মনিরামপুরে এক মাদ্রাসা শিক্ষার্থী ধর্ষণের ঘটনায় দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। বিক্ষুদ্ধ জনতা বৃহস্পতিবার মাদ্রাসা শিক্ষকদের অবরুদ্ধ রাখাসহ মাদ্রাসায় হামলা চালায়। এ সময় মাদ্রাসার সুপার মাওলানা শাহাদাত হোসেনকে ৩ ঘন্টা অবরুদ্ধ রাখাসহ ঘটনার সাথে জড়িত সহকারী মৌলভী শিক্ষক নজরুল ইসলাম গণপিটুনীর শিকার হয়। খবর পেয়ে পুলিশের উর্দ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছে সুপার শাহাদাতকে উদ্ধারসহ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হন। ঘটনাটি ঘটে মনিরামপুর উপজেলার ঝাঁপা বালিকা দাখিল মাদ্রাসায়। এ ঘটনার পর এলাকার সাধারন জনগণ শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ফুসে উঠেছেন।
মাদ্রাসার সুপার শাহাদাত হোসেন জানায়, মাদ্রাসার দাখিল পরীক্ষার ফলাফল ভাল করতে রাতে মাদ্রাসায় ১০ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের কোচিং ব্যবস্থা চালু করেন। গত সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে এক শিক্ষার্থী কোচিং শেষে বাড়ি না ফেরায় পরিবারের পক্ষ থেকে ব্যাপক খোঁজা-খুজি শুরু করেন। একপর্যায়ে গভীর রাতে মাদ্রাসা টয়লেট রুমের পাশে রক্তাক্ত, অচেতন অবস্থায় ছাত্রীকে উদ্ধার করে ওই রাতেই যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। লোক লজ্জার ভয়ে প্রাথমিক ভাবে ওই শিক্ষার্থীর পরিবার কাউকে বিষয়টি না বললেও বৃহস্পতিবার ধর্ষিতা শিক্ষার্থী ঘটনাটি ফাঁস করে দেয়।
বিষয়টি জানাজানি হলে বৃহস্পতিবার গ্রামবাসী মাদ্রাসাটিতে শিক্ষকদের অবরুদ্ধ করে রেখে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। এ সময় ধর্ষণের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে মৌলভী শিক্ষক নজরুল ইসলাম গণপিটুনীর শিকার হন। খবর পেয়ে মনিরামপুর সার্কেল কর্মকর্তা রাকিব হাসান, সহকারী (ভূমি) সাইয়েমা হাসান, ওসি (সার্বিক) রফিকুল ইসলাম, মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বিকাশ চন্দ্র মন্ডল ও উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মৌসুমী আক্তার সরেজমিন মাদ্রাসায় যান। এ সময় মাদ্রাসার সুপার শাহাদাত ও নজরুল ইসলামকে উদ্ধারসহ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
ধর্ষণের শিকার ওই শিক্ষার্থীর পরিবার এবং পুলিশ জানান, সোমবার রাতে কোচিং শেষে মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক (কৃষি) তরিকুল ইসলাম এবং সহকারী মৌলভী নজরুল ইসলাম ওই শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ করে ফেলে রাখেন। এ ঘটনার সাথে জড়িত থাকায় বৃহস্পতিবার রাতে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
সহকারী পুলিশ রাকিব হাসান জানান, ধর্ষণের ঘটনায় মাদ্রাসা অবরুদ্ধ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ শেষে ওই শিক্ষার্থীর কাছ থেকে সোমবারের রাতের ঘটনা জানতে পারি। মনিরামপুর থানার কর্মকর্তা ইনচার্জ (ওসি) রফিকুল ইসলাম জানান, শিক্ষার্থী ধর্ষণের ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতে দুই শিক্ষককে আসামি করে থানায় মামলা করা হয়েছে। তাদের আটকের জন্য জোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বিকাশ চন্দ্র ঘটনার সর্বোচ্চ শাস্তির দাবী করে বলেন, শনিবার মাদ্রাসা খুললে সুপারকে জানতে চাওয়া হবে কার অনুমতিতে রাতে ছাত্রীদের কোচিং ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আহসান উল্লাহ শরীফি বলেন, তাৎক্ষনিক ভাবে মাদ্রাসা পরিচালনা পরিষদকে ডেকে ঘটনার সাথে জড়িত শিক্ষকদের চাকুরী থেকে সাময়িক বরখাস্ত করার কথা বলা হলে সন্ধ্যা নাগাদ অভিযুক্ত দুই শিক্ষককে চাকুরী থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে বলে আমি জানতে পেরেছি। তবে এ ঘটনায় তাদেরকে আটক করা যায়নি।