সৌদি আরবে নির্যাতনের শিকার গৃহকর্মী সুমি আক্তারকে তার বাবা মায়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। শুক্রবার বিকেলে ওয়েজ অর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের মাধ্যমে তাকে বোদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়। পরে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে তার বাবা মায়ের কাছে তাকে হস্তান্তর করা হয়। পরে সুমি বাবা মায়ের সাথে পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার পাঁচপীর বৈরাতি এলাকায় যান। সুমি জানায়, দুই বছর আগে ঢাকায় গিয়ে গার্মেন্টসে যোগ দেন। সেখানেই নুরুল ইসলাম নামে আশুলিয়ার চারাবাগ এলাকার এক যুবকের সাথে পরিচয় হয় তার। ঢাকায় যাওয়ার ৬ মাস পর তাকেই বিয়ে করেন। গত ৩০ মে তার স্বামী নুরুল ইসলাম 'রূপসী বাংলা ওভারসিজ'র মাধ্যমে গৃহকর্মী ভিসায় সৌদি আরবের রিয়াদে পাঠায়। সেখানে যাওয়ার পর প্রথম কর্মস্থলে মালিক তাকে বিভিন্নভাবে নির্যাতন করতো, মারধর করতো, হাতের তালুতে গরম তেল ঢেলে দিতো এবং কক্ষে আটকে রাখতো। একপর্যায়ে ওই মালিক তাকে না জানিয়েই সৌদি আরবের ইয়ামেন সীমান্ত এলাকা নাজরানের এক ব্যক্তির কাছে প্রায় ২২ হাজার রিয়ালে বিক্রি করে দেয়। ওই মালিকও তাকে নির্যাতন করতো। উদ্ধার হওয়ার আগে ১৫ দিন তাকে ঘরের মধ্যে আটকে রাখা হয়েছিল। ঠিকমতো খাবার দেয়া হয়নি। তার নিজের মুঠোফোনটিও তারা নিয়ে নেয়। একসময় খুব কান্না কাটি করে স্বামীর সাথে একটু কথা বলার জন্য মোবাইলটি চায় সুমি। তারা মোবাইলটি দিলে বাথরুমে গিয়ে একটি ভিডিও ধারণ করে সে। সেই ভিডিওতে সে নিজের নির্যাতনের কথা জানায়। ভিডিওটি সাথে সাথেই তার স্বামীর কাছে পাঠিয়ে দেয়। পরে ওই ভিডিও তার স্বামী সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয় এবং গণমাধ্যমকর্মীদের অবহিত করে। বিষয়টি গণমাধ্যমে আসার জন্য প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সুমিকে উদ্ধারের উদ্যোগ নেয়। সৌদিতে নিযুক্ত বাংলাদেশি কনসুলেট আবদুল হক সৌদি পুলিশের সহযোগিতায় তাকে উদ্ধার করে বাংলাদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।
সুমি সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা না পেলে আমি আজ উদ্ধার হতে পারতাম না। আমি প্রধানমন্ত্রী ও আমাকে উদ্ধারের জন্য যারা সহযোগিতা করেছেন গণমাধ্যমকর্মীসহ সকলকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এ সময় সুমি ভবিষ্যৎ জীবন গড়ার জন্য সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন।
সুমির মা মল্লিকা বেগম বলেন, সেখানে বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হয় সে। একপর্যায়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে অন্য একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করে দেয়া হয়। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সহকারী পরিচালক আবু হেনা মোস্তফা কামাল উপস্থিত ছিলেন।
এ ব্যাপারে বোদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মাহামুদ হাসান জানান, বৈদেশিক ওয়েজ অনার্স কল্যাণ বোর্ড এর সহকারি পরিচালক জানিয়েছেন, সৌদি আরব থেকে সুমি আক্তার নামে এক নারীকে শাহজালাল আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দর থেকে পঞ্চগড়ে পাঠানো হচ্ছে। তিনি নিরাপত্তাঝুকিতে রয়েছেন। তিনি তার স্বামীর নিকট যেতে চান না। তাই তাকে তার বাবা মায়ের কাছে হস্তান্তর করা হলো।