১৯৭১ সালের ২৩ অক্টোবর এই দিনে যশোরের মনিরামপুরে পাকহানাদার বাহিনীর হাতে এদেশের পাঁচ সূর্য্য সন্তান আসাদ, তোজো, শান্তি, মানিক ও ফজলু শহীদ হন। কিন্তু স্বাধীনতার ৪৮ বছর পেরিয়ে গেলেও স্বাধীনতা পরবর্তী কোন সরকার এ সকল শহীদদের স্মৃতি রক্ষার্থে রাষ্ট্রীয়ভাবে কোন উদ্যোগ গ্রহন করেননি।
জানাযায়, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধচলাকালীন সময় ২৩ অক্টোবর সকালে যশোরের মনিরামপুর উপজেলার রতেœস্বরপুর গ্রামের আবদুর রহমানের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিল স্বাধীনতাকামী নিরস্ত্র এ পাঁচ যুবক। কিন্তু পাকহানাদার বাহিনীর দোসর রাজাকারদের চোখ এড়াতে পারেনি তারা। স্থানীয় রাজাকার কমান্ডার আবদুল মালেক ডাক্তারের নেতৃত্বে মেহের জল্ল¬াদ, ইসহাক, আবদুল মজিদসহ বেশ কয়েকজন রাজাকার তাদের আশ্রয়স্থল চারিদিক থেকে ঘিরে ফেলে তাদেরকে আটক করে। এরপর তাদেরকে চোখ বেঁধে চিনাটোলা বাজারের পূর্বপাশে হরিহরনদীর তীরে নেয়া হয়। সেখানে নিয়ে বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে তাদের শরীরে লবণ দেয়াসহ তাদের ওপর অমানবিক নির্যাতন চালানো হয়।
ওই নির্যাতনের প্রত্যক্ষদর্শী চিনাটোলার শ্যামাপদ নাথ (৬৪) জানান, আমি সে সময় ২৫ থেকে ২৬ বছরের টগবগে একজন যুবক ছিলাম। তখন আমি চিনাটোলা বাজারে মুটেগিরির কাজ করতাম। ওইদিন রাজাকারদের নির্দেশে ছিল হরিহরনদীর ওপর ব্রীজ আমাকে পাহারা দিতে হবে। পাহারারত অবস্থায় দেখলাম চোখ বাঁধা অবস্থায় মুক্তিসেনা আসাদুজ্জামান আসাদ, মাশুকুর রহমান তোজো, সিরাজুল ইসলাম শান্তি, আহসান উদ্দিন মানিক ও ফজলু দফাদার’কে ব্রীজের পাশে আনা হলো। তার কিছুক্ষন পর রাজাকার কমান্ডারের বাঁশি বেঁজে উঠার সাথে সাথে গর্জে ওঠে রাইফেল। মুহুর্তের মধ্যে পাঁচ তরতাজা যুবকের নিথরদেহ মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অযতেœ-অবহেলায় পড়ে আছে শহীদদের সেই বধ্যভূমি। শহীদ স্মৃতি সংরক্ষন কমিটির আহ্বায়ক কমরেড মশিয়ার রহমান বলেন, স্বাধীনতার পর শহীদদের স্মৃতি সংরক্ষনের জন্য বামদলের পক্ষ থেকে বধ্যভূমিতে স্মৃতিস্তম্ব নির্মাণ করা হয়েছে। যেখানে প্রতি বছর ২৩ অক্টোবর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। কিন্তু রাষ্ট্রীয়ভাবে আজ পর্যন্ত শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের কোন উদ্যোগ গ্রহন করা হয়নি।
এ ব্যাপারে মনিরামপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার এম.এম নজরুল ইসলাম জানান, উল্লে¬¬খিত পাঁচ শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন এবং তাদের কবরসহ উপজেলার সকল শহীদদের স্মৃতি ও বদ্ধভূমি সংরক্ষনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে দাবী জানানো হয়েছে।