শুধু আমাদের দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়,পরো পৃথিবীর প্রান্তেই বিবাহ একটি পবিত্র বন্ধন।
বিয়ে দুটি অচেনা অজানা নারী - পুরুষ এর মধ্যে আত্মিক সম্পর্ক। এতে তাদের দুই পরিবারের মধ্যে গড়ে উঠে আত্মীয়তার সমন্ধ। পরম সুখে দুটো অচেনা মানুষ শুরু করেন জীবনের নতুন অধ্যায়। এক বুক আশা আর অকৃত্রিম ভালোবাসা নিয়ে শুরু হয় তাদের বর্ণিল পথচলা। তখন তাদের পরিচয় হয় স্বামী এবং স্ত্রী হিসেবে। স্বামী স্ত্রীর এযেন মধুর এক সম্পর্ক। দুটো দেহ মন যেন মিশে যায় একটি আত্মায়। দুজনে হয়ে যায় একে অপরের পরিপূরক। তারা দিনদিন একই সত্ত্বা ও অনুভূতির অনবদ্য বন্ধনে বাঁধা পড়ে। একজন স্বামী সারাদিন পরিশ্রম করে বাড়ি এসে স্ত্রীর ভালোবাসায় সব কষ্ট ভুলে যাবো। আর একজন স্ত্রীও এমনটি চায়। কিন্তু বর্তমান সময়ে কিছুকিছু স্বামী - স্ত্রী বিয়ের মতো সুদৃঢ় সম্পর্ক এবং নৈতিক বিষয়টি ছিন্ন করতে একটুও ভাবছে না। সন্তানের ভবিষ্যতের কথাও কেউ ভাবছে না, ভাতের সঙ্গে তরকারির মত সাধারণ বেপার যেন হচ্ছে বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা গুলো। বর্তমানে বিবাহ বিচ্ছেদ যেন মহামারি আকার ধারণ করছে আমাদের দেশে। বিভিন্ন মাধ্যমে জানা যায় অন্যান্য সময়ের চেয়ে বর্তমান সময়ে বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা গুলো ঘটছে বেশি যা জাতিকে ভাবিয়ে তুলেছে। এক জড়িপে থেকে জানা যায় বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনায় পুরুষের চেয়ে নারীরাই অনেক গুণ বেশি এগিয়ে। যা শিক্ষিত কর্মজীবি নারী এবং পুরষরাই বেশি ঘটাচ্ছেন। জরিপ অনুযায়ী ৭০ দশমিক ৮৫ ভাগ নারী এবং ২৯ দশমিক ১৫ ভাগ তালাক দিচ্ছেন পুরুষরা। আমরা লক্ষ্য করি, দুটি কারণে ইদানীং বিবাহ-বিচ্ছেদ বাড়ছে। প্রথমত, মেয়েরা আগের চেয়ে বেশি শিক্ষিত হচ্ছে। তারা এখন অনেক সচেতন। মুখ বুজে নির্যাতন সহ্য না করে ডিভোর্সের পথ বেছে নিচ্ছেন। দ্বিতীয়ত, মোবাইল কোম্পানিগুলোর নানা অফার, ইন্টারনেট, ওয়েবসাইট, ফেসবুক এবং পর্নোগ্রাফির মতো সহজলভ্য উপাদান থেকে আকৃষ্ট হয়ে মূল্যবোধ ও নৈতিকতা হারাচ্ছেন।
ঢাকা সিটি করপোরেশন দক্ষিণ ও উত্তরের তথ্যানুযায়ী, ২০১০-২০১৬ সাল পর্যন্ত রাজধানীতে তালাকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫২ হাজার। গতবছর এই সংখ্যা ছিল সাড়ে ৬ হাজার। যা ২০১৫ সালে ছিল প্রায় ৯ হাজার। এর আগে ২০১৪ সালে ৮ হাজার ২১৫টি, ২০১৩ সালে ৮ হাজার ২১৪, ২০১২ সালে ৭ হাজার ৯৯৫, ২০১১ সালে বিয়ে বিচ্ছেদ হয়েছে ৫ হাজার ৩২২ এবং ২০১০ সালে বিয়ে বিচ্ছেদ হয়েছে সাড়ে ৫ হাজার। প্রতিদিন গড়ে ৫০ থেকে ৬০টির মতো বিচ্ছেদের আবেদন জমা হচ্ছে। প্রতিবছরই আগের বছরের তুলনায় বাড়ছে এই সংখ্যা। বর্তমানে রাজধানীতেই নিষ্পত্তির অপেক্ষায় আছে ৪৯ হাজার বিবাহ-বিচ্ছেদের আবেদন। ঢাকা শহরের চেয়ে সারাদেশে এই চিত্র আরো ভয়াবহ।
বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা গুলো যে ভাবে ঘটছে তা সচেতন মানুষদের ভাবিয়ে তুলেছে। আমরা মনে করি বিবাহ বিচ্ছেদ মোটেও ভালো কাজ নয়। এইসব বিবাহ বিচ্ছেদের কারণে দুটি মানুষের জীবনই নষ্ট হয়না তার সঙ্গে তাদের সন্তানের ভবিষ্যতও নষ্ট হয়ে যায়। একটা মানুষের আশা স্বপ্ন নষ্ট হয়ে যায়। বিবাহ বিচ্ছেদের কারণ গুলো যেন না ঘটে তা নিয়ে প্রশাসন সহ দেশের বিভিন্ন সংগঠন গুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। পারিবারিক মর্যাদা, মূল্যবোধ, সন্তানের ভবিষ্যৎ এবং নিজেদের দ্বীন ও ঈমানের হেফাজতের জন্য তালাকের বিষয়ে সংযমী হওয়ার কোনো বিকল্প নেই। মসজিদের সম্মানিত খতীবগণ, ওয়ায়েযগণ এবং সমাজের নেতৃস্থানীয় বিজ্ঞ লোকজন গণ-মানুষকে এসব বিষয়ে বোঝাতে এগিয়ে আসলে তা অধিক কার্যকরি হবে বলে আশা করা যায়। অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ তৈরী হয়।
আমরা মনে করি, বিবাহ বিচ্ছেদ প্রতিকারে পরিবার গঠন ও পারিবারিক সম্পর্ক তৈরীতে বেশি সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। স্ব-অবস্থান থেকে স্ব-ভূমিকা পালনে বিবেকের উপস্থিতিতে সিদ্ধান্ত গ্রহন, স্বামী-স্ত্রী একে অপরের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন, বাঙালী সংস্কৃতিক মননে গভীর চেতনায় লালন, অপসংস্কৃতিকে দৃঢ়ভাবে প্রতিহতকরণ, স্বামী-স্ত্রী সম্পর্কের মর্যাদা প্রদান প্রভৃতি মানসিকতা সৃষ্টির মাধ্যমে বিবাহ বিচ্ছেদ হ্রাস করা সম্ভব। তাই এটি প্রতিরোধে সকলকে সচেতন হতে হবে। বিবাহ বিচ্ছেদ আমাদের কারো কাম্যনয়।