দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। বর্তমান সময়ে এসব বিতর্ক অন্যান্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বেড়েছে কয়েকগুণ। বিশেষ করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অতি সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা নতুন করে বিতর্কের জš§ দিয়েছে। আর এসব বিতর্কের মূলে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্য। তাদের নানা অনিয়ম-দুর্নীতিই এ অবস্থার সৃষ্টি করেছে। বর্তমানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের মননে জ্ঞানার্জনের পরিবর্তে অর্থপোর্জনই যেনো বড়। সাধনা, গবেষণা, জ্ঞানচর্চা, শিক্ষাদান সবই এখন অপমৃয়মান।
সাম্প্রতিককালে শিক্ষকদের সরকারি সুবিধাদানে আর্থিক যে পরিবর্তন হয়েছে তা অকল্পনীয়, অভাবনীয়। এত সুবিধার পরও একজন শিক্ষকের আদর্শ, নৈতিকতা ও যোগ্যতার অভাবে শিক্ষাদানের কার্যটি ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতে পারে। বলা হয়Ñ ‘গায়ের জোরে আর যাই হওয়া যাক না কেন, গুরু হওয়া যায় না’। তাই শিক্ষাকে সার্থক করার জন্য প্রয়োজন যথাযোগ্য ও আদর্শবান সুশিক্ষক। শিক্ষকদের ভুলে গেলে চলবে না, তারা জনগণের টাকায় গড়া স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন। ফের কর্মজীবী হিসেবে জনগণের টাকায় মাসিক বেতন-ভাতাসহ নানা সুবিধা ভোগ করার পরও নিবেদিতপ্রাণ হয়ে কাজ করা জরুরি নয় কী?
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভিসি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় চরম আনুগত্যের বিষয়টি গুরুত্ব দেয়া হয়। সরকার দলের প্রতি যে বেশি অনুগত, তাকেই বাছাই করা হয়। অর্থাৎ একজন উপাচার্য নিয়োগের শুরুটাই খারাপ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে। দুর্নীতি, অনিয়ম, টেন্ডারবাণিজ্য, নিয়োগবাণিজ্যে যার আপত্তি থাকবে না, তাকেই নিয়োজিত রাখা। এমন অনুগত ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানপ্রধান হলে যে পরিণতি হওয়ার কথা, এখন তাই হচ্ছে।
উপাচার্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে দলীয় বিবেচনায় নিয়োগ না দিয়ে যোগ্যতার বিচারে নিয়োগ দেয়া হলে এ অবস্থার সৃষ্টি হতো না বলে আমরা মনে করি। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের নানা কর্মকা-ে অস্থিরতা বিরাজ করছে। এর মধ্যে নিয়োগবাণিজ্য, অনিয়ম এবং দুর্নীতিই সামনে চলে আসছে। এ ছাড়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়য়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মো. জাকারিয়ার নিয়োগ সংক্রান্ত একটি ফোনালাপ ফাঁস হওয়ায় অস্থির অবস্থা দেখা দিয়েছে। ঘটনায় উপ-উপাচার্যের পদত্যাগের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
আগেতো শিক্ষা এতোটা বাণিজ্যিক ছিল না, শিক্ষকগণ এতো নীতিভ্রষ্ট ছিলেন না। তারাও অর্থ কষ্টে ভুগতেন, তাই বলে কখনো অর্থলোভী হতেন না। গাড়ি-বাড়ির স্বপ্নও তারা দেখতেন না। সততা, সরলতা ও সব কিছুতেই বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করে চলতেন। তারা ছিলেন আদর্শ ও নীতি-নৈতিকতার মূর্ত প্রতীক। সে সব আলোকিত শিক্ষকগণের সম্মান ছিলো হিমালয়সম।
মূল কথা, যোগ্য জায়গায় অযোগ্য লোক বসালে এসব সমস্যার সমাধান কখনোই হবে না বলে আমরা মনে করি। শিক্ষকতার পেশায় নৈতিকতা খুবই জরুরি। নীতি-নৈতিকতা বোধ জাগ্রত না হলে কারো পক্ষে এ মহান পেশায় থাকা ঠিক নয়।