জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বরখাস্ত হওয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা টি. আলী কলেজে বরখাস্ত হওয়া সেই সভাপতি সাদেক আলী অবৈধভাবে কলেজের প্যাড ও সিল ব্যবহার করে জাল জালিয়াতির মাধ্যমে আবারও পরিচালনা পর্ষদের এডহক কমিটির সভাপতি মনোনীত হয়েছেন। এতে করে কলেজের শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এ ঘটনায় কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ গত রোববার রাতে কসবা থানায় সাধারণ ডাইরী করেছেন।
নিয়ম অনুযায়ী কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও অধ্যক্ষের যৌথ স্বাক্ষরের মাধ্যমে এডহক কমিটি কেন হবে যথাযথ কারণ দেখিয়ে সভাপতি নিযুক্ত করার প্রস্তাব জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠাতে হবে। ওই প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে সভাপতি নিযুক্ত হওয়ার কথা।
কলেজ সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১৫ সনের ১৫ অক্টোবর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সাদেক আলী সভাপতি মনোনীত হয়েছেন। তিনি সভাপতি মনোনীত হওয়ার পর থেকেই কলেজে তিনি একক স্বেচ্ছাচারিতা করে আসছিলেন। অধ্যক্ষের পদ শূণ্য হওয়ায় ২০১৮ সনের জুলাই মাসে অন্যায় ভাবে একক সিদ্ধান্তে উপাধ্যক্ষ ও জৈষ্ঠ শিক্ষকদের বাদ দিয়ে ৬ষ্ঠ শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেন। সেই থেকে কলেজে ছাত্র-শিক্ষক ও অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। এতে করে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন আন্দোলন হয়। ওই সময় প্রথম আলোসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই সময় স্থানীয় সাংসদ, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে তদন্ত করে সত্যতা পান।
পরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় গত বছরের ২৬ জুলাই সভাপতি সাদেক আলীকে তাঁর পদ থেকে বরখাস্ত করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে সভাপতির পদে নিযুক্ত করেছেন।
এ নিয়ে সাদেক আলী উচ্চ আদালতে রীট পিটিশন দায়ের করে ওই আদেশ স্থগিত করেন। পরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সুপ্রীম কোর্টের আপীল ডিভিশনে আপীল করে স্থগিত আদেশটিকে স্থগিত করে দেন। পরবর্তীতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এক আদেশ করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে সভাপতি পদে দায়িত্ব পারিচালনা করতে নির্দেশ দেন। ওই কমিটির মেয়াদকাল গত ১৪ অক্টোবর শেষ হয়েছে। তার আগেই ৭ অক্টোবর বৈঠক করে যথাযথ নিয়ম অনুযায়ী এডহক কমিটি কেন করবেন তার ব্যাখ্যা দিয়ে এডহক কমিটির সভাপতি পুনরায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নাম প্রস্তাব পাঠায়।
এদিকে বরখাস্ত হওয়া সেই সভাপতি সাদেক আলী গত গত বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) কলেজের প্যাড ও সিল ব্যবহার করে নিজেই সভাপতি ও অধ্যক্ষের সহি দিয়ে তাকে সভাপতি বানানোর প্রস্তাব জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠান। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় গত রোববার (২০ অক্টোবর) সাদেক আলীকে সভাপতি মনোনীত করে কলেজের মেইলে একটি চিঠি পাঠায়। এতে করে আবারও ছাত্র-শিক্ষক ও অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় অবৈধভাবে কলেজের প্যাড ও সিল ব্যবহার করায় গত রোববার রাতে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. আবুল কালাম আজাদ কসবা থানায় একটি সাধারণ ডাইরী করেছেন।
কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, কলেজের প্যাড ও সিল ব্যবহার করে সাবেক সভাপতি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন আবেদন করতে পারে না। তিনি অবৈধভাবে সভাপতি মনোনীত হয়েছেন। এতে করে যেকোন মুহুর্তে আইনশৃঙ্খলা অবনতি ঘটতে পারে। এ কারণে তিনি থানায় সাধারণ ডাইরী করেছেন।
কলেজের শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ইংরেজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মো. আলমগীর ওসমান ভূইয়া বলেন, তিনি পূর্বেও সভাপতি থাকাকালীন সময়ে স্বেচ্ছাচারিতা করেছেন। পরিচালনা পর্ষদের নিয়ম নীতি তোয়াক্কা না করেই একক সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন। এতে করে কলেজের পড়াশুনাসহ যেকোন কার্যক্রমের বিঘœঘটে। তিনি অবৈধভাবে আবারও সভাপতি হওয়ায় যে কোন সময় বিশৃংখলার সম্ভাবনা রয়েছে।
সাদেক আলী মুঠোফোনে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে সভাপতি নিযুক্ত হওয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন, কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই তাকে সভাপতি নিযুক্ত করেছেন।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শক মো. মনিরুজ্জামান বলেন, কলেজ পরিচালনা পর্ষদের প্রস্তাবনা মাধ্যমে কমিটি গঠনের বিধান রয়েছে। কসবা টি..আলী কলেজের পরিচালনা পর্ষদের মেয়াদ শেষ হওয়ায় সাদেক আলীকে সভাপতি নিযুক্ত করা হয়েছে। যেহেতু তিনি আগেও সভাপতি ছিলেন। বরখাস্ত হওয়া ব্যক্তিকে কিভাবে সভাপতি নিযুক্ত করা হয়েছে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এবার যদি ্আবারও অন্যায় কোন কাজের সাথে জড়িত হয় আবারও বাদ যাবে।
কসবা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আসাদুল ইসলাম বলেন, কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বাদী হয়ে থানায় একটি সাধারণ ডাইরী করেছেন। অভিযোগটি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কসবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাসুদ উল আলম বলেন, কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই বৈঠক করে যথাযথ নিয়ম অনুযায়ী এডহক কমিটির প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। সেখানে সাদেক আলী সাহেবের নাম প্রস্তাব করা হয়নি। তাকে অবৈধভাবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি নিযুক্ত করেছেন।