জয়পুরহাটের কালাইয়ে পেঁয়াজের মিূল্যে ঊর্ধ্বগতিতে দিশাহারা হয়ে পড়েছে খেটে খাওয়া মানুষেরা। প্রতিদিন হু হু করে বেড়েছে পেঁয়াজের দর। রান্নার জন্য অপরিহার্য উপাদান হচ্ছে পেঁয়াজ। আর সেই পেঁয়াজিই প্রতিনিয়ত অস্থিরতা দেখা দিয়েছে উপজেলার খুচরা বাজারে। উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে পেঁয়াজের মূল্য প্রতিদিন বৃদ্ধি পাওয়ায় খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষেরা এখন পেঁয়াজ ছাড়াই তারা রান্না করছেন।
সরজমিনে উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে ঘুরে ও ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা জানা গেছে, সংসারের নিত্য প্রয়োজনীয় পেঁয়াজের মূল্যের লাগামছাড়া বৃদ্ধিতে হতাশ উপজেলার ক্রেতারা। প্রতিদিন হু..হু করে পেঁয়াজের ঝাঁজ বেড়েই চলছে। পেঁয়াজের এমন ঝাঁজে ক্রেতারা এখন দিশেহারা। প্রতিদিন পেঁয়াজের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েই চলায় খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষেরা এখন পেঁয়াজ ছাড়াই তারা রান্না করছেন। বর্তমান উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে প্রতি কেজি দেশী পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২৭৫ থেকে ২৮০ টাকায় আর প্রতি কেজি ভারতের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২৬৫ থেকে ২৭০ টাকায়। এই পেঁয়াজের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির ফলে ক্রেতা সাধারণ হিমশীম খাচ্ছেন। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষ পড়ছেন চরম বিপাকে। তাদের প্রতিদিন গড় আয় ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। তাদের আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের কোনো সংগতি নেই। চাল-ডাল, আলু ও তরি-তরকারি কেনার পর নিম্ন আয়ের মানুষগুলোর রান্নার জন্য অপরিহার্য উপাদান পেঁয়াজ কেনা দুঃসাধ্য। আর সেই পেঁয়াজের দাম লাগামহীন ভাবে বেড়ে যাওয়ায় তারা অত্যন্ত ক্ষুব্দ।
উপজেলার পাঁচগ্রাম-মঙ্গলপুকুর আবাসন প্রকল্পের বাসীন্দা গৃহিনী রুপিয়া বেগম ও জুলেখা বেগম বলেন, অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে আমাদের সংসার চলে। দুই-সপ্তাহ আগে পুনটহাট থেকে হাফ কেজি পেঁয়াজ ৯৫টাকা দিয়ে কিনে এনেছিলাম। এক-সপ্তাহ আগে সেই পেঁয়াজ শেষ হয়েছে। সেই থেকেই পেঁয়াজ ছাড়াই রান্না করছি।
উপজেলার মাত্রাই বাজারের বাসীন্দা বিধাব হেনা আক্তার বলেন, অনেক দিন আগে আমার স্বামী মারা গেছে। আমি খুব গবির মানুষ, মেয়ে-জামায় মাঝে আমি খাই। জামাই একজন দিনমজুর। পেঁয়াজের দাম বেশি হওয়া সে আর পেঁয়াজ কিনতে পারেনা। এখন পেঁয়াজের পরিবর্তে মুলা দিয়ে রান্না হচ্ছে তরকারি।
উপজেলার বৈরাগী গ্রামের অটোভ্যান চালাক সুজাইল ও কালাই পৌরসভার মহল্লার চিনা-বাদাম বিক্রেতা ছায়রদ্দিন বলেন, প্রতিদিন গড় আয় করা হয় ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। পেঁয়াজের যে দাম তাতে আমাদের মত গরিব মানুষের পক্ষে পেঁয়াজ কেনা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। বর্তমান যে আয় হয় তা দিয়ে পেঁয়াজ কিনে খাওয়া কোন মতেই সম্ভব নয়।
উপজেলার মোলামগাড়ীহাটারের বাসীন্দা আবদুল রায়হান (৬০) নামে এক ভিক্ষুক বলেন, আমার বুদ্ধি বয়সে এত পেঁয়াজের দাম কোন দিন শুনিনি ও দেখেনি। গত একমাস থেকে বাড়িতে পেঁয়াজ কিনে নিয়ে যেতে পারিনি। বৌ বলেছে পেঁয়াজ নিয়ে যেতে। তাই টাকার পরিবর্তে পেঁয়াজের দোকানে দোকানে পেঁয়াজ ভিক্ষা করছি। কেউ পেঁয়াজর দিচ্ছেনা শুধু টাকা দেয় আর তারা বলছে মাফ-করো।
কালাই পৌরবাজারে খুচরা পেঁয়াজ বিক্রেতা আবু বাশার, শফিকুল এবং পাঁচশিরা বাজারের ছাইফুল, আনোয়ার একই শুরে বলেন, জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন পাইকারী বাজার থেকে যে দামে পেঁয়াজ কিনে আনা হয়, তার থেকে দুই-এক টাকা লাভ করে আমরা সেই পেঁয়াজগুলো বিক্রি করি। বর্তমান প্রতি কেজি দেশী পেঁয়াজের মান-ভেদে বিক্রি হচ্ছে ২৭৫ থেকে ২৮০ টাকায় আর প্রতি কেজি ভারতের পেঁয়াজের মান-ভেদে বিক্রি হচ্ছে ২৬৫ থেকে ২৭০ টাকায়। আর এখানে তাদের করার কিছুই নেয় বলে তারা জানান।
এই বিষয়ে কালাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মো.মোবারক হোসেন পারভেজ বলেন, বাজার দর থেকে বেশি দামে পেঁয়াজ যাতে কেউ বিক্রি না পারে সে জন্য সরজমিনে উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে মুনিটরিং করছি। এরপরও কোনো পেঁয়াজ ব্যবসায়ী যদি বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রি করেন তাহলে তার বিরুদ্ধে আইননানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।