খুলনার পাইকগাছায় নির্মিত হতে যাচ্ছে বহুল প্রত্যাশিত বঙ্গবন্ধু স্মৃতি ইকোপার্ক। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি বিজড়িত স্থান সংরক্ষণের অংশ হিসেবে করা হচ্ছে বঙ্গবন্ধু ইকোপার্ক।
উল্লেখ্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭০ সালে নির্বাচন উপলক্ষে নভেম্বর মাসের দিকে পাইকগাছায় সফর করেন। বিকাল ৩টায় জনসভায় যোগদান করার কথা থাকলেও তিনি লঞ্চ যোগে রাত সাড়ে ১০টার দিকে পাইকগাছায় পৌঁছান। লঞ্চ থেকে নেমে তিনি আওয়ামী লীগ অফিসে উপস্থিত সবার সঙ্গে মতবিনিময় করেন। রাত বেশি হয়ে যাওয়ায় নির্বাচনের পর আবারো আসার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি লঞ্চে উঠেন এবং লঞ্চ থেকেই জনতার উদ্দেশ্যে বক্তব্য দেন। এরপর ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দিলে সারা দেশে শুরু হয় রক্তক্ষয়ী মহান মুক্তিযুদ্ধ। গ্রেপ্তার হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
দীর্ঘ ৯ মাসের সশস্ত্র রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ও অসংখ্য আত্মত্যাগের বিনিময়ে ১৬ই ডিসেম্বর বাঙ্গালী জাঁতি অর্জন করে মহান বিজয়। স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানী কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন। স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করার পর বঙ্গবন্ধু যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশের পুণঃ গঠনে আত্মনিয়োগ করেন। ১৯৭২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি তিনি মোংলা পোর্টের একটি বিশেষ লঞ্চ যোগে পাইকগাছা সফর করেন। এ সময় তিনি তার একান্ত সহোচর, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, ভাষা সৈনিক ও তৎকালীন সাবেক এমএনএ এমএ গফুরকে সাথে নিয়ে উপজেলার আলমতলা-লস্কর খেয়াঘাট সংলগ্ন এলাকায় ওয়াপদার বেড়িবাঁধের নির্মাণ কাজের শুভ উদ্বোধন করার মাধ্যমে ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত সুখী সমৃদ্ধিশালী বাংলাদেশ গড়ার শুভ সূচনা করেন। এ সময় মোমিন উদ্দীন, মুক্তিযোদ্ধা স ম বাবর আলী ও শেখ শাহাদাৎ হোসেন বাচ্চুসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে বঙ্গবন্ধু উপজেলা সদরের পানি উন্নয়ন বোর্ডের রেস্ট হাউজে বিশ্রাম নিয়ে ঢাকায় ফিরে যান। অনেকেই বলে থাকেন, স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করার পর বঙ্গবন্ধু পাইকগাছা থেকেই উন্নয়ন কাজ শুরু করেন। স্বাধীনতার প্রায় অর্ধশত বছর হতে চললেও পাইকগাছায় বঙ্গবন্ধু স্মৃতি বিজড়িত স্থানসমূহ সংরক্ষণের জন্য ইতোপূর্বে তেমন কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি।
বর্তমান সংসদ সদস্য আক্তারুজ্জামান বাবু এবং উপজেলা প্রশাসন বঙ্গবন্ধু স্মৃতি বিজড়িত স্থান সংরক্ষণের উদ্যোগ নেন। বঙ্গবন্ধু স্মৃতি বিজড়িত স্থানে একটি দৃষ্টি নন্দন ইকোপার্ক নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। মহৎ এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে উপজেলা আইনশৃংখলা ও সাধারণ সভায় প্রস্তাবনা আকারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে এলাকাবাসীর বহুল প্রত্যাশিত বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজড়িত স্থান সংরক্ষণ ও নির্ধারিত স্থানে “বঙ্গবন্ধু স্মৃতি ইকোপার্ক” নির্মাণ।
উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আনোয়ার ইকবাল মন্টু জানান, দেরিতে হলেও বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজড়িত স্থানে যে ইকোপার্ক নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছেন নিঃসন্দেহে এটি একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জুলিয়া সুকায়না জানান, বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি সংরক্ষণে ইতোমধ্যে ভূমি অধিগ্রহণ থেকে শুরু করে প্রকল্প প্রস্তাবনা সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর প্রেরণ করা হয়েছে।
সংসদ সদস্য আক্তারুজ্জামান বাবু বলেন, বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশকে আলাদাভাবে ভাবার কোনো সুযোগ নাই। কারণ, মহান এ নেতার জন্ম না হলে আমরা পেতাম না স্বাধীন সার্বভৌমত্ব বাংলাদেশ। আমি এমপি হতে পারতাম না। পার্কের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হলে এক দিকে এলাকার মানুষের চিত্ত বিনোদনের চাহিদা পূরণ হবে। অপরদিকে, তরুণ ও ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বঙ্গবন্ধুর জীবন ও আদর্শ সম্পর্কে জানতে পারবে।