নাটোরের বড়াইগ্রামের কামারদহ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক ভবন নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ উঠায় দেড় মাস যাবৎ নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে। এতে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এদিকে, অনিয়ম তদন্তে গঠিত কমিটির সদস্যরা বিদ্যালয়ে যাওয়ার তারিখ দিয়েও বিদ্যালয়ে না গিয়ে উপজেলা সদর থেকেই ফিরে যাওয়ায় স্থানীয় লোকজনের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ২১ মে বিদ্যালয়টির শ্রেণীকক্ষ সম্প্রসারণ কাজের জন্য মূল ভবনের পাশে নতুন ভবন নির্মাণ কাজ শুরু হয়। উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের বাস্তবায়নে এ কাজের ব্যয় ধরা হয় ৭১ লাখ ৮৪ হাজার ৫০০ টাকা। কিন্তু ঠিকাদার ও প্রকৌশলী চারতলা ফাউন্ডেশনসহ দ্বিতল ভবন নির্মাণের মূল ডিজাইন গোপন করে দ্বিতল ফাউন্ডেশনসহ দোতলার ডিজাইন দিয়ে কাজ করছেন। ফলে চারতলা ফাউন্ডেশনের প্রাক্কলন অনুযায়ী সি-১ কলামে ১৬টি ২০ মিলি রড, সি-২ কলামে ১৪টি ২০মিলি রড এবং সি-৩ কলামে ১০টি ২০ মিলি রড ব্যবহারের নির্দেশনা থাকলেও দুইতলা ফাউন্ডেশনের সূত্র ধরে ব্যবহার হচ্ছে সি-১ কলামে ১০টি ২০ মিলি রড, সি-২ কলামে ১০টি ২০মিলি রড ও সি-৩ কলামে ৮টি ২০মিলি রড। ডিজাইন ও এস্টিমেট বহির্ভুত কাজে ম্যানেজিং কমিটি বাধা দেওয়ার পরেও উপজেলার উপ-সহকারী প্রকৌশলী মনোয়ার হোসেন কর্ণপাত না করে কাজ করে যাচ্ছিলেন। পরে তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য এ ব্যাপারে প্রতিকার চেয়ে গত ২০ আগস্ট স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী, বিভাগীয় প্রধান প্রকৌশলীসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাসিমা খাতুন। তারপর থেকে দেড় মাস ধরে নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে।
প্রধান শিক্ষক নাসিমা খাতুন জানান, নির্মাণ কাজের উপকরণাদি ইট, বালি, সিমেন্ট ও রড ছিল নি¤œ মানের। শুরু থেকেই কাজ দেখে সন্দেহ হচ্ছিল। ঠিকাদারের কাছে সিডিউলের কপি চাইলেও দেননি। এ বিষয়ে অভিযোগ দায়েরের পর বিষয়টি তদন্তের জন্য গত ১ অক্টোবর মঙ্গলবার এলজিইডির রাজশাহী অঞ্চলের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিদ্যালয়ে আসার কথা ছিল। সেজন্য কয়েক শ অভিভাবক অপেক্ষায় ছিলেন। উপজেলা প্রকৌশলী আবদুর রহিম আমাকে জানিয়েছিলেন যে তিনি তাদের রিসিভ করার জন্য আহমেদপুর বাসস্ট্যান্ডে অপেক্ষা করছেন। কিন্তু পরে তিনি জানান যে তারা ঢাকা চলে গেছেন। এভাবে আমাদেরকে অপেক্ষায় রেখে বিদ্যালয়ের পাশ দিয়ে ঢাকা চলে যাওয়ায় আমরা বিস্মিত হয়েছি। তিনি আরো জানান, পুরাতন কক্ষগুলো অনেক আগেই ক্লাসের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। শ্রেণি কক্ষের অভাবে শিশুদের নিয়ে আমরা কয়েক মাস যাবৎ বিপাকে আছি। শিশুদের লেখাপড়া চালু রাখার জন্য দ্রুত ভবনের নির্মাণ কাজ শেষ করা দরকার।
ঠিকাদার শ্যামল কুমার সাহা জানান, আমি মুল ঠিকাদারের কাছ থেকে দোতলা ভবন নির্মাণের দায়িত্ব নিয়েছি। আমার কাছে থাকা সিডিউল মোতাবেক আমি দুই তলা ফাউন্ডেশন ও দ্বিতল ভবন নির্মাণের কাজ করছি। তবে তাতে বাধা আসায় আপাতত কাজটি বন্ধ রয়েছে। সিডিউলের উপরের পাতায় কিছু ভুল রয়েছে বলেও তিনি দাবী করেন। স্থানীয় ইউপি সদস্য ফেরদৌস উল আলম জানান, সরকারী সিডিউল মোতাবেক স্কুলের ভবনটি দ্রুত নির্মাণ করে কোমলমতি শিশুদের পাঠ দানের ব্যবস্থা করার দাবী জানাচ্ছি।