আসল নাম শিবাজি রাও গায়কোয়াড়। তবে তবে জনপ্রিয় রজনীকান্ত নামে। এই নামের পেছনে রয়েছে অনেক ইতিহাস। হয়তো অনেকে জানেন না এই সুপাস্টারের ছোট্ট বয়সের কথা। মাধ্যমিক পড়া অবস্থায় তিনি কিভাবে খাবার জোগাড়ের জন্য নানা ছোটখাটো কাজ করেছেন? সময় সংবাদের পাঠকদের জন্য আজ তুলে ধরা হলো রজনীকান্তের অতীত-বর্তমান।
শিবাজী রাও গায়কৌড়৷ এই নামেই তাকে গুটিকতক মানুষ ছাড়া আর কেউই চেনে না। তার পরিচয় গত ৪০ বছরেই বদলে গিয়েছে৷ কখনও থালাইভা, কখনও সুপারস্টার রজনীকান্ত এই নামেই গোটা বিশ্ব তাকে পুজো করে।
দক্ষিণী সুপারস্টার রজনীকান্ত। শিক্ষা জীবন থেকে কঠোর অধ্যাবসায়ের মাধ্যমে নিজেকে ভাঙতে গড়তে শিখেছেন। ক্লাস সিক্মে পড়া অবস্থায় তিনি খাবারের জন্য কখনো কাঠমিস্ত্রী আবার কখনও কুলি হয়ে কাজ করেছেন। আবার কখনও বাসের টিকিট কেটেছেন কন্ডাক্টর হয়ে। উপার্জনের জন্য একসময় এ সব কিছুই করতে হয়েছে তাকে। আর আজ তিনি অন্তত ৪০০ কোটি রুপির মালিক! ২০১০ সালে ফোর্বস সূত্রে জানা যায়, তখন তার সম্পত্তির পরিমাণ ছিল ৩৫৪ কোটি ৬৮ লাখ ১৫ হাজার রুপি। সম্পত্তির এই হিসাব বর্তমানে আরও বেড়েছে।
রজনীকান্ত ভারতের মিসোর রাজ্যের বেঙ্গালুরুতে একটি মারাঠি পরিবারে ১৯৫০ সালে ১২ ডিসেম্বরে জন্মগ্রহণ করেন। রজনীকান্তের পূর্বপুরুষরা মাভদি কাদি পাথার নামে একটি গ্রাম থেকে আসেন, যা বর্তমানে মহারাষ্ট্রের পুনে জেলার পুরান্দার তালুক নামের একটি স্থান। দুই বোনের মধ্যে সবচেয়ে ছোট ছিলেন রজনীকান্তের বাবা, রামজী রাও গায়েকোয়াাড একজন পুলিশ কনস্টেবল ছিলেন। তার বাবা ১৯৫৬ সালে কাজ হতে অবসরগ্রহণ করেন। ছয় বছর বয়সে, রজনীকান্ত ‘গাভিপুরাম সরকারি কন্নড় মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে’ ভর্তি হন এবং সেখানে তার প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন।
সপরিবারে বেঙ্গালুরু শহর ছেড়ে কাছেই হনুমন্থনগর বস্তিতে ঘর বেঁধে থাকতে শুরু করেন তারা। খুব কম বয়সে মাকেও হারিয়েছিলেন রজনীকান্ত। মায়ের মৃত্যুর পর তাদের সংসার দেখার মতো কেউ ছিল না। পরিবারটা প্রায় ছন্নছাড়া হয়ে গিয়েছিল। ছোট থেকে ক্রিকেট, বাস্কেটবলের প্রতি আগ্রহ ছিল, কিন্তু অভিনয়কে সে ভাবে ভালোবাসতেন না। রামকৃষ্ণ মঠেই তার অভিনয়ে হাতেখড়ি।
ছোট বয়সে তিনি কুলি ও মিস্ত্রিীর পাশাপাশি রাস্কায় বাস কন্ডাক্টর হিসাবে কাজ করতেন। সেখানেও তিনি ভীষণ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন। টিকিটি বিক্রি করার সময় তিনি বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে বিনোদন দিয়ে থাকতেন। ১৯৬৩ সালে বাস কন্ডাক্টরের চাকরি করার সময় রজনীকান্ত কবি ও লেখক টপি মুনিয়াপ্পার পৌরাণিক কাহিনিতে অভিনয়ের সুযোগ পান। সে সময়ই তিনি অভিনয়টা আরও ভালো করে শেখার জন্য মাদ্রাজ ফিল্ম ইনস্টিটিউটে ভর্তি হন তার বন্ধুর সহযোগিতায়।
মাদ্রাজ ফিল্ম ইউনিস্টিটিউটের বিভিন্ন অভিনয় কোর্স প্রতিষ্ঠানে থাকাকালীন সময়ে, তিনি স্টেজ নাটকে অভিনয় করতেন, ফলে তিনি তামিল চলচ্চিত্র পরিচালক কে.বলচান্দের নজর কাড়েন। পরিচালক তাকে তামিল ভাষা শিখতে পরামর্শ দেন এবং তিনি অতি দ্রুত সেই পরামর্শ অনুসরণ করেন।
কাজ ছেড়ে ফিল্ম ইনস্টিটিউটে ভর্তি হওয়ার সিদ্ধান্তে বাড়ির লোকেদের একেবারেই সায় ছিল না। সে সময় তার আর এক কন্ডাক্টর বন্ধু তাকে ভরসা জুগিয়েছিলেন। তাকে আর্থিক সাহায্যও করেছিলেন।
১৯৭৫ সালে রজনীকান্ত চলচ্চিত্রে তার অভিনয় শুরু করেন তামিল সিনেমা অপূর্ব রাগাঙ্গাল এর মাধ্যমে। এরপর আর পিছনে তাকাতে হয়নি। একটার পর একটা ফিল্মের অফার পেতে শুরু করেন তিনি। ২০০৭ সালে ‘শিবাজি’ ছবিতে ২৬ কোটি টাকা পারিশ্রমিক নিয়ে এশিয়ার দ্বিতীয় পারিশ্রমিক নেয়া অভিনেতা হন তিনি। সে বছর পারিশ্রমিকে প্রথম ছিলেন জ্যাকি চ্যান।
সূত্র: উইকিপিডিয়া, আনন্দবাজার, টাইম অব ইন্ডিয়া এবং দ্য মিরর।