স্ত্রী হত্যার দায়ে স্বামীর যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদ- ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ডের আদেশ দিয়েছেন যশোরের আদালত। সাজাপ্রাপ্ত আসামি শফিকুল ইসলাম কেশবপুর উপজেলার লক্ষ্মীনাথকাটি গ্রামের বাসিন্দা। তিনি পলাতক রয়েছেন। মঙ্গলবার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক টি এম মুসা এ রায় দেন।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০০৬ সালের ৫ মার্চ মণিরামপুর উপজেলার নিহত নাজমা আক্তারের বাবা নুর মোহাম্মদ থানায় তার মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন। অভিযোগটি মামলা হিসেবে রেকর্ড না করায় তিনি আদালতে মামলা করেন। আদালতের নির্দেশে থানা পুলিশ মামলাটি রেকর্ড করেন। মামলায় স্বামী শফিকুল ইসলাম ছাড়াও অন্য আসামিরা হলেন, ভাই রবিউল ইসলাম, বাবা নিছার আলী, চাচা নুরো দফাদার, তরফ দফাদার, চাচাতো ভাই লিয়াকত, নজরুল ও মা ফুলমতি।
মামলায় নুর মোহাম্মদ উল্লেখ করেন, তার মেয়ে নাজমা আক্তারের সঙ্গে শফিকুল ইসলামের সাত বছর আগে বিয়ে হয়। বিয়ের সময় শফিকুল ও তার পরিবার ৮০ হাজার টাকা যৌতুক দাবি করে। নাজমার বাবা ৩০ হাজার টাকা যৌতুক দেন। এরপর তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের কয়েকদিনের মাথায় ফের ৫০ হাজার টাকা যৌতুকের জন্য চাপ দেয়া হয়। পরে পরিবারের পক্ষ থেকে ২০ হাজার টাকা যৌতুক বাবদ শফিকুলের হাতে দেন। এরইমধ্যে তাদের সংসারে একটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। এরপর আবার বাকি ৩০ হাজার টাকা যৌতুকের দাবিতে নাজমাকে মারধর শুরু করে শফিকুল। একপর্যায়ে বিষয়টি নাজমা তার বাবাকে জানায়। এরপর ওই বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি শফিকুলসহ তার পরিবারের সদস্যরা নাজমাকে বেধড়ক মারপিট করে জখম করেন। পরে তার মুখে বিষ ঢেলে দিয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে প্রচারণা চালানো হয়। পরে নাজমাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নাজমার লাশ হাসপাতালে ফেলে আসামিরা পালিয়ে যান বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। মামলাটি তদন্ত শেষে তদন্তকারী কর্মকর্তা থানার এসআই শ্রীকান্ত আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। এরপর সাক্ষ্য প্রমাণ শেষে আদালত নিহত নাজমার স্বামী শফিকুল ইসলামকে যাবজ্জীবন কারাদ- দেন। মামলার অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় আদালত তাদের খালাস দেন।
রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালের পিপি অ্যাডভোকেট এম ইদ্রিস আলী। তিনি এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।