২০২০ সালের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃতের হার অর্ধেকে কমিয়ে আনার লক্ষ্যে জাতিসংঘ কর্তৃক ডিকেড ঘোষণা করে ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি-এর অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। বাংলাদেশ সরকার এই ডিকেড অব এ্যাকশন বাস্তবায়নের ঘোষণাপত্রে সাক্ষর করে। সড়ক নিরাপত্তা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে মূল অথরিটি হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। পাশাপাশি নিসচাও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে আসছে। এরই আলোকে সরকার তথা সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং নিরাপদ সড়ক চাই’র মধ্যে সড়ক আইন বাস্তবায়ন ও জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ, পথচারীদের যথাযথভাবে সড়ক ব্যবহারে অভ্যস্ত করার আলোকে গৃহীত কর্মসূচির বাস্তবায়ন ও অগ্রগতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত গোল টেবিল বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে। ওই গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের মাননীয় সচিব মোঃ নজরুল ইসলাম। সভাপতিত্ব করবেন নিসচা প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন নিসচার যুগ্ম মহাসচিব লিটন এরশাদ। বক্তব্য রাখেন নিসচা মহাসচিব সৈয়দ এহসান- উল হক কামাল, উপদেষ্টা আয়ুবুর রহমান খান ও এ এইচ নোমান।
২০২০ সালের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃতের হার অর্ধেকে কমিয়ে আনার লক্ষ্যে জাতিসংঘ ডিকেড ঘোষণা করেছে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশে এসডিজি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার এই ডিকেড অব এ্যাকশন বাস্তবায়নের ঘোষণাপত্রে সাক্ষরও করেছে। সড়ক নিরাপত্তা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে মূল অথরিটি হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। পাশাপাশি নিসচাও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে আসছে। এরই আলোকে সরকার তথা সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং নিরাপদ সড়ক চাই’র মধ্যে সড়ক আইন বাস্তবায়ন ও জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ, পথচারীদের যথাযথভাবে সড়ক ব্যবহারে অভ্যস্ত করার আলোকে গৃহীত কর্মসূচির বাস্তবায়ন ও অগ্রগতি পর্যালোচনা জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নিরাপদ সড়ক চাই নিসচা দীর্ঘ ২৬ বছর ধরে সড়ক দুর্ঘটনা ও সড়ক দুর্ঘটনায় আহত-নিহতের সংখ্যা কমিয়ে আনতে কাজ করে যাচ্ছে। নিরাপদ সড়ক চাই কার্যকর ভূমিকা রাখায় এ দেশের মানুষ নিসচার আহবানে সাড়া দিয়েছে। পুরো বাংলাদেশ এখন এই দাবিতে একমত সড়ককে নিরাপদ করতেই হবে। যার ফলে সরকারও এর গুরুত্ব অগ্রাধিকার দিয়ে নানা প্রকল্প হাতে নিয়েছে।
সড়ক দুর্ঘটনা কমানো তথা বাংলাদেশকে সড়ক দুর্ঘটনামুক্ত করতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেশ আন্তরিক। কোন অনিয়ম কিংবা সমস্যা তিনি সড়কে বিরাজমান থাকুক তা চাননা। যার কারণে তিনি প্রথমে ৫ এবং ৬টি নির্দেশনা, পরে ১৭ টি নির্দেশনা প্রদান করে সড়ককে জনবান্ধব এবং উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে নির্দেশ প্রদান করেন। তিনি নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনকে স্বাগত জানিয়ে ২২ অক্টাবরকে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস ঘোষণা করেছেন- যাতে করে দিবসটি ঘিরে ব্যাপক কর্মসূচি পালন করা যায় যেটা জনগণকে উদ্বুদ্ধ করবে সড়কে অনিয়ম না করতে। পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা সচেতন হয়ে সড়কে যানবাহন চালাবেন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিভিন্ন নির্দেশনা ও ঘোষণার সাথে নিসচা একমত পোষণ করে কাজ করে যাচ্ছে। আসলে নিসচা যা চায় সরকার তারই প্রতিফলন করছে বিভিন্ন কর্মকাণ্ড বা প্রকল্প হাতে নিয়ে যাতে করে সড়ক নিরাপদ হয়ে উঠতে পারে।
