কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস পেয়ে আবেগ আপ্লুত কুড়িগ্রাম জেলাবাসী। স্বাধীনতার ৪৮বছর পর এই প্রথম কুড়িগ্রাম-ঢাকা-কুড়িগ্রাম আন্তঃনগর ট্রেন পেতে যাচ্ছে জেলাবাসী। আগামীকাল (১৬অক্টোবর) ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বহুল প্রতীক্ষিত আন্তঃনগর ট্রেন কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেসের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সফল করতে চলছে বিভিন্ন প্রস্তুতি। ট্রেন চালু হওয়ায় ভীষণ খুশি বইছে উত্তরাঞ্চলের পিছিয়ে পড়া এই জনপদের মানুষজন।
দেশের দারিদ্রসীমার নিচে বসবাসকারী উত্তরাঞ্চলের সর্বশেষ জেলা কুড়িগ্রাম। কুড়িগ্রাম-ঢাকা-কুড়িগ্রাম একটি আন্তঃনগর ট্রেন চালু হতে যাওয়ায় উচ্ছ্বসিত এই জনপদের সর্বস্তরের মানুষ। এই ট্রেন চালু নিয়ে দারিদ্রপীড়িত এই জেলার মানুষজন তাদের আর্থসামাজিক উন্নয়নের স্বপ্ন দেখছে। আন্তঃনগর ট্রেন চালুর দীর্ঘদিনের দাবী ছিল জেলার সাধারণ মানুষের। ২০০৯সালে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০১৫ হতে ২০১৭ সাল পর্যন্ত তিন বার কুড়িগ্রাম সফর করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি তার সফরকালে জেলার উন্নয়নে নানা প্রতিশ্রুতির পাশাপাশি ঢাকা-কুড়িগ্রাম সরাসরি একটি আন্তঃনগর ট্রেন চালুরও প্রতিশ্রুতি দেন। তার এই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বুধবার থেকে পূর্ণাঙ্গ আন্তঃনগর ট্রেনের সুবিধা পেতে যাচ্ছে জেলাবাসী। এর আগে ২০১৮ সালে রংপুর এক্সপ্রেসের একটি সাটল ট্রেন চালু হয় কুড়িগ্রাম থেকে কাউনিয়া রেল স্টেশন পর্যন্ত। আন্তঃনগর ট্রেন চালু হলে জেলাবাসীর দীর্ঘদিনের যোগাযোগ ব্যবস্থার দৈন্যদশা থেকে মুক্তি এবং তাদের ভাগ্যোন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে এই আন্তঃনগর ট্রেনটি।
টগরাইহাটের বাসিন্দা আবুল হোসেন(৬৫), সুজা মিয়া (৪৫) মকবুল হোসেন(৭৫) ও আবদুস সালাম(৫৫) জানান, বাহে হামরা স্বপ্নেও ভাবি নাই কুড়িগ্রাম-ঢাকা ট্রেন চালু হবে। কিন্তু স্বাধীনতার পর এই প্রথম ঢাকা-কুড়িগ্রাম সরাসরি চালু হওয়ায় হামরা খুব খুশি। কেননা ২০০১ সালে বিএনপির সময় জেলার লোকাল ট্রেনগুলা সব বন্ধ করি দিছিল।
যার ফলে অবহেলিত এই জেলার মানুষ আরো অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়েছে। আজ আওয়ামী লীগ আসিয়া আবারো হামার মনের আশা পূরণ করিল। দীর্ঘ দিনের স্বপ্ন পূরণ হওয়ায় কম খরচে রাজধানী যাওয়া-আসাসহ জেলার ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে। এছাড়াও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির পাশাপাশি জেলার মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তনে সহায়ক ভূমিকা রাখবে এই আন্তঃনগর ট্রেনটি।
শিক্ষার্থী রাকিব, মৌসুমি, মিম, বুলবুলি আক্তারসহ অনেকেই জানান, এই ট্রেন চালু হওয়ায় সাধারণ শিক্ষিার্থীদের জন্য অনেক উপকারে আসবে। দীর্ঘদিন থেকে যোগাযোগ ব্যবস্থায় চরম ভোগান্তি ছিল। এখন সময় মত শিক্ষার্থীরা বিশ^বিদ্যালয় গুলোতে গিয়ে ভর্তি পরিক্ষা দিতে পারবে। এতে করে বাড়তি অর্থ ব্যয় হবে না।
বাংলাদেশ রেলওয়ে বিভাগ সূত্রে জানায়, নতুন এই আন্তঃনগর ট্রেনটি চলবে ঢাকা-কুড়িগ্রামের ২৮৬.৮ মাইল বা ৪৬১ কিলোমিটার দুরত্বে। প্রস্তাবিত কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস সপ্তাহে ৬ দিন সকাল ৭টা ২০ মিনিটে ঢাকার উদ্দেশে ৭৯৮নং ট্রেনটি ৬৫৩টি আসন নিয়ে কুড়িগ্রাম ছাড়বে। আর ঢাকা ৭৯৭নং ট্রেন ৬৩৮টি আসন নিয়ে কুড়িগ্রামের উদ্দেশে রওনা দেবে রাত ৮টা ৪৫ মিনিট। শুধুমাত্র বুধবার কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস বন্ধ থাকবে। প্রস্তাবিত এ ট্রেনের স্টপিজ হবে রংপুর-বদরগঞ্জ-পার্বতীপুর-জয়পুরহাট-সান্তাহার-মাধবনগর-ঢাকা-বিমানবন্দর স্টেশনে। কুড়িগ্রাম থেকে ঢাকা যাত্রাকালীন ৬৫৩টি আসন এবং ঢাকা থেকে কুড়িগ্রাম ফেরার পথে ৬৩৮টি আসন থাকবে। এরমধ্যে শোভন চেয়ার ৫১০ টাকা, এসি চেয়ার ৯৭২ টাকা, এসি সিট ১১৬৮ টাকা এবং এসি বাথ ১৮০৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেসের উদ্বোধন শেষে আন্তঃনগর ট্রেনের বাণিজ্যিকভাবে কার্যক্রম শুরু হবে ১৭ অক্টোবর থেকে।
বাংলাদেশ রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চল জেনারেল ম্যানেজার, মো: হারুন অর রশীদ জানান, রেল লাইনের কিছু সমস্যা আছে তবে ট্রেনের গতি বাড়ানোসহ অন্যান্য যে সমস্যাগুলো রয়েছে তা আমরা দ্রুত শেষ করব। বুধবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আন্তঃনগর ট্রেনের উদ্বোধন করবেন তার প্রস্তুতি ইতোমধ্যে শেষ পর্যায়।
রেল নিয়ে কুড়িগ্রামবাসীর দীর্ঘদিনের অভিযোগ দূর করা হবে জানিয়ে রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন বলেন, এতদিন রেল পেছনের দিকে ছিল, এখন আমরা সামনের দিকে চলা শুরু করেছি। ‘কুড়িগ্রামে আন্তঃনগর ট্রেন চালুর মাধ্যমে কুড়িগ্রাম রেল ব্যবস্থার সরাসরি নজরে চলে এলো। সম্ভাব্য সব ধরণের সংস্কার করে কুড়িগ্রামে রেলের অব্যবস্থা দূর করা হবে বলেও জানান তিনি।