বখাটেদের ক্রমাগত উত্ত্যক্ত ও মানসিক পীড়ন সইতে না পেরে চিরকুটে বিচার চেয়ে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলায় আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিল মাদ্রাসা ছাত্রী স্বর্ণা আক্তার। সেই ঘটনায় করা মামলার দুই মাস অতিবাহিত হলেও এজাহারভুক্ত চার আসামি গ্রেফতার না হওয়ায় নিহত স্বর্ণার হতাশাগ্রস্ত পরিবার ও স্বজনরা রাস্তায় নেমেছেন।
এ ঘটনায় জড়িত আসামিদের গ্রেফতার ও বিচার দাবিতে নিহত স্বর্ণার পরিবার ও স্বজনদের উদ্যোগে শুক্রবার বেলা ১১ টায় উপজেলার খালগোড়া বাজারে মানববন্ধন কর্মসূচি করা হয়েছে। এ মানববন্ধনে উদ্যোগতাদের সঙ্গে শিক্ষার্থী ও স্থানীয় লোকজনও অংশ নেন। আসামি হৃদয়, লিমন, অন্তর ও রাহাতের বিচার দাবি উল্লেখ করে লেখা ব্যানারে ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধন হয়।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, নিহত স্বর্ণার মামা রায়হান হাওলাদার, মামী সাজেদা খাতুন, সহপাঠী লুপা আক্তার, লিয়া আক্তার ও খালগোড়া বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক শুকুর মীর প্রমুখ। বক্তারা বলেন, চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার মামলার দুই মাস অতিবাহিত হলেও মূল আসামিরা এখনও কেন গ্রেফতার হয়নিÑএনিয়ে তাদের মনে নানা কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছে। বক্তারা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেছেন, আসামিদের অবিলম্বে গ্রেফতার করা হোক। পাশাপাশি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জন্য বিচার বিভাগের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন তারা।
প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচার চেয়ে মানববন্ধনে কান্নাজড়িত কণ্ঠে নিহত স্বর্ণার বাবা নাসির উদ্দিন সিকদার বলেন, ‘ঘটনার দুই মাস হয়ে গেলেও আসামিরা কেন গ্রেফতার হয়নি, আইনের কাছে আমি কৈফিয়ত চাই। এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই। আমার মেয়ের অকাল যে মৃত্যু হয়েছে, আর কোন মেয়ের যেন এভাবে মৃত্যু না হয়। এদের (আসামিদের) উপযুক্ত বিচার হলে এভাবে অকালে কারও প্রাণ হারাতে হবে না।’ এ সময় মা রুমি বেগম বলেন, ‘আমার মেয়ে বিচার চেয়ে গেছে, আমিও বিচার চাই।’ এ কথা বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
এ ব্যাপারে রাঙ্গাবালী থানার ওসি আলী আহম্মেদ বলেন, ‘আসামিরা হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়েছে। তারা চারজনই এখন জামিনে আছে।’
উল্লেখ্য, বখাটেদের ক্রমাগত উত্ত্যক্ত ও ফেসবুকে ভুয়া অশ্লীল ভিডিও ছড়িয়ে মিথ্যা অপবাদ দেওয়ায় গত ৬ আগস্ট উপজেলার চরযমুনা গ্রামের নিজ ঘরে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিল স্বর্ণা আক্তার। নিহত স্বর্ণা উপজেলার খালগোড়া জাহাগিরিয়া শাহ সুফি মমতাজিয়া সুন্নিয়া দাখিল মাদ্রাসার দশম শ্রেণীর ছাত্রী। আত্মহত্যার আগে আসামিদের কার্যকালাপ চিরকুটে লিখে রেখে যায় সে। এ ঘটনায় ৮ আগস্ট নিহত স্বর্ণার বাবা নাসির উদ্দিন সিকদার বাদী হয়ে ৪ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৩-৪ জনের বিরুদ্ধে রাঙ্গাবালী থানায় একটি মামলা করেন। আসামিরা হলÑহৃদয় আকন, লিমন হাওলাদার, অন্তর মৃধা ও রাহাত জোমাদ্দার। এদিকে ১০ আগস্ট ওই মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি হিসেবে জুবায়ের হোসেন লিমন নামের একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।