শিশুদের দুঃখ কষ্টের কথা ভেবে অনেক বছর আগে ব্যথাতুর হৃদয়ে কবি সুকান্তকে বলতে হয়েছিল, ‘সব চেয়ে খেতে ভালো লাগে মানুষের রক্ত’। মানুষ আজ লোভী পশুদের মতোই মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। মানুষের অথর্লালসার রাজ্যে ফুলের মতো পবিত্র শিশুদেরও মুক্তি নেই যেন। উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত সমাজের শ্রেণির পরিবারগুলো তাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করে সন্তানদের আগলে রাখতে বা অধিকারগুলো নিশ্চিত করতে। এদিকে দরিদ্র্য ও অস্বচ্ছল পরিবারের চিত্র উল্ট। আবার যাদের পিতা-মাতা এই পৃথিবীতে নেই তাদের জন্ম যেন হয় আজন্ম পাপ। দরিদ্র্য ও অস্বচ্ছল পরিবারের সুবিধা বঞ্চিত প্রায় শিশুরাই নিতান্ত পেটের দায়ে ঝুঁকিপূণর্ কাজ গুলোকে তাদের নিত্য নৈমিত্তিক পেশা হিসাবে বেঁচে নিতে বাধ্য হচ্ছে। নিয়তির নিষ্টুর পরিহাসের শিকার সব চেয়ে বেশি এই শিশুরা।
শিশুদের কলকারখানায় নিয়োগ করে এক শ্রেণির স্বাথার্ন্ধ মানুষ প্রচুর মুনাফা অজর্ন করে চলছে। আইন এবং ফাইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে মহাজনরা তাদের কাজ হাসিল করে চলছে। তা থামানোর মতো যেন কেউ নেই আমাদের দেশে।
সমাজ ব্যবস্থায় তাদের তেমন মূল্যায়ন করা হয় না। তারা তাদের ন্যায্য প্রাপ্য মৌলিক অধিকার গুলো থেকেও বঞ্চিত। আজ তারা এমন করুন অবস্থায় অবস্থান করছে যে তাদের এক ঘণ্টার কাযর্লাপ কোনো লেখক-লেখিকা লিখে শেষ করতে পারবেন না। তবে এটুকু সহজেই বলা যায় আজ যারা পথশিশু বা শিশু শ্রমিক তাদের যেন প্রকৃতি নেই, পরিবেশ নেই, অবুঝ শৈশব নেই, ভবিষ্যৎ চিন্তা নেই, পরিবারের অথের্যাগান এবং নিজেদের ক্ষুধা নিবারণ করতে যেন তারা ব্যস্ত। আজ এমন ভাবে বেড়ে উঠছে তারা যা ভবিষ্যৎ জাতির জন্য ভয় বা বিপদ। যা আমাদের দেশ ও জাতির কাম্য নয়। শিশুদের শ্রমিক বৃত্তিতে নিয়োগ ও নৃসংসতা শিশু শ্রমিক বৃত্তিতে নিয়োগ প্রাচীন কাল থেকেই চলে আসছে। বতর্মানে সভ্যদেশসমূহে মানুষ যেখানে বিবেগ শক্তি ও স্বাধীনতাবোধের বড়োই করে সেখানেও কেন থাকবে শিশু শ্রমিক লজ্জাজনক এই উদাহরণ। সারাদিন চৌদ্দ থেকে ষোল ঘণ্টা কাজ করে ঐ শিশু শ্রমিকটি যা আয় করে, তাতে তার নিজের আহারের সংস্থানও হয়না। অদক্ষ্য শ্রমিক বলে নেই তাদের কোনো নিদির্ষ্ট মজুরি। সামান্যতম অমনোযোগের অভিযোগে লাথিও বেত্রাআঘাত সহ্য করতে হয় তাদের।
হয়তো এসব শিশু শ্রমিকের চোখের জলের হিসাব, আআআআআআআআহহহ আআআআআআআআহহহ পৃথিবীর সভ্য সমাজের কাছে রাখার সময় নেই। এই হাজার হাজার শিশু শ্রমিকের চোখের জল আজকের পৃথিবীকে ভাবিয়ে তুলছে, এতে কোন সন্দেহ নেই। গুণীজনরা বলেন, এর প্রধান কারণ দরিদ্রতা।
শিশুশ্রম নিরসন ও শিশুর অধিকার নিশ্চিত করতে শিশু বাজেট প্রণয়নের দাবির মুখে গত দুই অথর্বছরে পৃথক বরাদ্দ রাখা হয়। ২০১৫-১৬ অথর্বছরে প্রথমবারের মতো শিশুদের জন্য পৃথক বরাদ্দ রাখা হয় ৫০ কোটি টাকা। এরপর ২০১৬-১৭ অথর্বছরে বরাদ্দ বাড়িয়ে করা হয় ১০০ কোটি টাকা।
শিশু অধিকার নিয়ে কাজ করা এনজিও ও বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থার দাবির পরিপেক্ষিতে অথর্মন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত শিশুদের জন্য পৃথক এই বরাদ্দ দেন। বাজেটে বরাদ্দ দেওয়া হলেও সঠিক কমর্পরিকল্পা না থাকায় সেই টাকা খরচ করতে পারিনি কোনো মন্ত্রণালয় এমন দাবি করেন খোদ সংসদ সদস্যদের। এখন প্রশ্ন জাগে, শিশুদের নিয়ে পরিকল্পার অভাবেই কী লাখ লাখ শিশুর ভবিষ্যৎ নষ্ট হবে? তবে আমি ব্যক্তিগত জীবনে একজন শিশু শ্রমিক, আমি আমার জীবনের বাস্তবতা থেকে বলি আমরা শিশু শ্রমিকরা একদম ভালো নেই। বাংলাদেশের শহরাঞ্চলে বিত্তবানদের গৃহে শিশু নির্যাতন হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এসব গৃহে কাজের ছেলে বা মেয়ে হিসাবে যারা কাজ করে তারা সামান্য অপরাধের জন্য পশু আত্মা গৃহিণী বা গৃহস্বামী অমানবিক শাস্তি দিয়ে থাকে। এরা সহায়সম্বলহীন কাজের ছেলে-মেয়েদের মানুষের সন্তান বলে মনেই করে না। এইসব পাশান, মানুষরূপী পশুদের কাছ থেকে শিশুদের রক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি।