রান্নার অন্যতম অনুষঙ্গ পেঁয়াজ কিনতে গিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ছেন সাধারণ ক্রেতারা। সরকারের কাছে যথেষ্ট পেঁয়াজ মজুদ আছে, যারা বাজারকে অস্থির করার চেষ্টা করবেন তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে -বাণিজ্য সচিবের এমন বক্তব্যের পাশাপাশি মিয়ানমার ও তুরস্ক থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ দেশে প্রবেশ করলেও নিত্যপ্রয়োজনীয় এ পণ্যের বাজারে অস্থিরতা কাটছে না। মূলত পেঁয়াজ রপ্তানির উপর ভারতের কেন্দ্রীয় বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞার পর থেকেই দেশের বাজারে পণ্যটি নিয়ে অস্থিরতা তৈরি হয়। এ অবস্থায় খুচরা বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজের দাম ১৩০ টাকা পর্যন্ত উঠে যায়।
অন্যদিকে টিসিবির ট্রাক সেলে ৪৫ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি করা হচ্ছে। সেখানে ক্রেতার দীর্ঘ লাইন ধরে পেঁয়াজ কিনছেন। একজন ক্রেতা ৪৫ টাকা কেজি দরে সর্বোচ্চ ২ কেজি পর্যন্ত পেঁয়াজ কিনতে পারছেন। কিন্তু এটি শুধু রাজধানীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ। দেশের অন্যান্য এলাকার মানুষ পেঁয়াজ কিনতে গিয়ে হা-হুতাশ করছেন।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, দেশে বর্তমানে পেঁয়াজের সরবরাহ স্বাভাবিক অবস্থায় আছে। সরবারহ স্বাভাবিক থাকলে দাম বাড়ানোর বিষয়টি অস্বাভাবিক। ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে অতিরিক্ত মুনাফা অর্জন করছে এবং এর পেছনে কারা জড়িত তাদের খুঁজে বের করা হোক। শুধু পেঁয়াজের ক্ষেত্রেই নয়, বিভন্ন সময়ে বিভিন্ন পণ্যের ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের অতি মুনাফার এই অনৈতিক প্রবণতা লক্ষ করা যায়। দু’এক জায়গায় অভিযান চালিয়ে কয়েকজনকে শাস্তির আওতায় এনে এই সংস্কিৃতি পরিবর্তন করা যায় না। এরজন্য প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা ও কঠোর আইনের বাস্তবিক প্রয়োগ। কোনো পণ্যের দাম বাড়ার আগেই এর লক্ষণ দেখা যায়, কিন্তু বেশিরভাগক্ষেত্রে আমরা দেখি এটি মোকাবেলার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বা সরকারের পূর্বপ্রস্তুতি থাকে না। দাম বেড়ে গেলে তারাও হিমশিম খেয়ে যায় এবং ‘কঠোর বার্তা’ নিয়ে গণমাধ্যমে হাজির হয়, যা প্রকৃতপক্ষে কোনো কাজে আসে না।
এবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, পেঁয়াজ আমদানির ক্ষেত্রে এলসি মার্জিনে সুদের হার হ্রাস, স্থল ও নৌ বন্দরগুলোতে পেঁয়াজ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে খালাস ও বিভিন্ন হাট-বাজারে দ্রুত পরিবহন নির্বিঘœ করার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া ভোমরা, সোনা মসজিদ, হিলি এবং বেনাপোল স্থলবন্দরে পেঁয়াজ আমদানি নির্বিঘ্ন করতে সব পদক্ষেপ নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে প্রতিটি জেলা প্রশাসন থেকেও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এলসি’র মাধ্যমে মিয়ানমার, মিশর ও তুরস্ক থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ বন্দরে খালাস করা শুরু হয়েছে। মায়ানমার থেকে বর্ডার ট্রেডের মাধ্যমে টেকনাফ বন্দর দিয়ে আমদানি করা পেঁয়াজ এবং দেশের বিভিন্ন জেলার পাইকারি হাটগুলোতে বিক্রি করা পেঁয়াজ দ্রুত সারাদেশে নির্বিঘেœ পৌঁছে যাচ্ছে। মন্ত্রণালয়ের এই বক্তব্য কতটুকু কার্যকর তা দু’একদিনের মধ্যে স্পষ্ট হবে।
তবে শুধু কথা নয়, আমরা কাজে তার বাস্তবিক প্রতিফলন দেখতে চাই। আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যগুলোর উৎপাদনে জোর দেওয়া হোক। আমদানিতে অতিরিক্ত ছাড় না দিয়ে কৃষিপণ্য উৎপাদন করে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করুক। আমরা চাই পেঁয়াজের বাজার স্বাভাবিক করে চলমান অস্থিরতার দ্রুত অবসান হোক।