সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই শহরে গ্রেফতার হয়েছেন বাংলাদেশ পুলিশের তালিকাভুক্ত পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান আহমেদ ওরফে মন্টি, যার নামে ইন্টারপোলের রেড নোটিসও ছিল। গ্রেফতার হওয়ার সময় তার হাতে ছিল ভারতীয় পাসপোর্ট। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ২০০১ সালে যে ২৩ জন ‘শীর্ষ সন্ত্রাসীর’ তালিকা করেছিল, জিসান আহমেদ তাদেরই একজন। এই পলাতক আসামিকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়েছিল। গত শতকের শেষ এবং এ শতকের শুরুর দিকের বছরগুলোতে ঢাকার মতিঝিল, মালিবাগ, রামপুরা, বাড্ডা, গুলশান, বনানীর ব্যবসায়ীদের কাছে জিসান ছিল আতঙ্কের নাম। তার চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজির নানা গল্প সে সময় মানুষের মুখে মুখে ঘুরত। ২০০৩ সালের ১৪ মে ঢাকার মালিবাগে একটি হোটেলে জিসানকে গ্রেফতারের জন্য অভিযানে গিয়ে গুলিতে নিহত হন গোয়েন্দা পুলিশের দুই কর্মকর্তা। ওই হত্যাকা-ে দেশজুড়ে আলোচনার জন্ম দেয়। এরপর জিসান গা ঢাকা দেন এবং ভারত হয়ে দুবাইয়ে চলে যান বলে ধারণা করা হয়।
সম্প্রতি ক্যাসিনোকা-ে যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া এবং ঠিকাদার জিকে শামীম গ্রেফতার হওয়ার পর জিসানের নাম নতুন করে আলোচনায় আসে। গত মাসের শেষে একটি সংবাদপত্রের প্রতিবেদনে বলা হয়, শামীম ও খালেদকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করে জিসানের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পায় বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ঢাকায় থাকার সময় জি কে শামীমের সঙ্গে জিসানের ভালো সম্পর্ক ছিল। বিদেশে পালিয়ে থাকার সময় শামীম তাঁকে ব্যবহার করতে শুরু করেন। যেকোনো ঠিকাদারি কাজ বাগাতে জিসানকে কাজে লাগান শামীম। ২০১২ সালে টেন্ডারবাজি নিয়ে মগবাজারে তিনজনকে খুন করে জিসানের লোকেরা। ওই খুনের পর জি কে শামীমের বাসায় তল্লাশি করে ডিবি পুলিশ। রাজউক থেকে শুরু করে রেলভবন, গণপূর্ত, ক্রীড়া পরিষদ, পানি উন্নয়ন বোর্ড, যুব ভবন, কৃষি ভবন, ওয়াসার বিভিন্ন অঞ্চলের টেন্ডারের নিয়ন্ত্রণ নিতে জিসানকে ব্যবহার করেন শামীম। জিসানের হয়ে ফ্রিডম মানিক ও আইমান টিটু সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করেন। একপর্যায়ে যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক গড়ে ওঠে জি কে শামীমের। তখন খালেদ মাহমুদের সঙ্গেও জিসানের ভালো সম্পর্ক ছিল। খালেদের মাধ্যমে জি কে শামীম যুবলীগের একটি পদ পেয়ে জিসানের সঙ্গে লেনদেন বন্ধ করে দেন। তাঁরা নিজেরা রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে কাজ বাগাতে শুরু করেন। একপর্যায়ে জিসানকে টাকা পাঠানো বন্ধ করে দিলে তিনি ক্ষুব্ধ হন। একপর্যায়ে জি কে শামীম ও খালেদকে হত্যার হুমকি দেন জিসান। এরপর ভয়ে শামীম ও খালেদ দেহরক্ষী নিয়ে চলাফেরা শুরু করেন। জিসানকে গ্রেপ্তারের জন্য ঢাকায় পোস্টারও সাঁটেন জি কে শামীম। এখন শামীম ও খালেদ জিজ্ঞাসাবাদে জিসানের সঙ্গে তাঁদের সম্পর্ক থাকার কথা স্বীকারও করেছেন।
জিসানকে ফিরিয়ে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে আরও অনেক কিছু জানা যাবে। পুলিশ বলছে, তাদের তরফ থেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তৈরি করে দুবাইয়ে পাঠানো হবে। পরে বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা সেরে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে। আমরা চাই এই ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়ায় যেন দীর্ঘসূত্রিতা না হয়। ভারত ও থাইল্যান্ড ছাড়া আর কোনো দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের অপরাধী প্রত্যর্পণ চুক্তি নেই। তবে দুবাইয়ের সঙ্গে বাংলাদেশ পুলিশের মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাগ্রিমেন্ট বা এমএলএর মাধ্যমে জিসানকে ফিরিয়ে আনা যাবে। বিদেশে পলাতক সন্ত্রাসীদের ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশের ব্যর্থতা প্রায়শই দেখা যায়। জিসানের ক্ষেত্রে যেন এমনটি না হয়। এজন্য সরকারের কুটনৈতিক প্রচেষ্টাকে জোরালো করতে আহ্বান জানাই।