শহীদ নূর হোসেনকে ইয়াবাখো ও শেখ হাসিনাকে স্বৈরাচার বলায় জাতীয় পার্টির মহাসচিব ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গার বক্তব্যে ফুঁসে উঠেছে রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগ। আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে গণমাধ্যমে দেয়া বক্তব্য প্রত্যাহার করে ক্ষমা চাওয়ার জন্য আল্টিমেটাম দিয়েছে দলটির নেতারা। সোমবার (১১ নভেম্বর) দুপুরে রংপুরে প্রেসক্লাব চত্ত্বরে আয়োজিত সভায় এই আল্টিমেটাম দেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মন্ডল।
জাতীয় পার্টির মহাসচিবকে অরাজনৈতিক, সুবিধা লোভি নেতা উল্লেখ করে তুষার কান্তি মন্ডল বলেন, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নূর হোসেন নামটি স্মরণীয ব্যক্তিত্ব। ১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর তৎকালীন স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে সংগঠিত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নূর হোসেন নিহত হন। তার মত গণতন্ত্রকামী যুবককে নেশাখোর, ফেন্সিডিলখোর ও ইয়াবাখোর বলে মসিউর রহমান রাঙ্গা নিজের রাজনৈতিক অজ্ঞতা ও দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছে।
আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ১৯৮৭ সালে দেশে ইয়াবা, ফেন্সিডিলের অস্তিত্ব ছিল না। কিন্তু মসিউর রহমান রাঙ্গা সেটার অস্তিত্ব পেয়েছে। কারণ সে তো রাজনীতিবিদ নয়, সে ছিল মটর শ্রমিক। তার কাছ থেকে এর বেশি কিছু আশা করা যায় না। রাঙ্গাকে এই বক্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে।
এসময় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বৈরাচার বলায় মসিউর রহমান রাঙ্গাকে আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে ক্ষমা চেয়ে তাকে বক্তব্য প্রত্যাহার করে নেয়ার আল্টিমেটাম দেয়া হয়। অন্যথায় রংপুরে রাঙ্গাকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করে তার বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার ঘোষণা দেন দলটির নেতারা।
সভায় বক্তব্য রাখেন, মহানগর যুবলীগের সভাপতি এবিএম সিরাজুম মনির বাশার, সাধারণ সম্পাদক মুরাদ হোসেন প্রমুখ। এরআগে বাংলাদেশ যুবলীগ রংপুর মহানগর আয়োজিত ৪৭তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর শোভাযাত্রায় অংশ নেন আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের নেতৃবৃন্দ।
উল্লেখ্য, গতকাল রোববার (১০ নভেম্বর) দুপুরে জাতীয় পার্টির বনানী কার্যালয়ে আলোচনা সভায় শহীদ নূর হোসেনকে ইয়াবাখোর উল্লেখ বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা।
তিনি বলেন, ইয়াবাখোর ফেনসিডিলখোর ছিলেন নুর হোসেন। তাকে নিয়ে নাচানাচি করছে আওয়ামী লীগ বিএনপি। তাদের কাছে ইয়াবা-ফেন্সিডিল খোর ও ক্যাসিনো ব্যবসায়ীদের গুরুত্ব বেশি। এরশাদ সাহেবের কাছে এরা কোনো গুরুত্ব পাননি। যারা গণতন্ত্রের গ ও বুঝে না, অ্যাডিক্টেড একটি ছেলে নুর হোসেন। পুলিশ গুলি করলো সামনে থেকে আর ঘুরে গিয়ে পেছন থেকে লাগল। কি হাস্যকর যুক্তি। তখনতো একজন মারা গেছে, এখন প্রতিদিনই মানুষ মরছে।
রাঙ্গা আরও বলেন, স্বৈরাচার এরশাদ না, খালেদা জিয়া স্বৈরাচার। খালেদা স্বৈরাচার হলে শেখ হাসিনাও স্বৈরাচার। একুশ বছর পর এরশাদের অনুগ্রহে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। আর সেই আওয়ামী লীগ তার বিরুদ্ধে মামলা দেয়। নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করে। আওয়ামী লীগ বিএনপি গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। ওদের মুখে গণতন্ত্র মানায় না। এই গণতন্ত্র মুখে দেয় নাকি মাথায় দেয়। আগে গণতন্ত্র বুঝতে হবে।
আওয়ামী লীগ সরকারের বিগত মেয়াদের মন্ত্রী পরিষদে মসিউর রহমান রাঙ্গা স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। গণমাধ্যমের সামনে দেয়া তার বক্তব্যটি ভাইরাল হয়ে গেছে।