রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলায় নির্মানাধীন মেরিন একাডেমি প্রকল্পের কাজ এখন শেষ পর্যায়ে। আগামি ডিসেম্বর মাসেই এর উদ্বোধন করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আশা করছেন। এর ফলে নির্ধারিত সময়ের আগেই অগামী ২০২০ সালের জানুয়ারী মাস থেকে নতুন বছরে রংপুরের মেরিন একাডেমীর শিক্ষা কার্যক্রম চালু হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার পশ্চিমে রায়পুর ইউনিয়নের সবুজ শ্যামল প্রান্তরের ফলির বিল নামক স্থানে ১০ একর জমির উপর গণপুর্ত অধিদপ্তরের তত্বাবধানে ১০০ কোটি ৫ লাখ টাকা ব্যয়ে এই মেরিন একাডেমি নির্মান করা হচ্ছে। প্রকল্পটির দ্বিতীয় দফা মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই এর নিমার্ন কাজ শেষ হচ্ছে বলে গণপুর্ত অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে। সরেজমিন প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনকালে গণপুর্ত অধিদপ্তরের রংপুর অঞ্চলের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল আলম, তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবদুল গফফার, নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ শাকিউল আলম ও নির্বাহী প্রকৌশলী (ইএম) মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান সাংবাদিকদের জানান, বর্তমান সরকারের গৃহীত রূপকল্প-২০২১ এবং রূপকল্প-২০৪১ অনুযায়ী মানব সম্পদের উন্নয়ন, বেকার সমস্যা সমাধান, দারীদ্র দূরীকরন, এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে নৌপরিবহন মন্ত্রনালয়ের অর্থায়নে বাংলাদেশের ৪ জেলায় আর্ন্তজাতিক মানের মেরিন একাডেমি নিমার্ন প্রকল্পের আওতায় রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলায় ১০০ কোটি ৫ লাখ টাকা ব্যয়ে এই মেরিন একাডেমি প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এই প্রকল্পের আওতায় অ্যাকাডেমিক ভবন ছাড়াও প্রশাসনিক ভবন, প্যারেড গ্রাউন্ড, ডরমেটরী ভবন, ৭টি আবাসিক ভবন, মসজিদ, অত্যাধুনিক জিমনেসিয়াম, সুইমিংপুল সহ ৩৫ টি অবকাঠামোর প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
কার্যতঃ ২০১২ সালে এই প্রকল্পটির কার্যক্রম শুরু হয় এবং ২০১৫ সালের মধ্যেই এর কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে প্রকল্প সংক্রান্ত জমি অধিগ্রহন ও হস্তান্তর, সংশোধিত ডিপিপি প্রনয়ন এবং অনুমোদনের বিলম্বের কারণে এই প্রকল্পের মেয়াদ এবং ব্যয়ভার বেড়ে যায় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। ফলে রংপুর সহ দেশের ৪ টি মেরিন একাডেমি প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ ২০১৫ সালের পরিবর্তে ২০২০ সালের জুন মাসে এর প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদকাল শেষ হওয়ার সময় নির্ধারন করা হয়। প্রকল্পের ব্যয়ভার পুর্বের মোট প্রকল্প মুল্য ৪৪০ কোটি ৩৭ লাখ টাকা থেকে বেড়ে বর্তমানে ৪৪৫ কোটি ৯৭ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। তবে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগন আশা করছেন বর্তমানে যে গতিতে এর কাজ চলছে, তাতে আগামি ডিসেম্বর মাসেই এসব ভবন এবং অবকাঠামো মেরিন একাডেমি কর্তৃপক্ষের নিকট হস্তান্তর করা সম্ভব হবে। এই প্রকল্পের সকল অবকাঠামো নির্মান কাজ ইতোমধ্যেই শেষ হয়েছে। এখন চলছে এসবের ফিনিসিং টাচ্। প্রকল্পের অবকাঠামো হস্তান্তর করা হলেই শুরু হবে এর বহু প্রত্যশিত শিক্ষা কার্যক্রম।
রংপুরের মেরিন একাডেমি প্রকল্পটি চালু হলে উত্তোরাঞ্চলের অবহেলিত এই জনপদের সাধারণ জনগোষ্ঠির শিক্ষা-দিক্ষা ও দক্ষতা বৃদ্ধি সহ এখান থেকে দেশ-বিদেশের চাহিদা অনুযায়ী দক্ষ নৌ-কর্মকর্তা ও নৌ-প্রকৌশলী তৈরী হবে। প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কারিকুলাম মোতাবেক ৪ বছর মেয়াদ কালের এই র্কোসের প্রথম পর্যায়ে প্রতি বছর ১০০ জন করে দক্ষ নাবিক ও নৌ-প্রকৌশলী বের হবে। এ ছাড়া দেশের সকল জেলায় সমুদ্র বিষযক জ্ঞান চর্চার সুযোগ তৈরী হবে। এর ফলে দক্ষ ও বিশেষজ্ঞ নাবিক এবং নৌ-প্রকৌশলী তৈরী করে তাঁদের বিদেশে প্রেরনের মাধ্যমে অধিক পরিমান বৈদেশীক মুদ্রা অর্জনের সুযোগ সৃষ্টি হবে। সেই সাথে মানব সম্পদ উন্নয়নের মাধ্যমে বেকার সমস্যারও সমাধান হবে। প্রকল্পটির কার্যক্রম শুরু হলে এখানে ১০০ জনের স্থায়ী কর্মসংস্থান এবং ১০০ জনের আউটর্সোসিং সহ প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ভাবে দুই শতাধিক ব্যক্তির কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সুত্র জানিয়েছে।