প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে সম্পাদিত চুক্তি নিয়ে ফেসবুকে মন্তব্য করায় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ^বিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার রেশ কাটেনি। এরই মধ্যে একই বিষয়ে মন্তব্য করায় খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য শেখ বাহারুল আলমকে দল থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শেখ বাহারুল আলম ভারত ও বাংলাদেশের সাম্প্রতিক চুক্তি নিয়ে ফেসবুকে লেখা পোস্ট করেছেন। এজন্য তাকে দল থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। কেন বাহারুলকে দল থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের জন্য কেন্দ্রে সুপারিশ করা হবে না- আগামী সাত দিনের মধ্যে তা জানাতে নোটিস দেওয়া হয়েছে তাকে।
গত ৫ অক্টোবর দিল্লীর হায়দ্রারাবাদ হাউজে বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে দুই দেশের মধ্যে ছয়টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। ভারতের ত্রিপুরায় এলপিজি রপ্তানি, ফেনী নদী থেকে ১ দশমিক ৮২ কিউসেক পানি ত্রিপুরার একটি শহরে সরিয়ে নেওয়ার সুযোগ, চট্টগ্রাম ও মোংলা সমুদ্র বন্দর ভারতকে ব্যবহারের সুযোগ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে এসব চুক্তিতে। বিএমএ খুলনা শাখার সভাপতি শেখ বাহারুল আলম এর প্রতিক্রিয়ায় এক ফেসবুক পোস্টে লেখেন, বাংলাদেশ-ভারত যৌথ চুক্তির দিকে দৃষ্টিনিবদ্ধ করলে স্পষ্ট হয়- সরকারের সাথে চুক্তিবদ্ধ হওয়া আর জনগণের স্বার্থে চুক্তিবদ্ধ হওয়া এক নয়।
বাহারুল আলমের মন্তব্য সরকারের বিরুদ্ধে গেছে। তবে বাহারুল সরকার দলীয় লোক হওয়ায় তার এ মন্তব্যকে আত্মসমালোচনা হিসেবে গ্রহণ করার উপযুক্ত কারণ রয়েছে। সরকার যা করবে তার সবগুলোই যে নির্ভুল হবে এমনটিও নয়। ভুল কাজগুলোকে চিহ্নিত করা শুধু বিরোধী দলের কাজ নয়। গণমাধ্যম এবং সাধারণ মানুষের পাশাপাশি সরকার দলীয় লোকও এই কাজটি করতে পারে, সংবিধান তাকে সেই স্বাধীনতা দিয়েছে।
রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের জন্য প্রত্যেকটি নাগরিকেরই অবদান রয়েছে। অন্য দেশের সঙ্গে চুক্তি বা সমঝোতা দেশের জন্য কতটুকু উপকারী তা নিয়ে যে কেউই মন্তব্য করতে পারে। মানুষের মত প্রকাশের এই স্বাধীনতায় কারও হস্তক্ষেপ করা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার পরিপন্থি। সরকার গঠনকারী দলে কিছু সুবিধাভোগী মানুষ থাকে যারা অত্যুৎসাহী হয়ে এমন কতগুলো কাজ করে যা সরকারকেও বিব্রত করে। আমরা মনে করি, আবরার হত্যা এবং বাহারুলকে দল থেকে বহিষ্কার আওয়ামী লীগের বিব্রত হওয়ার জন্য যথেষ্ট।
অন্য দেশ যে সব বিষয়ে বাংলাদেশের মানুষের স্বার্থকে অগ্রাহ্য করবে, ব্যক্তিগত অবস্থান থেকে যে কেউ সেটির সমালোচনা করতে পারে। এর ফলে সরকারের কোনো ক্ষতি বা চুক্তির ক্ষেত্রে কোনো প্রভাব ফেলবে বলে মনে হয় না। বরং এই সমালোচনাগুলোই ভবিষ্যতের জন্য সতর্কতার বার্তা হিসেবে কাজ করবে বলে আমরা মনে করি। তাই মানুষের মত প্রকাশের ক্ষেত্রে বাধা, বহিষ্কার, নির্যাতন-মারপিট এবং হত্যাকে সমর্থন করি না। আমরা চাই সাংবিধানিক অধিকারে মানুষ যেকোনো বিষয়ে তাদের নিজস্ব মত প্রকাশ করতে পারবে, এতে কারো হস্তক্ষেপ কাম্য নয়।