যশোরের কেশবপুরে দুর্গা পূজার প্রতিমা বিসর্জন নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার পূজা পরিচালনা কমিটির নেতৃবৃন্দকে অশ্রাব্য ও অশ্লøীল ভাষায় গালাগাল করা এবং ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেবার অভিযোগের বিষয়ে মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বুধবার তদন্ত সম্পন্নের পর শুক্রবার রাতে কেশবপুর শহরে চাউর হয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মিজানূর রহমানকে জনস্বার্থে মাগুরা জেলার মুহাম্মদপুর উপজেলায় বদলী করা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি প্রচার হওয়ার পর কেশবপুরের সাংবাদিকরা বিভাগীয় কমিশনার ড.মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন হাওলাদারের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বদলীর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
এদিকে বদলীর খবরে কেশবপুরে সচেতন নাগরিক বৃন্দের ব্যানারে বদলীর আদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে শনিবার সকালে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে। শহরের মুক্তিযোদ্ধা শহীদ দৌলত বিশ্বাস চত্বরে প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ দেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি অসীত মোদক, সাধারণ স¤পাদক অ্যাডভোকেট মিলন মিত্র, মুক্তিযোদ্ধা কালীপদ মন্ডল, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ রানা, দলিত পরিষদের সমন্বয়কারী উজ্জ্বল দাস, দলিত নেতা সুজন দাস প্রমুখ। প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা কেশবপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মিজানূর রহমানের বদলী প্রত্যাহারের দাবি জানান।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ কেশবপুর শাখার সাধারণ সম্পাদক সুকুমার সাহা গত ২০ অক্টোবর মন্ত্রী পরিষদ সচিব বরাবর অভিযোগ করেন। অভিযোগে উল্লেখ করা হয় সম্প্রতি সম্পন্ন হওয়া দুর্গা পূজার বিজয়া দশমীর দিনে উপজেলায় ৯৩ টি পূজা মন্ডপের মধ্যে ৫ টি মন্দির ব্যাতিত সব প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। ওই ৫ টি মন্দিরের প্রতিমা কেন বিসর্জন দেওয়া হয়নি জানতে ৯ অক্টোবর সকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানূর রহমান পূজা পরিচালনা কমিটির নের্তৃবৃন্দকে তাঁর দপ্তরে ডেকে আনেন। সেখানে নেতৃবৃন্দকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাগান্বিত হয়ে প্রতিমা বিসর্জন না দেওয়ায় অশ্রাব্য ও অশ্লীল ভাষায় গালাগাল করেন। তিনি দুর্গা প্রতিমা সম্পর্কে কুরুচিপূর্ণ শব্দ ব্যবহার করেন। ওই ৫ টি মন্দিরে ভবিষ্যতে পূজা করতে না দেবার কথা বলে তাদের কালো তালিকাভূক্ত করার হুমকি দেন। এ ঘটনায় উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদ গত ১০ অক্টোবর সকল পূজা কমিটির নেতৃবৃন্দকে নিয়ে এক সভা করে। সভায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত এবং অসদাচারণ করার প্রতিবাদে মন্ত্রী পরিষদ ও জনপ্রশাসন সচিব, খুলনার বিভাগীয় কমিশনার ও যশোরের জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিকার চেয়ে উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সুকুমার সাহা লিখিত আবেদন করেন।
আবেদনের প্রেক্ষিতে মন্ত্রী পরিষদ সচিবালয় থেকে যশোরের জেলা প্রশাসককে তদন্ত করতে বলা হয়। জেলা প্রশাসক যশোরের স্থানীয় সরকারের উপ পরিচালককে তদন্ত করে প্রতিবদেন দিতে বলেন। বুধবার কেশবপুর শহরের জেলা পরিষদের ডাকবাংলোয় যশোরের স্থানীয় সরকারের উপপরিচালক মোঃ নূর-ই-আলম অভিযোগের তদন্ত করেন। তিনি পূজা পরিচালনা কমিটির নেতৃবৃন্দ ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার শুনানি গ্রহন করেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মিজানূর রহমান বলেন, বিজয় দশমীর রাতে প্রতিমা বিসর্জন দেবার ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসন এবং পূজা উদযাপন পরিষদ যৌথভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু ৫ টি মন্দিরের প্রতিমা বিসর্জন না দেওয়ায় তাদেরকে ডেকে কেন বিসর্জন দেওয়া হয়নি জানতে চাওয়া হয় এবং ঘটনাটি জেলা প্রশাসকের কাছে জানানো হবে বলে জানানো হয়। তিনি বলেন অসদাচারণ ও কটুক্তিপূর্ণ কোনো বক্তব্য দেওয়া হয়নি।