জনগণের টাকায়, জনগণের জন্য ফুটপাত ও রাস্তা। কিন্তু একটি গোষ্ঠী ফুটপাত দখল করতে করতে রাস্তাও দখল করে থাকে। চলে বাণিজ্য ও চাঁদাবাজি। দখল উচ্ছেদের পর আবারও দখল করা হয়। যেসব রাজনৈতিক নেতাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে ফুটপাত ও সরকারি জমি দখল হয়ে থাকে, সবার আগে তাদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় না। এই ভাঙা-গড়ার খেলায় সরকারের বিপুল অর্থ লোকসান, কর্মকর্তাদের সময় ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ব্যবহার করা হচ্ছে। এজন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া কোনোভাবেই অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ বন্ধ করা যাবে না। কারণ, প্রতিটি এলাকায় যারা অবৈধ স্থাপনা গড়ে তুলেন; তারা সেই এলাকার স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের ছত্রছায়ায় থাকেন। রাজধানীর কারওয়ান বাজার, গোপিবাগ টিটিপাড়া, খিলগাঁও-মালিবাগ ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে রেললাইনকেন্দ্রীক অবৈধ স্থাপনাগুলোয় মাদক ব্যবসা ও নানা অসামাজিক কর্মকা- চলে থাকে।
গত কয়েক বছরে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে শতশত উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেছে। প্রতিটি স্থানে আগের মতোই হকার আর ব্যবসায়ীদের দখলে চলে গেছে। বছরজুড়ে সিটি কর্পোরেশন, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), নৌ-মন্ত্রণালয় ও রেল-মন্ত্রণালয় নিয়মিত অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান চালায়। এতে সরকারের মোটা অংকের টাকা ব্যয় হয়। কিন্তু দেখা যায়, একদিকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হচ্ছে, অন্যদিকে আবার সেগুলো দখল হয়ে যাচ্ছে। উচ্ছেদ অভিযানের নামে দিনের পর দিন রাজধানীসহ সারা দেশে এভাবেই চলছে ভাঙা-গড়ার খেলা। তবে উচ্ছেদ হওয়া জায়গা আবার যেন স্থাপনা গড়ে উঠতে না পারে এ নিয়ে সংস্থাগুলোর কোনো মাথাব্যথা আছে বলে আমরা দেখছি না।
অন্যদিকে নৌ-মন্ত্রণালয় অবৈধ নদী দখলমুক্ত করলেও মেঘনা নদীতে ফের দখলের রাজত্ব চলছে। নদী ভরাট করে সিমেন্ট ফ্যাক্টরি, কলকারখানা, ডকইয়ার্ড ও বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে। অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে এখনই ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে বুড়িগঙ্গা ও তুরাগের মতো মেঘনা নদীও হারানোর সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। যে কেনো ভাবেই হোক, নদীর জায়গা নদীকে ফিরিয়ে দিতে হবে বলে আমরা মনে করি।
রাজধানীর গুলিস্তান ও আশপাশের এলাকার ফুটপাত দখলমুক্ত করা নিয়ে হকার এবং ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী ও পুলিশের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ রয়েছে। ইতোপূর্বে যুব ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মী, পুলিশ এবং ফুটপাতের হকারদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটছে। গুলিস্তান এলাকায় প্রতিদিন গড়ে ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা চাঁদা তোলা হয়। আর এই টাকার ভাগভাটোয়ারা নিয়েই পুলিশ, হকার ও সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরোধ তুঙ্গে।
রেল, নৌ, রাজউক কিংবা সিটি কর্পোরেশন সমন্বিত পরিকল্পনা ছাড়া বিচ্ছিন্নভাবে উচ্ছেদ অভিযান চালায় বলেই সফলতা আসছে না। এজন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও সামগ্রিকভাবে উচ্ছেদ অভিযান চালালে সফল হওয়া যাবে বলে মনে আমরা মনে করি।