মোটা অংকের যৌতুক চেয়ে না পাওয়ায় স্ত্রীকে মারধর করার অভিযোগ পাওয়া গেছে ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইনামুল হাসানের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় স্ত্রী শীলা খানম বাদি হয়ে গোপালগঞ্জের আদালতে মামলা করেছেন। মামলায় ইনামুল ছাড়াও তার ভাই মাহাবুব আলম, ভাইয়ের স্ত্রী শার্মিলা বেগমকেও আসামি করা হয়েছে। গত সোমবার আসামিরা গোপালগঞ্জের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জামিনের আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করে।
স্থানীয় সূত্রে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানি উপজেলার বিশ্বনাথপুর গ্রামের আবু জাফর মোল্যার কলেজ পড়-য়া মেয়ে শীলা খানমকে এ বছরের ২৫ মে নানা ছলনায় বিয়ে করেন ইনামুল হাসান।
মামলার বিবরণীতে বলা হয়, বিয়ের সময় ইনামুল হাসান শ্বশুরের কাছ থেকে দুই লাখ টাকা নগদ যৌতুক আদায় করেন। স্ত্রীকে ঘরে তুলে নেওয়ার কিছুদিন পর ফের আরও দুই লাখ টাকা নগদ দাবি করেন ইনামুল হাসান। যৌতুকের টাকা আদায়ের জন্য তিনি স্ত্রী শীলাকে চাপ দিতে থাকেন। পরে ইনামুল, তার ভাই মাহবুব আলম, ও ভাইয়ের স্ত্রী শার্মিলা বেগম তাকে মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দেয়।
শীলা খানমের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, গত ঈদের আগে মেয়ে, মেয়ের বাবা এবং মেয়ের বড় বোন ইনামুলদের বাড়িতে যান। এ সময় ইনামুলের বাবা গোলাম কুদ্দুস বলেন, ‘বউ বাড়ি এসেছে তাকে রেখে দেও। যা হবার হয়েছে।’ এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে ইতঃপূর্বে সন্ত্রাসী কাজে অভিযুক্ত ইনামুল ও তার ভাই মাহবুব বাবাকে ঘর থেকে মারতে মারতে উঠোনে নিয়ে আসে। এ ঘটনায় সবাই স্তম্ভিত হয়ে যায়। পরে মেয়ে, মেয়ের বাবা ও বোন ফিরে আসে।
ওই ঘটনার পর বিভিন্ন সময় ইনামুল, তার ভাই মাহবুব মেয়ে পক্ষের কাছে মোটা অংকের টাকা, প্রাইভেট কারের দাবি করে। তা না হলে তারা মেয়েকে ঘরে ফিরিয়ে নিতে অস্বীকৃতি জানায়। মেয়েপক্ষ এই দাবিপূরণে অপারগতা দেখালে ছেলেপক্ষ আরও ক্ষুব্ধ হয় বলে ভুক্তভোগী পরিবার সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে ইউনিয়ন পরিষদের বরাদ্দ লোপাট, আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বরাদ্দ দিতে উৎকোচ আদায়, টিআর-কাবিখা লুটের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আছে চেয়ারম্যান ইনামুল হাসানের বিরুদ্ধে। এ ছাড়া গোপালপুর ও দিগনগর খেয়া ঘাটের ইজারার রাজস্ব আত্মসাৎ, ইউপি কার্যালয়ে মদ ও জুয়ার আসরের জন্য বখাটেদের কাছে কক্ষ ভাড়া দেওয়া, অর্থের বিনিময়ে ভিজিডি কার্ড বিতরণে স্বজনপ্রীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তদন্ত করছে ফরিদপুরের স্থানীয় সরকার বিভাগ।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ইউনিয়ন পরিষদের কোনো পদে না থাকলেও ইনামুলের ভাই মাহাবুব আলম, তার খালাতো ভাই আবুল হাসান স্থানীয় পর্যায়ে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। মাহাবুব আলম ঢাকায় মিরপুর দারুস সালাম থানা যুবদলের সদস্য, বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য এস এ খালেকের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠজন। ভাই চেয়ারম্যান হওয়ার পর তিনি ঢাকার চেয়ে গ্রামেই বেশি থাকছেন। সেখানে খালাতো ভাই হাসানকে সঙ্গে নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের বরাদ্দে অযাচিত হস্তক্ষেপসহ বিভিন্ন খাত থেকে উৎকোচ ও কমিশন আদায়ে কাজ করছেন। এসব অভিযোগও তদন্ত হচ্ছে। এ ব্যাপারে জানতে চেয়ে কল করা হলে ইনামুল হাসানের মুঠোফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া গেছে।