নিরাপদ সড়ক চাই সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সরকার কর্তৃক প্রণীত যুগপোযোগী আইন 'সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮' কে স্বাগত জানিয়েছে। এই আইনের পরিপূর্ণ প্রয়োগ এবং বাস্তবায়নে নিসচা কাজ করতে অঙ্গীকারবদ্ধ। যেমন সরকার চালক সমস্যা নিরসনে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী প্রকল্প হাতে নিয়েছে। নিসচা এই প্রকল্প বাস্তবায়নের একজন স্টেকহোল্ডার। সড়ক পরিবহন আইন জনগণ যেন বুঝতে পারে তারজন্য সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ড করে যাচ্ছে নিসচা। তাছাড়া ডাইভিং লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালাতে না দেয়া ও সঠিক পদ্ধতির লাইসেন্স দিয়ে গাড়ি চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এসব বাস্তবায়নে সরকার গণমুখী প্রকল্পও হাতে নিয়েছে। দেশে চালক সমস্যা নিরসনেও প্রকল্প হাতে নিয়েছে। সড়ক পথ যান চলাচল উপযোগী এমনকি যানবাহনের চরিত্র অনুযায়ী সড়ক নির্মাণে সরকার ব্যাপকভাবে উদ্যোগী হয়েছে। নিসচা সরকারের এসব কর্মকাণ্ডে বিভিন্ন সুপারিশমালা দিয়ে আসছে যাতে করে সড়ক শতভাগ চলাচল উপযোগী হয়।
নিরাপদ সড়ক চাই মূলত সড়কে বিদ্যমান সমস্যা যেমন চিহ্নিত করে সমাধানের বিভিন্ন দিক সুপারিশমালার আলোকে সরকারের কাছে তুলেও ধরছে এবং গবেষণামূলক কাজও করে যাচ্ছে। বিদ্যমান চালকদের দক্ষ ও মানবিক হিসেবে গড়ে তুলতে দেশের বিভিন্ন জেলায় 'চালক প্রশিক্ষণ কর্মশালা', শিক্ষিত চালক তৈরিতে 'নিসচা ড্রাইভিং ও মেকানিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট' প্রতিষ্ঠা করে দরিদ্র এসএসসি পাশ বেকার শ্রেণীকে সম্পূর্ণ বিনা ফিতে প্রশিক্ষণ প্রদান এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়নে তাদের ড্রাইভিং লাইসেন্সের ব্যবস্থা করে দিয়ে যেমন চালক সমস্যা নিরসনে কাজ করছে তেমনি দারিদ্র বিমোচনে ভূমিকা রেখে এসডিজি বাস্তবায়নেও সহায়তা করছে, শিক্ষার্থীদের সড়কে চলাচল উপযোগী করে গড়ে তুলতে একদিনের প্রশিক্ষণ কর্মশালা, প্রাথমিক স্তরে শিক্ষার্থীদের সড়ক নিরাপত্তার বিষয়ে জ্ঞানার্জনে পিটিআইয়ের মাধ্যমে শিক্ষকদেও প্রশিক্ষণ প্রদান, মাধ্যমিক, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে সড়ক নিরাপত্তার আলোকে শিক্ষক ও শিক্ষার্থী প্রশিক্ষণ কর্মশালা, পথচারী ও চালকদের সড়কে চলাচল নিয়ম মানায় অভ্যস্ত করতে নিয়মিত ক্যাম্পেইন পরিচালনা, বিভিন্ন বাস টার্মিনালে গিয়ে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের সাথে মত বিনিময় ও সড়ক দুর্ঘটনারোধে করণীয় সম্পর্কিত কর্মসূচি পালন, নিয়মিত বিষয়ভিত্তিক সভা, সেমিনার, গোলটেবিল বৈঠক ও টকশোর আয়োজন, জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে র্যালি, মানববন্ধন, সভা, সমাবেশের আয়োজন করা ছাড়াও মটরসাইকেল চালকদের মাঝে হেলমেট বিতরণ, দুর্যোগকালীন সময়ে সহায়তা প্রদান, সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনসহ গণমুখী নানা কর্মসূচি গত ২৬ বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে কেন্দ্রীয় ও দেশ-বিদেশে প্রতিষ্ঠিত ১২০টি শাখার মাধ্যমে পালন করে আসছে। এ ছাড়া নিসচা চেয়ারম্যান বিভিন্ন সময়ে আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন সভা-সেমিনারে অংগ্রহণও করেছেন।
প্রসঙ্গত জাতিসংঘ কর্তৃক ডিকেড ঘোষণার জন্য ২০০৯ সালে প্রথম মিনিস্ট্রিয়াল কনফারেন্স হয় মস্কোতে। তারই আলোকে ২০১০ সালে ডিকেড অব এ্যাকশন ঘোষণা করে জাতিসংঘ। লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয় ২০২০ সড়ক দুর্ঘটনায় মৃতের হার অর্ধেকে কমিয়ে আনা। যদিও সেখানেও বাংলাদেশের কোন প্রতিনিধি ছিলনা। কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই ডিকেড বাস্তবায়নের সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশকে এর আওতায় নিয়ে আসে। কারণ এই সংস্থা বাংলাদেশের উন্নয়নসহ নানা ধরনের কাজে দীর্ঘদিন ধরে সহায়তা করে আসছে।
