভাব।
ওষুধ প্রশাসনের মহাপরিচালক বলেছেন, বাজারে সব ব্যবসায়ীর উদ্যোগেই বিভিন্ন নামে থাকা রেনিটিডিন জাতীয়ওষুধগুলো প্রত্যাহার করা হবে। বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির নেতারা জনস্বার্থেই বাজার থেকে রেনিটিডিন প্রত্যাহার, কাঁচামাল আমদানি ও উৎপাদন না করার বিষয়ে রাজি হয়েছেন। বিষয়টি ইতিবাচক ও আমরা এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানাই। কিন্তু নজর রাখতে হবে যেন কৌশলগত ত্রুটির কারণে সমগ্র প্রক্রিয়া ভেস্তে না যায়।
আমরা দেখেছি চিকিৎসকের পরামর্শ বা প্রেসক্রিপশন ছাড়া এন্টিবায়োটিক বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও এদেশে অবাধে তা বিক্রি হয়। মানুষ ইচ্ছেমত এন্টিবায়োটিক সেবন করছে, এতে মানবশরীরে এন্টিবায়োটিকের বিরূপ প্রভাব পড়ছে এবং দীর্ঘদিন সেবনের কারণে কার্যকারিতাও হারাচ্ছে। এ নিয়ে কিছুদিন আগে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদনও করা হয়। কিন্তু বাজারে প্রেসক্রিপশন ছাড়া এন্টিবায়োটিক বিক্রি থেমে নেই।
এন্টিবায়োটিকের মতো যেন রেনিটিডিনের অবস্থা না হয়। নিষিদ্ধ ঘোষণা করেই কাজ শেষ করলে চলবে না। বাজার থেকে এসব ওষুধ তুলে নেওয়ার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। ওষুধ প্রশাসনের পাশাপাশি কোম্পানিগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। প্রতিনিধিদের মাধ্যমে যেভাবে দোকানে দোকানে ওষুধ দেওয়া হয়, তাদেরকে দিয়েই দোকান থেকে এগুলো তুলে নেওয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এছাড়া রেনিটিডিন নিষিদ্ধ হলেও গ্যাস্ট্রিকের জন্য ওমিপ্রাজল বা অন্য ওষুধে এ ধরনের জটিলতা রয়েছে কিনা, সে বিষয়ে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বাজার থেকে এসব ওধুধের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষাগারে এগুলোর গুণগত মান পরীক্ষা করে সে অনুসারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।