কসবার মন্দভাগ ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহত ১৬ জনের বিষয়ে মন্দভাগ স্টেশনের রিলিফ স্টেশন মাস্টার মো. জাকের হোসেন চৌধুরী বাদী হয়ে আখাউড়া জিআরপি থানায় গত মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) রাতে একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেছে। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের একটি তদন্ত টিম বুধবার (১৩ নভেম্বর) বিকেলে মন্দভাগ রেলওয়ে স্টেশনে তদন্ত কাজ শুরু করেছেন।
ট্রেন দুর্ঘটনায় ১৬ জন নিহত হওয়ার ঘটনা নিয়ে রিলিফ স্টেশন মাস্টারের দায়েরকৃত মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আখাউড়া জিআরপি থানার সাব-ইন্সপেক্টর আনোয়ার হোসেন বলেন, প্রতিটি লাশেরই সুরুতহাল রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে। তবে ময়না তদন্ত ছাড়াই আমরা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. শামসুজ্জামানের নির্দেশে স্ব-স্ব পরিবারের স্বজনদের কাছে লাশ হস্তান্তর করেছি। এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, যেহেতু এই অপমৃত্যুর কারণ সকলেই অবগত এবং স্বজনরা ময়নাতদন্ত করাতে ইচ্ছুক নয়, তারা দূরদুরান্তে দ্রুত লাশ নিয়ে যেতে চায় তাই জেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে।
বুধবার (১৩ নভেম্বর) মন্দভাগ স্টেশনের ১ নম্বর লাইনটিও মেরামত করা হয়। দুর্ঘটনার দিন দু’টো লাইন দিয়ে ট্রেন চলাচল শুরু হলেও ক্ষতিগ্রস্ত ১ নম্বর লাইনটি মেরামত করা যায়নি। বুধবার দুপুরে ওই লাইনটির মেরামত কাজ শেষ করা হয়। এ বিষয়ে প্রকৌশল বিভাগের কর্মরত রাজপুর থেকে আখাউড়া পর্যন্ত লাইনের দায়িত্বে নিয়োজিত মো. গোলাম মোস্তফা জানান, স্টেশনের এক ও দুই নম্বর লাইনটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। ৩ নম্বর লাইনটি অক্ষত ছিলো। প্রধান দুই নম্বর লাইনটি ঠিক করার পরপরই ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়ে যায়। আমরা নির্মানাধীন প্রতিষ্ঠান তমা গ্রুপের শ্রমিকসহ গত মঙ্গলবার থেকে ৩০ জনকে কাজে লাগিয়ে এ যাবত সকল লাইন চলাচলের উপযোগী করেছি।
এদিকে বুধবার বিকেলে রেলপথ মন্ত্রলায়ের একটি তদন্ত টিম মন্দভাগ স্টেশন পরিদর্শন করেন। তারা স্টেশনের সিগন্যাল পেনেল বোর্ডের কার্যকারিতা পরীক্ষা করেন এবং ট্রেন চলাচলের লগবই পরীক্ষা করে দুর্ঘটনাস্থলে যান। সেখানে উদয়ন ট্রেনের দু’টি বগির ধ্বংসস্তুপ পর্যবেক্ষন করেন। এ সময় প্রিন্ট ও ইকেট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে তদন্ত টিমের প্রধান রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (আইন ও ভূমি) মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা প্রাথমিক ভাবে ঘটনাস্থল পর্যবেক্ষন করেছি। ৫ কর্মদিবসের মধ্যে আমরা তদন্ত রিপোর্ট রেলপথ মন্ত্রণালয়ে পেশ করবো। ৪ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটির অন্যান্য সদস্যগণ হচ্ছেন, বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রধান সংকেত ও টেলিযোগাযোগ কর্মকর্তা মো. আবুল কালাম আজাদ, বাংলাদেশ রেলওয়ের যুগ্ম মহাপরিচালক (অপারেশন) রাশিদা সুলতানা ও রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (প্রশাসন-৪) মো. আলমগীর হোসেন। দুর্ঘটনাস্থলে ছিলো দুঃসহনীয় রক্তের গন্ধ। বিভিন্ন রক্তের ছাপ। তদন্তকারী কর্মকর্তাগণ সাংবাদিকদের বলেন, এ গন্ধটা মানুষের রক্তের।
অপরদিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদ উল আলম সাংবাদিকদের জানান, দুর্ঘটনার বিষয়ে তদন্ত করার জন্য অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মিতু মরিয়মকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটির কার্যক্রম শুরু হয়েছে। কমিটির অন্যান্য সদস্যগণ হচ্ছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদ উল আলম ও কর্মকর্তা ইনচার্জ কসবা থানা মোহাম্মদ লোকমান হোসেন।
উল্লেখ্য ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার মন্দভাগ রেলওয়ে স্টেশনে গত মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) ভোর রাতে চট্টগাম থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী আন্তঃনগর ট্রেন তুর্ণা নিশিতা এবং সিলেট থেকে ছেড়ে আসা চট্টগ্রামগামী আন্তঃনগর উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনের সংঘর্ষে ১৬ জন যাত্রী নিহত ও শতাধীক যাত্রী আহত হয়। নিহত ১৬ জনের লাশ পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে এবং আহত ৭৪ জন যাত্রী ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতল, কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।