এখানে উল্লেখ্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) বাংলাদেশে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সাথে বিভিন্ন উন্নয়ন ও সচেতনামূলক এমনকি দুর্যোগ সমস্যা লাঘবে কাজ করে থাকে। যেখানে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি অংশ নিতে পারেন। কিন্তু ডিকেড অব এ্যাকশন বাংলাদেশে বাস্তবায়নের মূল অথরিটি হলো সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। যেহেতু ইতঃপূর্বে এই মন্ত্রণালয়ের কেউ এই সম্মেলনে বা মিটিংয়ে অংশ নেননি তাই নিসচাকে দায়িত্ব প্রদান করা হয় এই মন্ত্রণালয়ের হাইয়েস্ট অফিসিয়ালকে ৩য় গ্লোাবাল মিনিস্ট্রিয়াল মিটিংয়ে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য। যারই আলোকে স্ইুডেনের রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সাথে দেখা করে আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। নিসচা এসব কাজে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পেয়েছে যে বাংলাদেশে ডিকেড অব এ্যাকশন বাস্তবায়নে সহায়তার সকল কাজে অংশগ্রহণ। বিশেষ করে সড়কে আইনের পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন ও জনগণকে সচেতন করে গড়ে তোলা। সমস্যা চিহ্নিত করা যা ধরে ধরে কাজ করা যায়।
২০০৯ সালের মিনিস্ট্রিয়াল মিটিং এরপর দ্বিতীয় ফলোআপ মিটিং হয় ২০১৫ সালে ব্রাজিলে। তখনও বাংলাদেশের প্রতিনিধি অংশ নেয়নি। কিন্তু এ বছর অর্থ্যাৎ ২০১৯ সালের এপ্রিলে গ্রিসে গ্লোবাল রোড সেফটি মিটিংয়ে অংশগ্রহণ করেন নিরাপদ সড়ক চাই’র চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন। এই মিটিংয়ে ডিকেড অব এ্যাকশন সমাপ্ত হওয়ার পর এর অর্জন ও আগামীতে কি কি করা যেতে পারে সেটা উঠে আসে। ঐ বৈঠকেই নিসচাকে দায়িত্ব দেয়া হলো বাংলাদেশে এই ডিকেড অব এ্যাকশনের অগ্রগতি কি এবং সমাপণী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ নিশ্চিতের। সুইডেনে এই ৩য় গ্লোবাল মিনিস্ট্রিয়াল মিটিং ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
প্রতিবছর সড়ক দুর্ঘটনা ও এর কারণ নির্ধারণ করে গবেষণা রিপোর্ট প্রকাশ করে থাকে নিসচা, যা বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গবেষণার কাজে ব্যবহৃত হয়। তাতে দেখা যাচ্ছে ২০১০ সালের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হার জাতিসংঘ কর্তৃক ৫০% কমিয়ে আনার যে নির্দেশনা ছিল সে লক্ষ্যমাত্রা এখনও অর্জন সম্ভব হয় নি। আমাদের ক্যাম্পেইনগুলোতে দেখা গেছে সড়ক দুর্ঘটনার জন্য যে যে কারণগুলো কাজ করে তার মধ্যে চালক, পরিবহন মালিক, শ্রমিক, পথচারী ও যাত্রীদের অসচেতনতা তথা বিপজ্জনক ড্রাইভিং, ফিটনেসবিহিন যানবাহন, অতিরিক্ত গতি, অতিরিক্ত মালবোঝাই, সড়কে নিয়ম না মেনে গাড়ি চালানো, ট্রাফিক আইন সম্পর্কে অজ্ঞতা, যেমন রাস্তায় চলাচল, পারাপার, জেব্রাক্রসিং ইত্যাদির নিয়ম না মানাকে উল্লেখযোগ্য বলে প্রতীয়মান হয়েছে।সেইসাথে কারণ হিসেবে সমন্বয়হীনতাকে দায়ী করা যায়। তবে এটাও আশা করা যায় সড়ক দুর্ঘটনারোধে আমরা যে যার অবস্থান থেকে যে কাজগুলো করছি, সে কাজগুলো সমন্বয়ের মাধ্যমে, পরিকল্পনা মাফিক যদি পরিচালনা করা যায় তবে অবশ্যই ২০২৫ ও ২০৩০ সালের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনারোধে বাংলাদেশ কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবে। সেই আলোকেই এই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ৫ লক্ষ বিদ্যমান গাড়িচালককে প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সঠিক ড্রাইভিং লাইসেন্সের আওতায় আনা ও ট্রাফিক আইন মেনে গাড়ি চালানোর ব্যাপারে মানসিকভাবে প্রস্তুত করা হবে। এরপরও যদি ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করে তাহলে শাস্তির ক্ষেত্রেও জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করা হবে। আজ আমরা সেই অঙ্গীকারে আবদ্ধ হয়ে একসঙ্গে কাজ করার সিদ্ধান্তে উপণীত হলাম।