রংপুরের পায়রাবন্দে ঘাঘট নদীর কোল ঘেষে প্রায় দুই লাখ মুসল্লির সমাগমে শুরু হয়েছে মিনি ইজতেমা। বৃহস্পতিবার সকালে আম বয়ানের মধ্যে দিয়ে তিন দিনের এই ইজতেমা শুরু হয়।
ফজরের নামাজের পর আম বয়ান শুরু করে তাবলীগ জামাতের মুরব্বিগণ। পথভ্রষ্ট মানুষদের হেদায়াতে আল্লাহ্ ও নবী-রাসূলের হুকুম আহকাম মেনে চলার মধ্যেই ইহকাল ও পরকালে সুখ শান্তি রয়েছে বলে উল্লেখ্য করে মুরব্বিরা।
৪০ একর আয়তনের বিশাল এই মাঠে দূর-দূরান্ত থেকে আসা হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মুসল্লি শামিয়ানার নিচে অবস্থান নিয়েছে। এখানে ১৫০টি কাতারের ব্যবস্থা রয়েছে। প্রতিটি কাতারে ২ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারবে। গত মঙ্গলবার ও বুধবারে রংপুর জেলাসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় দেড় লাখ মানুষ মাঠে সমবেত হয়েছে। এই গত চার থেকে পাঁচ লাখে পৌঁছাতে পারে বলে মনে করছেন আয়োজনকরা।
এদিকে রংপুর অঞ্চলের বৃহৎ এই ইজতেমাতে নিরাপত্তা বলয় কঠোর করা হয়েছে। ইজতেমা মাঠসহ আশপাশের এলাকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্বেচ্ছাসেবীরা নিরাপত্ত্বা বেষ্টিত গড়েছে। র্যাব, পুলিশ, আনসার, ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা সহ পোষাকধারী ও সাদা পোষাকে চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে। নিñিন্দ্র নিরাপত্ত্বা নিশ্চিত করতে বসানো হয়েছে সিসি ক্যামেরাও।
এছাড়াও ইজতেমা সফল করতে গঠিত ১২টি কমিটির প্রায় তিন হাজার স্বেচ্ছাসেবী সার্বক্ষণিক কাজ করছে। আলাদাভাবে ১৫০ সদস্যের স্পেশাল সেচ্ছাসেবক দল রয়েছে শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে। ইজতেমা মাঠে ইমামতি করবেন মাওলানা মোজাইদুল ইসলাম, মাওলানা ইউসুফ আলী ও মাওলানা আমিনুল ইসলাম। এবারও ইজতেমায় যৌতুকবিহীন ইসলামি শরীয়াহ্ মোতাবেক কয়েকজনের বিবাহ সম্পন্ন হবে।
এদিকে যানবাহন রাখার ব্যবস্থা হিসেবে মাঠ সংলগ্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে গ্যারেজ তৈরি করা হয়েছে। রয়েছে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা। মুসল্লিদের পয়ঃনিষ্কাশনে ১৫’শ শৌচাগার, ৩০টি পাম্প ও ৩০টি ট্যাংকি স্থাপন করে অস্থায়ী গোসলখানা বানানো হয়েছে। এছাড়াও ইজতেমা মাঠের কোল ঘেষে থাকা ঘাঘট নদীর পাশাপাশি দুটি পুকুর প্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মাঠে রাতে আলোর জন্য প্রায় ১ হাজার বাল্ব সরবরাহ করেছে সিটি করপোরেশন ও পায়রাবন্দ ইউনিয়ন পরিষদ।
ইজতেমা প্রস্তুতি কমিটির সদস্য হাফিজুল ইসলাম হাফিজ বলেন, ইজতেমাতে রংপুর মহানগরীসহ রংপুর বিভাগের আট জেলার মুসল্লীরা অংশ নিচ্ছেন। মাঠে বাঁশের খুঁটিতে টাঙানো পুরো শামিয়ানাটি ওয়াটার প্রুফ। এর নিচে একসাথে ৫০ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারবে। গতবার ইজতেমাতে মুসল্লি আসেন তিন লাখ। এবার তা পাঁচ লাখ ছাড়িয়ে যাবে।
এদিকে ইজতেমাকে ঘিরে মাঠের আশপাশ ও রংপুর-ঢাকা মহাসড়কের দুইপাশে ব্যবসার পরসা সাজিয়েছে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। যেন তিন দিনের এই আয়োজনকে ঘিরে বদলে গেছে দমদমা ব্রীজ সংলগ্ন পায়রাবন্দের ইসলামপুর এলাকা। নিরাপদ ও নির্বিঘেœ যানবাহন চলাচলে ট্রাফিক পুলিশসহ স্বেচ্ছাসেবীরা কাজ করছে। আগামী শনিবার (৯ নভেম্বর) দুপুরে ইজতেমার শেষ দিনে বিশেষ মোনাজাত শেষে দ্বীনের দাওয়াত দেওয়ার জন্য এখান থেকে কয়েক হাজার মুসল্লি দেশের বিভিন্নপ্রান্তে যাবেন।