মুখমন্ডলের থুতু এবং আঙুল বিহীন হাতের অংশ দিয়ে জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম। কেবল পড়া-লেখা নয়, জাহিদুল তার শারীরিক এ অবস্থা নিয়ে ক্রিকেট খেলায়ও বেশ পারদর্শী। নিজের মনোবলই তার শক্তি। লেখা-পড়া শিখতে চরম আগ্রহ নিয়েছে সে। মণিরামপুর উপজেলার আগরহাটি গ্রামের ভাঁটা শ্রমিক মাহবুবুর রহমান ও গৃহিনী রাশিদা বেগমের ছেলে জাহিদুল ইসলাম।
উপজেলার ধলিগাতী মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এবারের জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পরীক্ষা দিচ্ছে জাহিদুল। পড়া লেখায় মোটামুটি ভাল সে। ক্লাসে ২৫জন শিক্ষার্থীর মধ্যে জাহিদুলের রোল নম্বর ০৬। তার বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দিলীপ কুমার পাল এবং সহকারী গ্রন্থগারিক আবদুল মজিদ জানান, জাহিদুল স্কুলের একজন নিয়মিত ছাত্র। লেখা-পড়ায়ও যথেষ্ট ভাল। কেবল মাত্র নেই তার হাত দু’খানি।
এ অবস্থায় লেখা-পড়ার পাশাপাশি খেলাধুলা, সাইকেল চালানোসহ সবই পারে সে অন্যাদের মত। তবে বেশি পারদর্শী লেখা-পড়ার পাশাপাশি ক্রিকেট খেলায়। মণিরামপুর সরকারী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে জেএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রের ১০৫ নম্বর কক্ষে সহাপাঠিদের সাথে বসেই পরীক্ষা দিচ্ছে সে। তার জেএসপি পরীক্ষার রোল নং-৭৬৫৬৮১ এবং রেজি: নং- ১৯১৩৩৫৭৪৮৬।
জাহিদুলের সাথে কথা হলে সে জানায়, গত যে কয়টি পরীক্ষা দিয়েছে তাতে ভাল ফলাফল করার আশা করছে সে। দিনমজুর পরিবারের সন্তান জাহিদুলকে নিয়ে দু:চিন্তা তার পিতা-মাতার। লেখা-পড়া না শিখলে তার ভবিষ্যৎ কি হবে ? কিভাবে তার জীবন চলবে এসব ভাবনা পিতা-মাতার মাথায়। বাবা-মা’র ইচ্ছে তাকে লেখা-পড়া শেখানো। এজন্য অর্থনৈতিক সমস্যা রয়েছে তাদের।
ভাটায় শ্রমিকের কাজ করে চার ছেলে-মেয়েসহ ৬ থেকে ৭জনের পরিবার চলে কোন রকমে। যে কারণে জাহিদুলের পিছনে অর্থ ব্যয় করার মতো সমর্থ নেই বাবা-মা’র। বছর তিনেক আগে জাহিদুল বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে গান লিখে উপজেলা পরিষদ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে নিজেই গান গেয়ে সবার নজরে চলে আসে। জাহিদুলের স্বপ্ন লেখা-পড়া না শিখলে তার ভবিষ্যৎ জীবনটাই যেন অন্ধকার। সে চিন্তা থেকেই লেখা-পড়ার প্রতি গুরুত্ব রয়েছে তার।
লাউড় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণীতে পড়া কালে বিদ্যুস্পৃষ্ট হয়ে তার দুটি হাত নষ্ট হয়ে যায়। ওই বিদ্যালয় থেকে সে প্রাথমিক সমাপনী (পিএসসি) পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে জিপিএ ৪.৭৬ পেয়ে উর্ত্তীণ হয়। তাকে বাঁচাতে চিকিৎসকরা তার হাত দুটি কেটে ফেলা হয় বলে তার পিতা মাহাবুবুর রহমান জানায়। বাবা মা এবং শিক্ষার্থী জাহিদুলের চাওয়া সমাজের লোকজন তাকে অর্থনৈতিকভাবে সহযোগিতা করলে লেখা-পড়া শিখতে পারবেন।