বগুড়ায় আবারো এক ডাক্তারের ভুল চিকিৎসার অভিযোগে তাউহিদ হাসান ওরফে ইয়াবাবু(৯) নামের এক শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি ঘটেছে বৃহস্পতিবার রাতে শহরের ঠনঠনিয়া এলাকার ডক্টরস ক্লিনিক-(ইউনিট-২) নামের একটি বেসরকারী চিকিৎসা কেন্দ্রে।
নিহত শিশুর বাবা ও তার পরিবারের অভিযোগ ভুল চিকিৎসার কারণে তার সন্তানের মৃত্যু হয়েছে।
পুলিশ বলছে ,অভিযোগ পেলে এবং নিহতের সঠিক মৃত্যুর কারণ সমপর্কে নিশ্চিত হলে এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এসময় জনতার তোপের মুখে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভিগীয় প্রধান (নাক কান ও গলা )ডাঃ সাঈদুজ্জামান ও ডাঃনিতাই চন্দ্রকে আটক করেছে পুলিশ।
নিহত তাউহিদ হাসান সারিয়াকান্দি উপজেলার নারচী গ্রামের ফিরোজুল ইসলামের ছেলে। সে বর্তমানে শাহজাহানপুর এলাকার শাহীন একাডেমিতে তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী। সাইফুল ইসলাম ছেলের লিখা পাড়ার জন্য পরিবার নিয়ে বর্তমানে শাহাজাহনপুর উপজেলার মাঝিড়া এলাকায় বস্বাবাস করছিলেন।
নিহতের পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, টনসিলজনিত অপারেশনের জন্য নিহত তাউহিদ হাসানকে বৃহস্পতিবার বিকালে তার বাবা শহরের ঠনঠনিয়া এলাকার ডক্টরস ইউনিট-২ নামের বেসরকারী ক্লিনিকে ভর্তি করান। রাত সাড়ে ৮টার দিকে তাউহিদ হাসানকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ডাঃ সাঈদুজ্জামান তাউহিদ হাসানের টনশিল অপারেশন করেন। তার পর থেকে থেকে শিশুটির জ্ঞান আর ফিরে আসেনি।ধারনা করা হচ্ছে অপারেশন থিয়েটারেই শিশুটির মৃত্যু হয়েছে। নিহতের পরিবার ও তার বাবা
ফিরোজুল ইসলাম অভিযোগ করে সাংবাদিকদের জানান, অপারেশনের পর মিথ্যা কথা বলে তাদের বাচ্চাকে অতিরিক্ত সময় অপারেশন থিয়েটারে রাখার পর তাকে একটি আলাদা রুমে রাখা হয়। এ সময় সেখানে কাউকে যেতে দেয়া হয়নি। পরে শিশুর পরিবারকে জানানো হয় এখন সেখানে যাওয়া যাবেনা। এ সময় ক্লিনিক কর্তৃর্পক্ষের গোপনিয়তা এবং শিশুটির বিষয়ে কিছু জানতে না দেবার কারণে পরিজনদের উৎকণ্ঠা বেড়ে যায়। একপর্যায়ে তাদের বলা হয় শিশুটি ভাল আছে। পরে শিশুর পরিবার একরকম জোর করে রুমে ঢুকে শিশুটির শরীরে হাত দিলে শিশুটির শরীর বরফের মত হিম শিতল অবস্থায় দেখে বুঝতে পারে বেশ সময় আগেই শিশুটি মারা গেছে।ঘটনার প্রায় ৩ঘন্টা পর শিশুটিকে মৃত ঘোষনা করা হয়। এ সময় নিহত শিশুটির পরিবার পরিজনদের কান্নাকাটি আহাজারিতে আকাশ বাতাশ ভারী হয়ে ওঠে।
নিহত শিশুর পিতা ফিরোজুল ইসলাম সংশ্লিষ্ট ডাক্তারের বিরুদ্ধে ভুল চিকিৎসা অভিযোগ করে এফএনএস’কে বলেন, তাদের দাবীকৃত টাকা আগাম পরিশোধের পরও তার শুস্থ্য, তরতাজা বাচ্চাকে মেরে ফেলা হয়েছে। এ ব্যপারে ফিরোজুল আরো জানান, তাদের ছেলের মৃত্যু হবার পরেও তার মৃত্যু ঘটনা গোপন করে তাদের মিথ্যা কথা বলা হয়েছে।
ঘটনার পর স্বজনদের কান্না চিৎকার চেঁচামেচিতে সেখানে শ’শ’ লোক ভীর করে এবং ক্লিনিকে চড়াও হবার চেষ্টা করে। ঘটনার খবর পেয়ে বগুড়া সদর থানার কর্মকর্তা ইনচার্জ (ওসি সার্বিক) এসএম বদিউজ্জামার ও ইন্সপেক্টর (তদন্ত)সহ পুলিশ দ্রুত ঘটনা স্থলে পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনেন।রাত ১২টার দিকে জনতার রোষের মুখে পুলিশ বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভিগীয় প্রধান (নাক কান ও গলা )ডাঃ সাঈদুজ্জামান ও ডাঃ নিতাইকে আটক করে থানায় নেয়।
বগুড়া সদর থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) রেজাউল ইসলাম রেজা সংবাদ সংস্থা এফএনএস’কে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, নিহতের পরিবারের পক্ষে অভিযোগ করা হলে অভিযোগের ভিত্তিতে আটক ডাক্তারের বিরুদ্ধে অভিযোগ গ্রহন করা হবে এবং তা মামলা আকারে নথি ভুক্ত করা হবে।
এদিকে ,অভিযুক্ত ডাক্তার বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভিগীয় প্রধান (নাক কান ও গলা )ডাঃ সাঈদুজ্জামান আত্বপক্ষ সমর্থন করে বলেন, এনেসথেসিয়ার কারণে শিশুটির মৃত্যু ঘটে থাকে পারে। নিহতের লাশ ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ।
উল্লেখ্য, গত ৮এপ্রিল অনূরুপ এক ঘটনায় অন্য একটি নাম স্বর্বস্ব ক্লিনিকে উল্লিখিত ডাক্তারের ভুল অপারেশনের পর পরই অনুরুপ বয়সী এক শিশুর মৃত্যু ঘটেছিল। ওই ঘটনায় ফুঁসে ওঠেছিল বগুড়ার মানুষ। ওইসময় ওই ক্লিনিকে ব্যপক ভাংচুর চালায় বিক্ষুব্ধ জনতা। বিক্ষোভ প্রতিবাদ সমাবেশের পর অনুমোদন বিহীন ক্লিনিকটি সিলগালা করে দেয়া হয়।
এদিকে শেষ খবর পর্যন্ত শুক্রবার সকালে বগুড়া সদর থানায় আপস মিমাংশায় উভয় পক্ষ সমঝোতায় এলে সদর থানা থেকে আটক ডাক্তারদের মুক্তি ছেড়ে দেয়া হয় বলে নিশ্চিত করেন থানার কর্মকর্তা ইনচার্জ (ওসি সার্বিক)।